আজ সোমবার (২৬ রজব ১৪৪৩ হিজরি) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হবে পবিত্র এ রজনী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায়, পবিত্র শবেমেরাজ ১৪৪৩ হিজরি উদযাপন উপলক্ষে আজ বেলা দেড়টায় (বাদ জোহর) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র শবেমেরাজ-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনাসভা, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের এতে অংশ নিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনুরোধ জানিয়েছে।
এ রজনি মহাপবিত্র মহিমান্বিত লাইলাতুল মেরাজের। পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদিসের বর্ণনায় মেরাজের ঘটনাটি বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য এবং এই রজনী আল্লাহর ইবাদত (নফল নামাজ, তসবিহ ও কুরআন পাঠ) ও দিনে রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব।
এ মহিমান্বিত রাতে আমাদের প্রিয় নবি হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল আলাহিস্সালামের সঙ্গে পবিত্র কাবা হতে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে সপ্তাকাশের ওপর সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে ৭০ হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা শবে মেরাজ। প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সব চেয়ে বড় মোজেজা এটি। ইসলামের ইতিহাসে এমনকি পুরো নবুয়তের ইতিহাসেও এটি এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। কারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও রাসূল হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কোনো নবি এই পরম সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। আর এ কারণেই হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ নবি।
উল্লেখ্য, মেরাজ রজনিতেই মানবজাতির শ্রেষ্ঠ ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। আল্লাহপাকের দিদার শেষে রাসূল (সা.) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি অবলোকন করেন সৃষ্টি জগতের সবকিছুর অপার রহস্য। মেরাজ শব্দটি আরবি, এর অর্থ ঊর্ধারোহণ। মেরাজের বড়দাগে অর্থ দাঁড়ায় সপ্তম আসমান, সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত জাহান্নাম পরিদর্শন ও আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য পর্যন্ত ভ্রমণ। এ ছিল আল্লাহ তায়ালার মহান কুদরত, অলৌকিক নিদর্শন, নবুয়তের সত্যতার স্বপক্ষে এক বিরাট আলামত। জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ, মু’মিনদের জন্য প্রমাণ হেদায়েত নেয়ামত, রহমত, মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে হাজির হওয়া ও ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন।
শবে মেরাজের ইতিহাস:
হিজরি নবম মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত অনুষ্ঠিত হয়েছে মেরাজ। প্রিয়নবিকে চরম বিপদের মুহূর্তে শান্ত্বনা দেয়ার নিমিত্তে এক অসাধ্য সাধন কাজের মাধ্যমে নবুয়তের সত্যতাকে সুনির্ধারিত করতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে ডেকে নেন। ইসলামের ইতিহাসে এ ঘটনা মেরাজ নামে প্রসিদ্ধ।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা (আল্লাহ) তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রি বেলা ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম (মক্কা মুকাররামাহ) থেকে মসজিদে আকসা (বাইতুল মুকাদ্দাস) পর্যন্ত, যার চার দিকে আমি (আল্লাহ) পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাঁকে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’ (সুরা বনি ইসরাইল আয়াত-০১)
এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়নবিকে দেখিয়েছেন অনেক নির্দশন। যার মধ্যে রয়েছে সাধারণ জ্ঞানের বাইরে ঐশ্বরিক অনেক ঘটনা ও ইতিহাস।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কেন এত বড় একটি ঘটনা ঘটালেন? এর পেছনে তাঁর কি রহস্য? এর গুরুত্বই বা কি? এর দ্বারা আমরা কি পেলাম? এ বিষয়গুলোর একটি সংক্ষিপ্তরূপ তুলে ধরা হলো-
নবুয়তের সত্যতার প্রথম দিক…
মেরাজের রাতে পবিত্র নগরী মক্কা থেকে আরেক পবিত্র নগরি জেরুজালে মুহূর্তের মধ্যে গমন। সেখানকার মসজিদে আকসার চার পাশের বরকতময় নির্দশনগুলোর পরিদর্শন। অথচ এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সাধারণত সময় লাগে এক মাস। আল্লাহ তাআলা তা খুব তড়িৎ গতিতে সম্পন্ন করিয়েছেন।
যা মেরাজ পরবর্তী সময়ে মক্কায় অবস্থানরত সকল কাফির-মুশরিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়নবি বলে দিয়েছিলেন। যা তার নবুয়তের সত্যতার সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং মুজেজা।
মেরাজের দীর্ঘ পথে যা দেখলেন তিনি…
মদিনায় নামাজ আদায়
হাদিসের এক রেওয়ায়েতৈ এসেছে, ‘বোরাক নামক কুদরতি বাহনে ভ্রমণের সময় জিবরিল আলাইহিস সালাম এক জায়গায় পিয়নবিকে নামাজ পড়তে বলেন। অতঃপর তিনি বলেন, এ জায়গা আপনি চিনেন? প্রিয়নবি বললেন, না’। হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, ‘এটা তায়্যেবা অর্থাৎ মদিনা, এটাই হচ্ছে হিজরতের জায়গা।
তুর পাহাড়ে নামাজ
মদিনা অতিক্রম করার পর অন্য এক জায়গায় নামাজ পড়ান এবং বলেন এটা হচ্ছে তুরে সাইনা অর্থাৎ এখানেই আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে কথা বলেন।
বাইতে লাহামে নামাজ
তুর পাহাড়ের পর প্রিয়নবি বায়তে লঅহামে নামাজ আদায় করে। এ বায়তে লাহাম হলো হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মস্থান।
অতঃপর প্রিয়নবি বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌছেন। যেখানে সকল নবি ও রাসুলগণ একত্রিত হন। কেননা এই বায়তুল মুকাদ্দাসই হচ্ছে সব নবি ও রাসুলদের প্রাণ কেন্দ্র।
সব নবি-রাসুলদের নেতা মনোনীত
বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌছার পর প্রিয়নবি সব নবি-রাসুলদের ইমাম হয়ে মসজিদে আকসায় নামাজ আদায় করেন। আর এ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে প্রিয়নবি হয়ে ওঠেন ইমামুল মুরসালিনা ওয়ান নাবিয়্যিন।
বায়তুল মুকাদ্দাসে দুধ পান
সব নবি-রাসুলদের নিয়ে নামাজ আদায়ের পর প্রিয়নবিকে পানি বা সরাব, দুধ ও মধু দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। প্রিয়নবি দুধ গ্রহণ করলেন। প্রিয়নবি দুধ পান করার ফলে জিবরিল আলাইহিস সালাম বলেন, ‘আপনি ফিতরাতের ওপর বিজয়ী হয়েছেন। যদি আপনি পানি পান করতেন তবে, আপনার উম্মত বিপদের সম্মুখীন হয়ে যেত।
উর্ধ্বলোকে আরোহন ও প্রথম আকাশে ঘটনা প্রবাহ…
হজরত আদম আলাইহিস সালামের সাক্ষাৎ
দুনিয়ার আকাশে আরোহন করে প্রিয়নবি দেখেন এক ব্যক্তি ডানে তাকিয়ে হাসছেন; আর বামে তাকিয়ে কাঁদছেন। জিবরিল প্রিয়নবির জিজ্ঞাসায় জানালেন, ইনি হলেন হজরত আদম আলাইহিস সালাম। তিনি তার ডান পাশের জান্নাতি সন্তানদের দেখে হাসছেন। আর বাম পাশের জাহান্নামি সন্তানদের দেখে কাঁদেছেন।
হারাম ভক্ষণকারীর পরিণাম
দুনিয়ার আকাশে দুইটি ভাণ্ডভর্তি গোশ্ত। যার একটি তাজা গোশ্ত। আর অন্যটিতে পঁচা-দুর্গন্ধ গোশ্ত। মানুষ তাজা গোশ্ত না খেয়ে পঁচা গোশ্ত খাচ্ছে। প্রিয়নবি জানতে পারলেন এরা হলো দুনিয়ার হারাম ভক্ষণকারী ব্যক্তি।
অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাৎকারীর পরিণাম
কিছু লোকের ঠোট উটের মত। ফেরেশতারা তাদের মুখ ফেড়ে ঐ (পঁচা-দুর্গন্ধযুক্ত)গোশত তাদের মুখের মধ্যে ভরে দিচ্ছেন; যা তাদের অন্যপথ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর তাতে তারা ভীষণ চিৎকার করছে এবং আল্লাহর কাছে মিনতি করছে। জানা গেল এরাই হচ্ছে দুনিয়াতে যারা ইয়াতিমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করেছিল।
ব্যভিচারীর পরিণাম
সেখানে দেখা গেল- কয়েকজন স্ত্রীলোক বুকের ভারে লটকানো রয়েছে এবং হায়! হায়! করছে। জানা গেল এরা হচ্ছে ঐ সব স্ত্রীলোক; যারা দুনিয়াতে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল।
সুদ খাওয়ার পরিণাম
অতঃপর দেখলেন, কিছু লোকের পেট বড় বড় ঘরের মত। তারা উঠে দাঁড়াতে চাইলেই পড়ে যাচ্ছে আর আল্লাহ তা’আলার সামনে হা-হুতাশ করছে। জানা গেলে তারা হচ্ছে দুনিয়ার সুদখোর ব্যক্তি।
গিবতকারীর পরিণাম
অতঃপর দেখা গেল- ফেরেশতারা কিছু লোকের পার্শ্বদেশ থেকে গোশত কেটে তাদের নিজেদের খাওয়াচ্ছে আর বলছে, তোমরা দুনিয়াতে যেভাবে নিজের ভাইয়ের গোশত খেতে (গিবত করতে); এখনেও খাও। জানা গেল- তারা হল ওই সব লোক; যারা দুনিয়াতে অপরের দোষ অন্বেষণ করে বেড়াত
এভাবে দ্বিতীয় আকাশে সুদর্শন যুবক হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম, তৃতীয় আকাশে হজরত ইয়াহইয়া ও জাকারিয়া আলাইহিস সালাম, চতুথ আকাশে হজরত ইদরিস আলাইহিস সালাম, পঞ্চম আকাশে হজরত হারুন ইবনু ইমরান আলাইহিস সালাম, ষষ্ঠ আকাশে হজরত মূসা ইবনু ইমরান আলাইহিস সালামের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
সপ্তম আকাশে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সঙ্গে সাক্ষাৎ
সপ্তম আকাশে বায়তুল মামুরের সঙ্গে ঠেস দিয়ে বসে থাকা মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে দেখতে পানে। তিনি উম্মতে মুহাম্মাদিকে দুভাগে দেখেন-
>> যাদের অর্ধেকের কাপড় ছিল বকের মত সাদা;
>> আর বাকী অর্ধেকের কাপড় ছিল কালো;
সাদা পোশাকের লোকগুলো আমার সঙ্গে বায়তুল মামুরে যেতে পারলেন; আর কালো পোশাকের লোকগুলো আমার সঙ্গে যেতে পারলেন না। অতঃপর আমি সেখানে নামাজ আদায় করে বেরিয়ে আসলাম।
উল্লেখ্য যে, এ বায়তুল মামুরে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা নামাজ পড়েন; যারা একদিন নামাজ পড়েছেন তাদের পালা কেয়ামত পর্যন্ত আর আসবে না বলে জানা যায়।
জান্নাতের নেয়ামত পরিদর্শন
জান্নাতে বেহেশতি হুর দেখা গেলো। বেহেশতি হুর, তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কার? উত্তরে সে বলল আমি হজরত যায়েদ ইবনু হারেসার (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। সেখানে নষ্ট না হওয়া পানি। স্বাদ পরিবর্তন না হওয়া মধু। নেশাহীন সুস্বাদু মদ। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন মধুর নহর দেখলাম। বড় বড় বালতির ন্যায় ডালিম ফল। পাতলা তক্তা ও কাঠের ফালির ন্যায় পাখি অবলোকন করলঅম।
আর এসব নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৎ বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন; যা দুনিয়ার কোনো চোখ দেখেনি; কোনো কান শোনেনি এমনকি অন্তরেও কল্পনা করেনি।
জাহান্নামের আজাব পরিদর্শন
অতঃপর আমার সামনে জাহান্নাম উপস্থিত করানো হলো। যেখানে ছিল আল্লাহর ক্রোধ, তার শাস্তি এবং তার অসন্তুষ্টি। যদি তাতে পাথর ও লোহা নিক্ষেপ করা হয় তবে ওগুলোকেও খেয়ে ফেলা হবে। অতঃপর আমার সামনে থেকে ওটা বন্ধ করে দেয়া হল। আবার আমামে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হল। এবং আমাকে ঢেকে ফেলা হল।
