ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, যারা দেশে ফিরে আসতে চান, তাদের পোল্যান্ড হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে, প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশি সেখানে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৫০ জনকে নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের পোল্যান্ড মিশন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনের প্রবাসীদের পোল্যান্ড আসার জন্য আমরা ব্যবস্থা করছি। পোল্যান্ড যেন তাদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়, আমরা অনুরোধ করেছি। পোল্যান্ডে বাংলাদেশিদের জন্য দুই সপ্তাহের ভিসা দেওয়া হতে পারে।
তিনি জানান, পোল্যান্ডে বেশ কয়েকটি জায়গায় ইউক্রেন-ফেরতদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে বিশেষ বিমান পাঠিয়ে তাদের আনা যায় কি না, আমরা তা আলোচনা করছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে কথা বলেছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ কাজে সহায়তা করার জন্য ইতালি ও জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কূটনীতিকদের পোল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড সীমান্ত পর্যন্ত বাংলাদেশিদের নিজস্ব ব্যবস্থায় আসতে হবে।
ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, এখনই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না বা সে সময় আসেনি। তবে এর কারণে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে। এর প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের ওপরেও পড়বে।
ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।
বাংলাদেশে রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বর্তমান পরিস্থিতি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না- জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাস্তবায়ন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এতে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।
হাঁটা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই
সিলেটের বাসিন্দা মো. আব্দুল কাইয়ুম বছর চারেক আগে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউক্রেনে পাড়ি জমান। সবকিছু ভালোই চলছিল। তবে গত কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা উত্তেজনায় পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
কাইয়ুম ভেবেছিলেন কষ্ট হলেও রাজধানী কিয়েভেই থেকে যাবেন। তবে বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর খবর পেয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
তিনি বলেন, আমি কিয়েভ শহরে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছি। এখানকার পরিস্থিতি ভালো নয়, থমথমে। বৃহস্পতিবারের পরিস্থিতি দেখে পোল্যান্ড যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, পোল্যান্ড যেতে চাচ্ছি ঠিকই, তবে কোথাও কোনো গাড়ির ব্যবস্থা নেই। হাঁটা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্ডারের উদ্দেশে রওনা করেছি। হাঁটার মধ্যে আছি। প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে হাঁটছি। জায়গায় জায়গায় থেমেছি। চেষ্টা করেছি গাড়ি বা ট্যাক্সির ব্যবস্থা করার। কিন্তু কোনোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না। কবে যে পোল্যান্ড সীমান্তে গিয়ে পৌঁছাব সে চিন্তা করছি।
ইউক্রেনের মারিউপল এলাকায় বসবাস করেন বাংলাদেশি মাহমুদুল হাসান দোলন ও মেহেদি হাসান। তারা জানান, সকাল ১০টায় পোল্যান্ড সীমান্তের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়েছেন। প্রায় ছয় ঘণ্টার মতো সময় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন। টিকিট কাউন্টার থেকে বাস আসবে বলে আশ্বস্তও করা হয় তাদের। কিন্তু দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর জানানো হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় বাস চালাবে না কোম্পানি। এ কথা শুনে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তারা।
মেহেদি হাসান বলেন, আমরা বর্তমানে মারিউপল আছি। কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। সকাল ১০টা থেকে এ পর্যন্ত কেবল ঘুরছি। বাস ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন বলছে ছাড়বে না। অন্য কোনো গাড়িও পাচ্ছি না। কী করব বুঝতে পারছি না। এখান থেকে কোনোদিকে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মাহমুদুল হাসান দোলন বলেন, এত দূর আমরা কীভাবে যাব? আমাদের জন্য দূতাবাস যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় ভালো হয়।
ইউক্রেনে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করা দুই বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপদে অবস্থানে যেতে চান। তবে দেশে ফিরতে রাজি নন। রাসেল নামের এক বাংলাদেশি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আমি এখানে আছি। আমি এখন নিরাপদ কোথায় গিয়ে থাকতে চাই। তবে দেশে যেতে চাই না।
গত কয়েক মাস ধরে চলমান উত্তেজনার মধ্যে দেশে ফেরা নিয়ে দোটানায় ছিলেন সেখানে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি। অবশ্য এরইমধ্যে অনেকে দেশে ফেরা নিয়ে পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানা গেছে।
এতদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকের মধ্যে দোটানা থাকলেও বৃহস্পতিবার বিস্ফোরণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকে বাংলাদেশিরা দেশটি থেকে অন্যত্র বা নিরাপদে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই অর্থে কোনো গণপরিবহন না পাওয়ায় বিপদে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় পোল্যান্ড ফিরতে আগ্রহীরা সীমান্তে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দূতাবাসের সহযোগিতা চাচ্ছেন।
এদিকে ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, যারা দেশে ফিরে আসতে চান, তাদের পোল্যান্ড হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে, প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশি সেখানে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৫০ জনকে নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের পোল্যান্ড মিশন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
Leave a Reply