দেশে এক দিনের ব্যবধানে আবার করোনায় মৃত্যু চল্লিশের ঘরে। গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। এর আগে গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৪৩ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। গত বুধবার জানিয়েছিল ৩৩ জনের মৃত্যুর তথ্য।
একই সময়ে করোনায় নতুন শনাক্ত হয়েছে সাত হাজার ২৬৪ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার কমে হয়েছে ১৬.৯৫ শতাংশ। আগের ২৪ ঘণ্টায় আট হাজার ১৬ জন শনাক্ত হয় এবং শনাক্তের হার ছিল ১৮.৮৩ শতাংশ।
রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এস এম আলমগীর করোনায় মৃত্যু পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল বলেন, করোনায় মৃত্যুর এই ধরনের প্রবণতা আরো কিছুদিন থাকতে পারে। এখন যাদের মৃত্যু হচ্ছে তারা গত মাসের ১২-১৩ তারিখের দিকে সংক্রমিত হয়েছিল। জানুয়ারির শেষার্ধজুড়ে এবং চলতি মাসের প্রথম কয়েক দিন করোনায় শনাক্ত হওয়াদের সংখ্যা একই রকম ছিল। গতকাল যারা শনাক্ত হয়েছে, তাদের পরিণতি বুঝতেও ২৮ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ অবস্থায় আরো কিছুদিন প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় একই রকম থাকতে পারে। দিনে শনাক্তের হার পাঁচ হাজারের নিচে নেমে এলে ওই দিনের তিন-চার সপ্তাহ পর মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসতে পারে।
তবে এখন করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বেশি হওয়ার কারণে গত বছরের জুলাই-আগস্টের তুলনায় মৃত্যু কম। গত বছর জুলাই-আগস্টে করোনার ডেল্টা ধরনের কারণে মৃত্যু অনেক বেশি ছিল।
গতকাল দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত এক মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে ৮২ শতাংশই করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত। আর বাকি ১৮ শতাংশ রোগী ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির জেনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক, উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এই তথ্য জানান।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা গত ৯ জানুয়ারি থেকে এ মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগী এবং বহির্বিভাগে আসা রোগীদের ৮২ শতাংশ ওমিক্রনে এবং ১৮ শতাংশ ডেল্টাতে আক্রান্ত পেয়েছি। এই সময়ে ওমিক্রনের তিনটি উপধরন পরিলক্ষিত হয়েছে। সেগুলো হলো বিএ.১, বিএ.১.১, বিএ.২। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য মতে, বিএ.২ বেশি সংক্রামক।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরো জানান, করোনার ডেল্টা ধরনের চেয়ে ওমিক্রন ধরন অনেক বেশি সংক্রামক। ওমিক্রন জেনোমে ডেল্টার চেয়ে বেশি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশির ভাগ ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে হয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৪১ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মারা গেছে ২৮ হাজার ৭৪৪ জন। আর নতুন শনাক্ত হওয়া সাত হাজার ২৬৪ জনকে নিয়ে গতকাল পর্যন্ত দেশে সরকারি হিসাবে মোট শনাক্ত হলো ১৮ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৪৬ জন সুস্থ হয়েছে। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬২৮ জন।
সর্বশেষ মৃত ৪১ জনের মধ্যে পুরুষ ২৭ জন, আর নারী ১৪ জন। এদের মধ্যে ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ আর ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ছয়জন করে, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে দুজন আর ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।
৪১ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই মারা গেছেন ২২ জন। বাকিদের মধ্যে চট্টগ্রামে ছয়জন, রাজশাহীতে পাঁচজন, খুলনা ও রংপুর বিভাগে তিনজন করে আর সিলেট বিভাগে মারা গেছেন দুজন।
Leave a Reply