শেষ সীমান্ত সিদরাতে মুনতাহা
সিদরাতুল মুনতাহায় যাওয়ার পর দেখলাম তার একেকটি পাতা এত বড়- যে, যার একটি পাতা দিয়েই উম্মতে মুহাম্মাদিকে ঢেকে ফেলা যাবে। সালসাবিল নামে একটি নহর প্রবাহিত। এ নহরের দুটি প্রসবন; যার একটি হলো হাউজে কাওসার আর অন্যটি হলো নহরে রহমত। যেখানে আমি গোসল করলাম। যার ফলে আগের এবং পরের গোনাহ মাফ হয়ে যায়।
অতঃপর আল্লাহর সাক্ষাতের পথে…
সিদরাতুল মুনতাহা থেকে উর্দ্ধ জগতে যতটুকু আল্লাহ চেয়েছেন ততটুকু পর্যন্ত তাকে টেনে নিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর তিনি নিকটে এসেছেন এবং অতীব নিকটবর্তী হয়েছেন। এমনকি দুই ধনুকের মত নিকটবর্তী হয়েছেন, এমনকি আরও অধিকতর নিকটবর্তী হয়েছেন। (সুরা নজম : আয়াত ৮ ও ৯)।
সেখানে প্রিয়নবি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হন। যেমনটি কুরআনুল কারীমে এসেছে-, ‘তিনি যা দেখেছেন অন্তর তাকে অস্বীকার করেনি। (সুরা নজম : আয়াত ১১) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর দৃষ্টি বক্র হয়নি এবং লক্ষচ্যুত হয়নি। (সুরা নজম : আয়াত ১৭)।
আল্লাহর সঙ্গে ভাব-নিমিয়
নামাজে যে তাশাহহুদ পড়া হয়; তাই ছিল আল্লাহর সঙ্গে প্রিয়নবির ভাব বিনিময়। সেখানের ভাব বিনিময় হলো-
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি, ওয়াস সালাওয়াতু, ওয়াত-তাইয়্যিবাতু, আস সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আস সালামু আলাইনি, ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থাৎ আমাদের সব শ্রদ্ধা ও সালাম, আমাদের সব নামাজ এবং সব ধরনের পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে।
হে নবি, আপনার প্রতি সালাম, আপনার ওপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হোক।
আমাদের এবং আল্লাহর সব নেক বান্দাদের ওপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হোক।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া (ইবাদতের উপযুক্ত) আর কোনো মাবুদ নাই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
অতঃপর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ৫০ ওয়াক্ত নামাজ প্রাপ্তি
অতঃপর প্রিয়নবি বলেন, আমার ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। আমাকে বলা হয়, তোমার প্রত্যেক ভাল কাজের জন্য দশটি করে নেকী রইল। যখন তুমি কোনো ভাল কাজ করার ইচ্ছা করবে, অথচ তা পালন করবে না, তথাপিও একটি পূণ্য লেখা হবে। আর যদি ভাল কাজটি করে ফেল তবে দশটি পূণ্য লেখা হবে।
পক্ষান্তরে যদি কোনো খারাপ কাজ করার ইচ্ছা করো এবং বাস্তবে না করো তবে একটি পাপও লেখা হবে না। যদি খারাপ করে বসো তবে শুধুমাত্র একটি পাপ লেখা হবে।
নামাজ ৫ ওয়াক্ত নির্ধারণ
অতঃপর প্রিয়নবি দুনিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ফেরার পথে পথিমধ্যে ৬ষ্ঠ আকাশে হজরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং প্রাপ্তির বিষয়ে কথোপকথনে প্রিয়নবি পুনরায় আল্লাহর সাক্ষাতে যান এবং ৫০ ওয়াক্ত নামাজ থেকে কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নির্ধারিণ করেন।
যারা নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে; আল্লাহ তাদের আমলনামায় পঞ্চাশ ওয়াক্ত রাকায়াত নামাজের সাওয়াব দান করবেন।
অতঃপর প্রিয়নবি পরদিন মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করলে মক্কার অবিশ্বাসী কাফেররা মেরাজের ঘটনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। এর বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস স্থাপন করেন হজরত আবু বকর। যার ফলে তিনি হলো ছিদ্দিকে আকবর।
