আফগানিস্তানের বোলারদের সামনে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে কোমড় সোজা করে দাড়াতে পারেনি তামিম-সাকিবরা। আফগানদের দেয়া ২১৬ রানের জবাবে শুরুতে ধুকছিল টাইগাররা। কিন্তু আফিফ-মিরাজ সতীর্থদের শিখিয়ে দিলেন, কিভাবে চরম বিপদে ঠান্ডা মাথায় খেলতে হয়। তাদের দুদান্ত ব্যাটিং কৌশলেই ৪ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ। আফিফ ৯০ ও মিরাজ ৮১ রানে অপরাজিত ছিলেন। সাবাস মেহেদি হাসান মিরাজ, সাবাস আফিফ হোসেন।
এদিন দলীয় ৪৫রানে ৬উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। একসময় মনে হচ্ছিল ম্যাচের লাগাম টেনে ধরেছে আফগানরা। কিন্তু আফিফ-মিরাজের ব্যাটে ভর করেই জয়ের বন্দরে পৌয়ায় বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেটে ৫৮ বলে ৫০ রান যোগ করেন তারা দুজন। সেই সঙ্গে হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন আফিফ। এরপর আফিফ-মিরাজ ১৪২ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন। সেই সঙ্গে হাফসেঞ্চুরি করেন মিরাজ। তাদের দুজনের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল ভক্তরা। তাদের হতাশ করেননি মিরাজ-অফিফ। জয়ের পর গ্যালারিতে থাকা দর্শকরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে ওঠেন।
এদিকে আফগান পেসার ফজল হক ফারুকি ভেল্কি দেখিয়েছেন। ২১৬ রানের জাবাবে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি দুই টাইগার ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে সাজঘরে ফিরেন লিটন দাস। ফারুকির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এই টাইগার ব্যাটসম্যান। শুরুতে আম্পায়ার সাড়া দেয়নি। আফগানিস্তান রিভিউ নিলে তাদের পক্ষে যায়। মাত্র ১ রান করে সাজঘরে ফিরেন লিটন। এরপর একই ওভারে সাজঘরে ফিরলেন তামিম ইকবাল। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন লিটন। ১ বল পর এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম। প্রথমে আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নিলে এটিও
পক্ষে যায় আফগানিস্তানের। তিনি ৮ বলে ৮ রান করেন। এরপর দলীয় ১৮রানে আউট হন মুশফিক। তিনি ৫বলে ৩ রান করেন। এমনকি অভিষিক্ত ইয়াসির রাব্বি রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন।
দ্রুত উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে সাকিব ছিলেন তখন ভরসা হয়ে। কিন্তু তিনি আউট হবার পর আরো চাপে পড়ে টাইগাররা। মুজিবে বলে বোল্ড হন সাকিব হাসান। তিনি ১৫ বলে ১০ রান করেন। এদিন দলের বিপদে ঢাল হয়ে দাড়াতে পারেনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। তিনি দলীয় ৪৫ রানে রশিদের বলে আউট হন। তিনি সাজঘরে ফেরার আগে ১৭ বলে ৮ রান করেন। এরপর মিরাজ-আফিফ দলের হাল ধরেন। তারা দুজন সপ্তম উইকেটে ৫৮ বলে ৫০ রান যোগ করেন। এরপর তারা শত রানের জুটি গড়েন।
এদিকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ টস জিতে আগে ব্যাট করে ৪৯.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২১৫ রান তোলে সফরকারীরা। আফগানদের বিপক্ষে চট্টগ্রামে বল হাতে শুরুটা ভালোই করেছেন মোস্তাফিজ-তাসকিনরা। এদিন ম্যাচের শুরুতে আফগান দুই ওপেনারকে চেপে ধরে তামিম বাহিনী। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে রহমানুল্লাহ গুরবাজকে সাজঘরে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন এই আফগান ওপেনার। কিন্তু বল উঠে যায় আকাশে। তামিম ইকবাল ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি। ১৪ বলে ১ চারে ৭ রান করেন গুরবাজ। দলীয় ৭৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। ২৮ ওভারের সময় বোলিং করতে এসে মাহমুদউল্লাহ আউট করেন আফগান অধিনায়ক
হাসমতউল্লাহ শহীদিকে। তিনি ৪৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ রান করেন।
এরপর নাজিবুল্লাহর সঙ্গে জুটি গড়েন মোহাম্মদ নবী। বিপদের সময় ঠান্ডা মাথায় খেলে রান তুলছিলেন । তারা ক্রিজে টিকে থাকলে বিপদ বাড়বে তা বুঝতে পারছিল টাইগাররা। ৩৮.৩ ওভারে স্বস্তি এনে দিলেন তাসকিন আহমেদ। তার বল নবির ব্যাট স্পর্শ করে চলে যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে । ২৪ বলে ২ চারে ২০ রান করেন নবী। এরফলে ভেঙে যায় ৬৩ বলে ৬৩ রানের জুটি। তবে চাপ সামলে অন্য প্রান্তে ব্যাট হাতে একাই লড়াই করতে থাকেন জাদরান। কিন্তু তাকে কেউ সঙ্গ দিতে পারপনি। এরপর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব ২টি উইকেট তুলে নেন। একই ওভারে গুলবাদিন-রশিদকে আউট করনে সাকিব।
তিনি নিজের নবম ওভারে তৃতীয় বলে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন গুলবাদিন। কিন্তু বল ব্যাট ফসকে লাগে তার প্যাডে। তখনই সাকিবের জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। ২১ বলে ১৭ রান করে আউট হন। এরপর সাকিবে চমৎকার এক বল রশিদ খান বুঝতেই পারেননি। ফলে রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন রশিদ। এরপর নিয়মিত উইকেট হারায় আফগানরা।
তাছাড়া সফরকারী দলের রহমত শাহ বেশ ঠাণ্ডা মাথায় রান তুলছিলেন। কিন্তু তাসকিন তাকে বেশি দূর এগোতে দেয়নি। ৬৯ বলে ৩৪ রান করে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন রহমত শাহ। এর আগে এদিন ব্যক্তিগত ৩ রানে নতুন জীবন পান ইব্রাহিম জাদরান। তিনি এর পর ব্যাট হাতে ভালোই খেলছিলেন। কিন্তু তাকে বেশিদূর এগোতে দেননি শরিফুল ইসলাম। টাইগার এই পেসারের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ১৯ রান করে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ইব্রাহিম। তিনি ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে নতুন জীবন পান। তাসকিন আহমেদের শর্ট বলে পুল করেন ইব্রাহিম। কিন্তু স্কয়ার লেগে মাহমুদউল্লাহ তালুবন্দি করতে পারেননি। ৩ রানে নতুন জীবন পান জাদরান।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে মোস্তাফিজ ৩উইকেট শিকার করেন। আর দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব,তাসকিন ও শরিফুল। এছাড়া এই ম্যাচে অভিষেক ঘটছে ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বির। এর আগে গত নভেম্বরে চট্টগ্রামেই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। একই মাঠে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
Leave a Reply