সুন্দরবন বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম প্রশস্ত বনভূমি। লোনা পরিবেশের ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বনভূমি এই সুন্দরবন। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সুন্দরবন উপকূলীয় পাঁচ জেলার মানুষ ২০০১ সাল থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। সেই হিসেবে সম্প্রতি এবারো পালিত হয়ে গেলো দিবসটি।
ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নানা প্রকৃতিক দুর্যোগে বুক পেতে দেয় সুন্দরবন। আগলে রাখে তার সন্তানদের। উপকূলীয় কোটি-কোটি মানুষকে নিরাপদে আগলে রাখা সেই সুন্দরবন নিজেই এখন ভালো নেই। জলবায়ু পরিবর্তনে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী চোরা শিকারি ও কাঠ পাচারকারীদের কারণে ম্যানগ্রোভ বনটি আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। যদিও বনবিভাগ বলছে, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিংসহ সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি সুরায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বন বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, ২০০১ সাল থেকে সুন্দরবনে অদ্যাবধি ৫৫টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৭টির। চোরা শিকারিদের বাঘ শিকার নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একশ্রেণীর জেলে আবার সুন্দরবনের মৎস্যভাণ্ডারকে ঠেলে দিয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। তারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি মাছ ধরতে খালে বিষ প্রয়োগ করে মৎস্য আহরণ করে থাকে।
এ দিকে গত কয়েক বছরের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনে। উজান থেকে মিষ্টি পানির প্রবাহ না থাকায় ও সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারে সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা করমরজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে পর্যন্ত দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে করে নষ্ট হচ্ছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ডিম।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কুমিরসহ যেসব বন্যপ্রাণী ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বংশবিস্তার করে তাদের বংশ বিস্তার ব্যাহত হচ্ছে।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সুন্দরবন গবেষক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের উপর পর্যটকদের চাপ কমানোসহ ইসিএ ভুক্ত এলাকায় নতুন করে শিল্প কলকারখানা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। এই ম্যানগ্রোভ বনে লোকবলসহ নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি, বনের ওপর জীবিকায় নির্ভরশীলদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ চোরা শিকারি, কাঠ পাচারকারী ও বনে আগুন দিয়ে সম্পদ লুটকারীদের দমন করতে পারলেই বহুলাংশে রক্ষা পাবে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন নানা সঙ্কটের মধ্যেও আশার কথা জানিয়ে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিংসহ সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি সুরার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সুন্দরবন সুরা প্রকল্পের কাজ শুরু হলে দ্রুতই পুনরায় সব বন্যপ্রাণীর জরিপ কাজ শুরু হবে। বন্যপ্রাণীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে আগামী জুন মাসের মধ্যে ৮৪টি পুকুর খনন ও পুনঃখননকাজ শুরু হবে। পাশাপাশি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে সুন্দরবনকে সুরক্ষিত করা হবে বলেও জানান তিনি।তথ্যসূত্র: নয়া দিগন্ত
Leave a Reply