বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে বসা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ চেম্বার আদালতের ‘স্থগিতাদেশ’ ও ‘স্থিতাবস্থা’ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টে বিচারাধীন রুল নিষ্পত্তি পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।
আজ সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে নিপুণ আক্তারের লিভটু আপিল নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আদালতে নিপুণ আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজহীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। আর জায়েদ খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম।
এ আদেশর ফলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে কেউই আপাতত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে চেম্বার আদালত স্থিতাবস্থা দেওয়ার পরও নিপুণ আক্তার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছেন। বিষয়টি আজ আপিল বিভাগের নজরে এনেছিলাম। আপিল বিভাগ বলেছেন, চেম্বার আদালতের যে আদেশ সেটিই অব্যাহত থাকবে। কেউ চেয়ারে বসলে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’
অন্যদিকে নিপুন আক্তারের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘হাইকোর্টের অন্তবর্তী আদেশটি চেম্বার আদালত স্থগিত করে স্থিতাবস্থা দিয়েছিলেন। হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি পর্যন্ত সে আদেশটিই চলমান রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। মঙ্গলবারই রুলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় থাকবে বলে আমরা জানি। কার্যতালিকায় আসলে আমরা তার শুনানি করব। যেহেতু হাইকোর্টের অন্তবর্তী আদেশটি চেম্বার আদালত স্থগিত করেছেন, এ কারণে নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত এই মুহুর্তে কার্যকর আছে। আর সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে জায়েদ খানের প্রার্থীতা বাতিল ও নিপুন আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত গত ৭ ফেব্রুয়ারি স্থগিত করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খানের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতেও নির্দেশ দেন আদালত।
সে আদেশ স্থগিত চেয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন নিপুন আক্তার। পরদিন অর্থাৎ ৯ ফেব্রুয়ারি সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ গত রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করে ওই পদে ‘স্থিতাবস্থা’ দেন।
চেম্বার বিচারক বিচারক ওইদিন আদেশে বলে দেন, ‘আজকে হল ৯ তারিখ। এই কয়দিন (১৩ ফেব্রুয়ারি রবিবার পর্যন্ত চারদিন) কিচ্ছু হবে না। কেউ ঢুকবেও না, ঢুকবে না, আমি বলে দিচ্ছি।’ সেদিন চেম্বার আদালত নিপুন আক্তারের আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
গতকাল রবিবার তা শুনানির জন্য উঠলে নিপুন আক্তারের আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি পেয়েছি, হাতে আছে। এটা (মামলাটি) কালকে আসুক নিয়মিত লিভটু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দেই। এক সাথেই শুনানি হোক ।’ তখন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ নিপুন আক্তারের লিভটু আপিলটি সোমবার শুনানির জন্য রাখেন। সে অনুযায়ী শুনানির পর আদেশ হল।
গত ২৮ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের পরদিন ঘোষিত ফলে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চনকে এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলে দেখা যায়, নিপুন আক্তারের চেয়ে ১৩ ভোট বেশি বিএফডিসির সাধারণ সম্পাদক পদে জয় পান জায়েদ খান।
নির্বাচনের সময়ই টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করেছিলেন নিপুণ। তাতে সাড়া না পেয়ে তিনি আপিল করেন। তার আপিলে ভোটের পুনর্গণনা হওয়ার পর ফল একই থাকে। এরপর নিপুণ সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ তোলেন। পরে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর পদ বাতিলের আবেদন করেন তিনি।
তার আবেদনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে করণীয় জানতে আবেদন করেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে আপিল বোর্ডকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলে গত শনিবার দুই পক্ষকে নিয়ে বসার উদ্যোগ নেন সোহান। কিন্তু ২৯ জানুয়ারির পর নির্বাচনী আপিল বোর্ড বিলুপ্ত হয়েছে এবং এ আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নাই দাবি করে সে বৈঠকে যাননি জায়েদ খান। সেদিন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান জায়েদ খানের প্রার্থীতা বাতিল করে সাধারণ সম্পাদক পদে চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারকে জয়ী ঘোষণা করেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তরের চিঠির প্রেক্ষিতে গত ৫ ফেব্রিুয়ারি নির্বাচনী আপিল বোর্ডের দেওয়া এ সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও
অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজসেবা অদিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, উপপরিচালক, সমিাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সোহানুর রহমান সোহান, মোহাম্মদ হোসেন, নিপুন আক্তার ও মোহাম্মদ হোসেন জেমিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রুল শুনানির তারিখ রয়েছে উচ্চ আদালতে।
Leave a Reply