ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার আশঙ্কায় দেশটি থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন সেখানে অবস্থানরত বিদেশীরা। তবে রাশিয়া অভিযান চালাতে পারে বলে যে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, তার সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির যেলেনস্কি।
এদিকে, সীমান্তে উত্তেজনা এবং যুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যে ইউক্রেনের সরকার রাশিয়া ও ইউরোপীয় নিরাপত্তা বিষয়ক একটি গোষ্ঠীর মধ্যে জরুরী বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, রাশিয়া কেন সীমান্তে এতো সৈন্য জড়ো করছে, সেটি ব্যাখ্যা করার জন্য তারা বার বার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানালেও রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, এর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার পরিকল্পনা আসলে কী, তা স্বচ্ছভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাশিয়া বার বার বলছে, ইউক্রেনে কোনো অভিযান চালানোর পরিকল্পনা তাদের নেই, যদিও তারা এক লাখের বেশি সৈন্য ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, রাশিয়া ‘যে কোনো সময়’ ইউক্রেনে বোমা হামলা শুরু করতে পারে। এরই মধ্যে এক ডজনেরও বেশি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
লন্ডনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিসটাইকো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার দেশ ন্যাটো জোটে যোগ না দেয়ার রাশিয়ার যে দাবি, সে ব্যাপারে তাদের অবস্থান ‘নমনীয়’। তবে পরে তিনি ওই অবস্থান থেকে সরে গেছেন।
পরে তিনি বলেন, ন্যাটো জোটে যোগ দেয়ার ব্যাপারটি ইউক্রেনের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। আর ইউক্রেন ন্যাটো জোটে যোগ দেয়ার জন্য তৈরি কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার ন্যাটো সামরিক জোটের।
ইউক্রেন এরই মধ্যে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) নামের ইউরোপীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছে। ইউক্রেন চাচ্ছে, সীমান্তে এত সৈন্য জড়ো করার ব্যাখ্যা দিক রাশিয়া।
‘ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী ওএসসিই’র যে কোনো সদস্য অন্য যে কোনো সদস্যের সামরিক তৎপরতার তথ্য জানতে চাইতে পারে। রাশিয়াও এই চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশ।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেন, ‘ওএসসিই’র সীমানার মধ্যে অখণ্ড নিরাপত্তার যে কথা রাশিয়া বলে, সেটাকে যদি তারা সত্যিই গুরুত্ব দেয়, তাহলে সামরিক তৎপরতার স্বচ্ছতার ব্যাপারে দেয়া অঙ্গীকার তাদের পূরণ করতে হবে, যাতে করে উত্তেজনা কমানো যায় এবং সবার জন্য নিরাপত্তা বাড়ানো যায়।’
এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করতে পারে বলে যে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, তার সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির যেলেনস্কি। তিনি বলেন, সামনের কয়েকদিনে রাশিয়া আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছে এমন কোনো প্রমাণ তিনি এখনো দেখেননি।
রোববার তিনি টেলিফোনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন। হোয়াইট হাউজ জানায়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের কথা পুর্নব্যক্ত করেছেন এবং দুই নেতাই ‘কূটনীতি ও সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত’ রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
এই টেলিফোন আলাপের ব্যাপারে ইউক্রেনের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট যেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আলাপের শেষ পর্যায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ইউক্রেন সফরের আমন্ত্রণ জানান। তবে এই আমন্ত্রণের ব্যাপারে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি।
শনিবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যেও এক ঘণ্টার টেলিফোন আলাপ হয়। তবে তাদের আলোচনায় সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে সংঘাত এড়ানোর একটি কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ আজ সোমবার কিয়েভে প্রেসিডেন্ট যেলেনস্কি এবং মঙ্গলবার মস্কোতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে কথা রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে অ্যাঙ্গেলা মারকেলের কাছ থেকে জার্মানির নতুন নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেয়া ওলাফ শোলৎজ রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করেছেন যে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালালে রাশিয়াকে মারাত্মক অর্থনৈতিক পরিণতি ভোগ করতে হবে। অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এবং ন্যাটো মিত্ররাও ইতোপূর্বে একই হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
তবে শোলৎজের উদ্যোগের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখছেন না দেশটির কর্মকর্তারা।
এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও রাশিয়াকে ‘যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে’ নতুন করে কূটনৈতিক আলোচনা চালানোর পরিকল্পনা করছেন।
ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ইউক্রেন অভিমুখে রাশিয়ার অভিযান যে কোনো দিন শুরু হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, রাশিয়া যাতে ‘ইউক্রেন প্রথম আগ্রাসন চালিয়েছে’ এমন ‘মিথ্যা অজুহাত’ দেখিয়ে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করতে না পারে, সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে।
এদিকে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য মোতায়েনের বিষয়টি তাদের নিজস্ব ব্যাপার, কারণ নিজেদের দেশের ভেতর এটি করছে।
রোববার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউরি উশাকভ বলেন, ইউক্রেনে রুশ অভিযান আসন্ন মর্মে যুক্তরাষ্ট্র যেসব হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে, তা ‘চূড়ান্ত উন্মাদনার’ নামান্তর।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply