অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে আজ। করোনা মহামারির কারণে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে মেলার আয়োজন করা হয়নি। চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে মেলার সময় বাড়তে পারে। আজ বিকেল ৩টায় গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার বেলা ১১টায় বাংলা অ্যাকাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অমর একুশে বইমেলা-২০২২ উপলক্ষে বাংলা অ্যাকাডেমি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত মেলা হবে। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে মেলার মেয়াদ বাড়তে পারে। এখন দুই সপ্তাহের জন্য মেলা হচ্ছে। প্রকাশকদের কাছ থেকেও স্টল বরাদ্দের ভাড়া অর্ধেক নেয়া হয়েছে।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা যায়, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য এখনও তৈরি হয়নি মেলা প্রাঙ্গণ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ-জুড়ে এখনও অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ স্টল বা প্যাভিলিয়নের কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। শুধু তাই নয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মেলার মাঠে তৈরি হয়নি ইটের পথ। লিটলম্যাগ চত্বরও পুরোটাই ফাঁকা। বলা চলে অনেকটা অগোছালো ও অপ্রস্তুত রেখে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এবারের বইমেলা।
মেলা শুরুর আগের দিন এমন পরিস্থিতি গত ২০ বছরে দেখা যায়নি। মেলার ব্যাপ্তি ১৪ দিন হওয়ায় অনেক ছোট প্রকাশক এবারের মেলা নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলে অনেক প্রকাশক স্টল তৈরি কাজে মনোযোগী নয়।
সংস্কৃতিসচিব আবুল মনসুর বলেন, মেলায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। অ্যাকাডেমির কর্মকর্তা–কর্মচারী, প্রকাশক এবং স্টল-সংশ্লিষ্টদের টিকার সনদ থাকতে হবে। যারা খাবারের দোকানে যাবেন, তাদেরও টিকার সনদ থাকতে হবে। মেলায় সার্বক্ষণিক একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হবে।
মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, এবার মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা ও অ্যাকাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান।
মেলায় প্রবেশপথ থাকবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি এবং বাংলা অ্যাকাডেমির সামনের অংশে। গাড়ি রাখার জায়গা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে।
এছাড়া এবার উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের পূর্ব পাশে মেলার মূল প্রাঙ্গণে লিটল ম্যাগাজিনের জন্য জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। তাদের ১২৭টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতবার লিটল ম্যাগাজিনের স্টলের স্থান নিয়েও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল।
শিশু চত্বর থাকবে মেলার উদ্যান অংশে, তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে আলাদা করে এবার ‘শিশু প্রহর’ থাকবে না। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় মূল মঞ্চে থাকবে বিষয়ভিত্তিক সেমিনার। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মেলায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকির পাশাপাশি পুরো মেলা চত্বর এবং সংলগ্ন পথগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে, তবে প্রবেশ করা যাবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। ছুটির দিনে মেলার দরজা খুলবে বেলা ১১টায় এবং একুশে ফেব্রুয়ারিতে সকাল ৮টায়।
এবার মেলায় মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য রয়েছে ১৪২টি স্টল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ৬৩৪টি স্টল। প্যাভিলিয়ন রয়েছে ৩৫টি। উদ্যান অংশে পুরো মেলায় প্যাভিলিয়নগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত বছর প্যাভিলিয়ন শুধু স্বাধীনতাস্তম্ভের সামনে রাখায় সমালোচনা হয়েছিল।
করোনাজনিত পরিস্থিতির কারণে এক মাসের পরিবর্তে এবার দুই সপ্তাহব্যাপী চলবে মেলা। সে অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে মেলা। তবে, সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাড়তে পারে মেলার মেয়াদ। আয়ু কমলেও এবার বাড়ছে মেলার সময়। প্রতিবছর মেলা বিকেল ৩টা থেকে শুরু হলেও এবার শুরু হবে এক ঘণ্টা আগে অর্থাৎ ২টা থেকে। চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। তাই ছুটির দিন বাদে সাধারণ দিনে ৬ ঘণ্টার পরিবর্তে এবার ৭ ঘণ্টা চলবে বাঙালির সবচেয়ে বড় এ সাংস্কৃতিক উৎসব।
Leave a Reply