পরিশেষে…
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ মেরাজ ছিল জাগ্রত অবস্থায় রূহ ও শরীরের উপস্থিতিতে। আর তা বাস্তবেই প্রমাণিত। প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য মেরাজ সংঘটিত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বাস স্থাপন করাও ঈমানের একান্ত দাবি।
মানুষের জন্য আল্লাহর মেরাজের দরজা নামাজের মাধ্যমে খোলা রাখা হয়েছে। মুমিনের মেরাজই হলো নামাজ। এ নামাজেই মানুষ আল্লাহর দিদার লাভ করতে সক্ষম।
মুসলিম উম্মাহ যখন এ মেরাজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং মেরাজের শ্রেষ্ঠ উপহার নামাজ বাস্তবায়ন করবে; নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর ভয় এবং মহব্বত বাস্তবায়ন করবে তখনই মানুষের ইহকাল ও পরকাল হবে সার্থক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মেরাজের শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের উন্নত নৈতিক চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। পরকালের সফলতা দান করুন। আমিন।
আমল
শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো আমলের কথা শরীয়তে উল্লেখ করা হয়নি। তবে অনেকে এ উপলক্ষে নফল রোজা রাখেন। তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেন। এর কোনোটিকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার যে কোনো আমলই মূল্যবান।
কোনো বিশেষ ব্যবস্থা বা আয়োজন না করে সাধারণভাবে এ রাতে কবরস্থানে যাওয়া এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্যে দোয়া করা ও দরুদ-ইস্তেগফার পাঠ করে দোয়া করা আবশ্যক। কারণ এ রাতে রাসূল (স) মেরাজ ভ্রমণে বেহেশত দোযখ পরিদর্শনকালে জাহান্নামীদের শাস্তি অবলোকন করেছিলেন। আমাদের দোয়া মৃত ব্যক্তিদের সেই শাস্তি কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারে।
এ রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত তথা কুরআন তেলাওয়াত করা, অধিকহারে দরুদ পাঠ করা এবং নফল নামাজ পড়া যেতে পারে। কারণ এ রাতেই মহান আল্লাহ মহানবী (স)-এর মাধ্যমে উম্মতের জন্য নামাজ ফরজ করেন। ফরজ নামাজ ঠিক রেখে নফল নামাজ যত বেশি পড়া যায় ততই আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে ঠাঁই পাওয়া সহজ হবে। এক হাদীসে রয়েছে, ফরজের পর নফল নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর রহমতের যত নিকটবর্তী হয়, অন্য কোনো আমলে তা সম্ভব হয় না। তাই এ রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া যেতে পারে। তবে নামাজের জন্য রাকাত সংখ্যার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই; বরং এই রাতে সামর্থ অনুযায়ী জামাত ব্যতীত অনির্দিষ্টভাবে নফল নামাজ পড়া এবং নিজের ও সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করা উচিত।
শবে মেরাজের পরদিন অর্থাত্ ২৭ রজব নফল রোজা রাখা যেতে পারে। বর্ণিত আছে, রাসূলে আকরাম (স) যখন মেরাজ ভ্রমণে যান তখন তিনি রোজা অবস্থায় ছিলেন। তাই তাঁর স্মরণে রোজা পালন করা অবশ্যই ফজিলত হিসেবে গণ্য হবে। তবে যে কোনো নফল রোজার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিশেষ মূল নীতি হলো, অন্তত একসঙ্গে দুটি রোজা রাখা। রাসূল (স) ইরশাদ করেছেন, ইহুদিরা একটি রোজা রাখে। তোমরা তাদের বিরোধিতা ও আল্লাহর অধিক সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্ত অন্তত দুটি রোজা রাখো। তাই রজবের ২৬-২৭ বা ২৭-২৮ তারিখে এই রোজা রাখা উত্তম।
Leave a Reply