পশ্চিমের কোনো দেশ যদি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করতে সেনাবহর ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠায়, সেক্ষেত্রে ‘নিতান্ত বাধ্য হয়ে’ ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে ভাবতে পারে রাশিয়া।
বৃহস্পতিবার সকালে টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ভাষণে ইউক্রেন সরকারকে সামরিক সহায়তা দেওয়া হলে কী পরিণতি হতে পারে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি।
‘পরমাণু অস্ত্র ছাড়াও, রাশিয়ার অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের মজুতও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। সুতরাং কোনো সম্ভাব্য আগ্রাসী শক্তি যদি আমাদের দেশে সরাসরি আঘাত হানার সাহস দেখায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজয় ও পরবর্তী অশুভ পরিণতির জন্য তার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত।’
এখন পর্যন্ত বিশ্বে মাত্র একবারই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি টানতে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাট ম্যান’ নিক্ষেপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যানের নির্দেশে যে লক্ষ্যে এই বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তা অবশ্য সফল হয়েছিল; ওই ঘটনার পরই মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ঘণ্টা বাজে এবং বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে শক্তির কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভাব ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের।
কিন্তু এই বোমার কারণে জাপানে মৃত্যু হয়েছিল দুই লাখেরও বেশি মানুষের। তাদের প্রায় সবাই ছিল বেসামরিক সাধারণ মানুষ এবং বিশ্বজুড়ে এখনও অনেকে এই ঘটনাকে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে।
গত শতকের চল্লিশের দশকে বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র দেশ হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী ছিল যুক্তরাষ্ট্র; কিন্তু ওই শতকেরই শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নও পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করে।
দুই পরাক্রমশালী শক্তির পারমাণবিক সক্ষমতার জেরে বিভক্ত হয় বৈশ্বিক রাজনীতি, শুরু হয় শীতল যুদ্ধ এবং কয়েক দশক ধরে চলা এই শীতল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন—উভয়ই একের পর এক সামরিক অস্ত্রের মহড়ায় মেতে ওঠে।
সেসব দিন অবশ্য বিশ্ব পেছনে ফেলে এসেছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্তিও ঘটেছে শীতল যুদ্ধের এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিন রাশিয়ায় পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলনের ঘোষণাও দেন।
তবে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের মজুত সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বরাবরই এ বিষয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের যে চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র করেছিল তার পেছনেও জ্বালানী হিসেবে কাজ করেছিল মূলত এই দুশ্চিন্তা।
ন্যাটোকে কেন্দ্র করে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব শুরুর সময় থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাই সংকটের শুরু থেকেই বাইডেন বলে আসছিলেন, ন্যাটো ইউক্রেনে কোনো সৈন্যবহর পাঠাবে না; কারণ তিনি খুব ভালোভাবেই অবগত যে, ইউক্রেনে ন্যাটোর সেনারা পা রাখা মাত্র এই সংঘাত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার লড়াইয়ে পরিণত হবে এবং সেটি একসময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে।
তাছাড়া ইউক্রেন এখনও ন্যাটোর পূর্ণ সদস্যরাষ্ট্র না হওয়ায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দেশটিকে পারমাণবিক সহায়তাও দিতে পারবে না ন্যাটো। তাই এ পর্যন্ত রুশ প্রেসিডেন্টের প্রায় প্রতিটি মন্তব্যর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দিলেও বৃহস্পতিবার যখন পুতিন পারমাণবিক অস্ত্রের ভয় দেখালেন, তখন পাল্টা মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি নিউজকে বলেন, ‘এটা নতুন কোনো হুমকি নয়। তিনি (পুতিন) এমন বলতেই পারেন।
সূত্র: এপি।
Leave a Reply