পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযান আরও জোরদার করতে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে মস্কো। প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে আলোচনায় বসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর এই নির্দেশ দেয় রুশ কর্তৃপক্ষ।
মূলত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান আক্রমণ ‘সব দিক থেকে’ আরও জোরদার করতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে ঢুকে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসাবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির মতো পড়েছে।
হামলার তৃতীয় দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্যাপক আক্রমণ করে রুশ সামরিক বাহিনী। এতে করে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য প্রবল হামলার মুখেও কিয়েভে বেশ শক্ত প্রতিরোধের মুখেই পড়েছে রুশ বাহিনী।
শনিবার এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রুশ সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইগোর কোনাশেঙ্কোভ জানান, ‘ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বিদ্যমান পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সব দিক থেকে দেশটির বিরুদ্ধে চলমান হামলা আরও জোরদার করতে সামরিক বাহিনীর সকল ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের নিটকে অবিস্থত ভ্যাসিলকিভ শহরের একটি তেল ডিপোতে আঘাত হেনেছে রাশিয়ার মিসাইল। এতে করে ওই তেল ডিপোতে আগুন ধরে যায়। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
তেল ডিপোতে রুশ হামলার তথ্য নিশ্চিত করে অনলাইনে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় ভ্যাসিলকিভ শহরের মেয়র নাতালিয়া বালাসিনোভিচ বলেন, ‘শত্রুরা আমরাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিতে চায়।’
এছাড়া অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ছবিতে ভ্যাসিলকিভ শহরের ওই তেল ডিপোতে হামলার পর সেখানে আগুন জ্বলতে এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।
এদিকে রুশ সেনাদের হামলার মুখে পিছিয়ে নেই ইউক্রেনও। দেশটির দাবি, শনিবার রাশিয়ার দু’টি বড় পরিসরের সামরিক বিমান ভূপাতিত করেছে তারা। অন্যদিকে ভূপাতিত করা এই বিমান দু’টিতে ৩০০ জন পর্যন্ত রুশ সেনা অবস্থান করছিলেন বলে জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ২০০ রুশ সেনাকে বন্দি করা হয়েছে।
ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী আরও দাবি করেছে, হামলা করতে এসে রাশিয়া এখন পর্যন্ত ১৪টি যুদ্ধবিমান, ৮টি হেলিকপ্টার এবং ১০২টি ট্যাংক হারিয়েছে। বিবিসি অবশ্য দেশটির এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
ছয় বছর বয়সী এক শিশু নিহত:
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও বিবিসি। শনিবার মধ্যরাতে উভয়পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ওই শিশু নিহত হয়। চলমান সংঘর্ষে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বশেষ নিহত এই শিশুটি সবচেয়ে অল্পবয়সী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া কিয়েভের ওখমাতদিত হাসপাতালের বরাত দিয়ে সিএনএন আরও জানিয়েছে, তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে শহরের আরও বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে ঢুকে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটিকে অন্যতম বড় হামলার ঘটনা হিসেবে বলা হচ্ছে। ইউএনএইচসিআর বলছে, ইউক্রেনে আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ৫০ লাখ পর্যন্ত মানুষ ইউক্রেনে ঘরছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির।
রুশ সেনাদের হামলার মুখে পিছিয়ে নেই ইউক্রেনও। দেশটির দাবি, শনিবার রাশিয়ার দু’টি বড় পরিসরের সামরিক বিমান ভূপাতিত করেছে তারা। অন্যদিকে ভূপাতিত করা এই বিমান দু’টিতে ৩০০ জন পর্যন্ত রুশ সেনা অবস্থান করছিলেন বলে জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
Leave a Reply