সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেনের সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে বলে অনুমান করছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে ইউক্রেনে রাশিয়ার একটি সামরিক আগ্রাসন অবশ্যম্ভাবী বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পশ্চিমা দেশগুলোসহ ইউক্রেনের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সিএনএন’র প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজেদের সীমান্ত সংলগ্ন দেশের তিন দিকে সেনা মোতায়েন করেছে পুতিনের দেশটি। যুদ্ধ প্রস্তুতিতে রয়েছে যুদ্ধবিমান, ট্যাংক, কামান, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা, যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন। যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব অনুযায়ী, সীমান্তে লক্ষাধিক রুশ সেনা জড়ো হয়েছে।
এদিকে সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা থেকে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একঘণ্টা ফোনালাপ করেছেন।
আক্রমণের ইচ্ছার কথা অস্বীকার করে আসলেও যুদ্ধের আশঙ্কায় ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে সমুদ্রে বড় ধরনের নৌ মহড়া করছে রাশিয়া। রাশিয়ার এমন সমর সজ্জাকে ইউক্রেনের জন্য আসন্ন হুমকি হিসেবে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।
প্রতিবেদনে কোন দিক দিয়ে সম্ভাব্য আক্রমণের চেষ্টা হতে পারে সে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ দিক থেকে ক্রিমিয়ায়, দুই দেশের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার অংশ এবং উত্তরে বেলারুশে সেনা শক্তি বাড়িয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে ধারণা হয়। ইউক্রেন এবং পশ্চিমা গোয়েন্দারা এ তিন এলাকাকে নজরে রাখছেন।
এদিকে, রাশিয়া যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে আক্রমণ করতে পারে শক্তিধর পশ্চিমা দেশগুলো থেকে এমন হুঁশিয়ারি পেয়ে এক ডজনের বেশি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
অগুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মার্কিন দূতাবাস ছাড়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোববার থেকে কনস্যুলার সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে—যেকোনো সময় আক্রমণ হতে পারে। আকাশ থেকে বোমা মেরে আক্রমণ শুরু হতে পারে। এ ধরনের অভিযোগকে উসকানিমূলক অনুমান বলছে রাশিয়া।
এছাড়া, কিয়েভ শাসক বা তৃতীয় কোনো দেশের উসকানির জন্য ইউক্রেনে নিজেদের কূটনীতিকদের যতটা প্রয়োজন ততজন কর্মী রাখবে রাশিয়া।
আর ইউক্রেনের বাইরে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ১৫০ জনের একটি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র সরিয়ে আনছে। তারা বলছে, বাড়তি সতর্কতা হিসেবেই তাদের এ উদ্যোগ।
পশ্চিমা শক্তিগুলোর হাতে আসন্ন আক্রমণ নিয়ে কোনো সুনিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে বলে ধারণা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির।
কোনো কোনো দেশ ইউক্রেনে তাদের কূটনৈতিক কর্মীদের পরিবারসহ সরিয়ে এনেছে।
রাশিয়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন, এমন অনেকেরই ধারণা, যেসব এলাকায় নিজেদের বেশ ভালো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেখানে আরও সেনা পাঠাতে পারে মস্কো।
উপগ্রহ থেকে তোলা কিছু ছবি পেয়েছে সিএনএন। তাতে দেখা যাচ্ছে, ইয়েলনিয়ায় থাকা রাশিয়ার ট্যাংক, কামান ও অন্য সমরাস্ত্রগুলোর বেশির ভাগই খালি করে ফেলা হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সামরিক এসব সরঞ্জাম যেখান থেকে যুদ্ধ হতে পারে, সেসব এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশেও রয়েছে রুশ সেনাদের ব্যাপক উপস্থিতি। দেশটি ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের আরেকটি পথ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার সীমান্তে ১০ দিনের যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া ও বেলারুশ। এর পরিধি ও সময় নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
Leave a Reply