রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য ‘মিনস্ক চুক্তির’ আর অস্তিত্ব নেই বলে ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি এই ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘মিনস্ক চুক্তির আর কোনো অস্তিত্ব নেই। আমাদের পালন করার আর কিছুই নেই।’
রাশিয়ার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই তা ‘ধ্বসে পড়েছে’ বলে জানান তিনি।
২০১৪ সালে বেলারুশের মিনস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা যুদ্ধ বন্ধের জন্য এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মিনস্ক চুক্তি নামে পরিচিতি পাওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সরে যাওয়ার বিষয় যুক্ত ছিলো। চুক্তি অনুযায়ী দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা সরে গেলে ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গণভোটের মাধ্যমে এর ভবিষ্যত নির্ধারণ করা হতো।
বিবৃতিতে পুতিন বলেন, ইউক্রেনের জন্য ‘উত্তম’ সমাধান হবে ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে নিরপেক্ষ থাকা।
পুতিন জানা, পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি নির্ভর করছে বাস্তব পরিস্থিতির ওপর।
এর আগে মঙ্গলবার রাশিয়ার পার্লামেন্ট দুমায় নিরুঙ্কুশভাবে ইউক্রেনে রুশ সৈন্য পাঠানোর অনুমোদন দেয়া হয়।
ইউক্রেন ঘিরে চলমান সংকটে পূর্ব ইউক্রেনে সরকারি বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাকামী বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর সোমবার দেশটির পূর্বে বিদ্রোহীদের প্রতিষ্ঠিত দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় রুশ সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এরপর থেকেই ইউক্রেন ঘিরে চলমান উত্তেজনা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর রাশিয়া দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়ে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি দখল করে নেয়। পাশাপাশি মস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব ইউক্রেনে বিপুল অঞ্চল দখল করে নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই সংঘর্ষ বন্ধে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় ২০১৪ সালে বেলারুশের মিনস্কে ইউক্রেন ও রাশিয়া এক চুক্তি করে।
মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী এই অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সরে যাওয়ার বিষয় যুক্ত ছিলো। দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা সরে গেলে ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গণভোটের ব্যবস্থা করবে।
কিন্তু পরস্পরের প্রতি সহিংসতার অভিযোগের জেরে এই চুক্তি আর বাস্তবায়িত হয়নি।
এরই মধ্যে ২০২০ সালে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের ন্যাটো সামরিক জোটের 'ইনহ্যান্সড অপারচুনিটি পার্টনার’ পদ পেলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়। নিজ দেশের সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণের শঙ্কায় রাশিয়া ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক জোটে যোগ দেয়ার বিরোধিতা করছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পর উত্তেজনা নতুন করে বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক লাখ সৈন্য ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করেছে মস্কো।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ইউক্রেনে হামলার জন্যই রাশিয়া ওই সৈন্য সমাবেশ করেছে। কিন্তু রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সামরিক বাহিনীর মহড়ার অংশ হিসেবে ওই সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছে।
পরে কিছু সৈন্য সরিয়ে নেয়ারও ঘোষণা দেয় রাশিয়া।
কিন্তু তাতেও ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো আশ্বস্ত না হয়ে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সব সৈন্য সরিয়ে নেয়ার আহ্বান অব্যাহত রাখে।
সৈন্য সমাবেশের জেরে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা প্রশমনে বিভিন্ন পন্থায় কূটনেতিক সমাধানের চেষ্টা চলছিলো।
কিন্তু নতুন করে বিদ্রোহীদের বিষয়ে রাশিয়ার পদক্ষেপ দুইপক্ষের মধ্যে যুদ্ধকে প্রায় অনিবার্য করে তুলেছে।
সূত্র : আলজাজিরা ও ডেইলি সাবাহ
<p>সম্পাদক: মো:রোকন উদ্দিন রুমন </p><p>লেখক: আবদুল্লাহ যায়েদ তানজিন </p><p>উপদেষ্টা: মো: মোশাররফ হোসেন </p><p>thedailypadma@gmail.com<br></p><p> বার্তা কার্যালয়: দক্ষিন কমলাপুর,ফরিদপুর সদর, ফরিদপুর। </p><p>মোবাইল:০১৭১১১৪৮৯৫১, ০১৯১১৩০৩২২৯ ইমেইল: thepadma24@gmail.com<br></p>
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।