সয়াবিন তেলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর বাজারে কমতে শুরু করেছে ভোজ্যতেলের দাম। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এখনও তা আসেনি।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, বড়বাগ, পীরেরবাগসহ বিভিন্ন বাজারে সুপার পাম তেল প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, আর লিটার ১৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বোতলে ভরা প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।
পীরেরবাগের মুদি দোকানিরা জানান, গত সোমবারও সয়াবিন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা হয়ে গিয়েছিল। আর পাম তেলের দাম উঠেছিল লিটার ১৭০ টাকা। এখন পাইকারিতে দাম কমেছে। তাই আমরাও কমাতে পেরেছি।
আমদানি মূল্য ও বাজার বিশ্লেষণ করে সরকার গত ৬ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের মূল্য বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা এবং পাম সুপার তেল ১৩৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।
ঘোষিত হারে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে প্রতি লিটারে দাম ৩০ টাকার মতো কমতে পারে বলে জানান সিটি গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা।
এদিকে বাজারে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা ও ‘কারসাজি’ থামাতে শুক্রবার থেকেই মুদি দোকানিদের কাছে পাকা রশিদ নিশ্চিত করতে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সবজির বাজার চড়া
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, হাতিরপুল ঘুরে কথা হয় স্থানীয় খুচরা মুদি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তারা বলছেন, সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির কারণে আগের তুলনায় বেচাকেনা কমে গেছে। বেশিরভাগ ক্রেতা নির্দিষ্ট পণ্যের বাইরে আর কিছু কিনছেন না।
হাতিরপুলের খুচরা বিক্রেতা মো. কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার দোকানের বেশিরভাগ ক্রেতাই চাকরিজীবী। তারা মাসের শুরুতেই একসঙ্গে সব বাজার করেন। কিন্তু গত ২-৩ মাস তারা আগের মতো একবারে পণ্য নিচ্ছেন না। যখন যেটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নিচ্ছেন। আগে যারা ৪-৫ হাজার টাকার বাজার করতেন এখন তারা সর্বোচ্চ ২-৩ হাজার টাকার বাজার করছেন।’ তিনি বলেন, আগে তার দৈনিক ৮-১০ হাজার টাকা বেচাবিক্রি হতো। এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভরা মৌসুমেও দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়েছে পণ্যটির দাম। গত সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি দরে। চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে।
বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলে দাম কমে আসবে।
সপ্তাহের ব্যবধানে আরেক দফা বেড়েছে সবজির দাম। প্রতিটি মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। বেগুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। টোমেটো ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচ ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। গত সপ্তাহে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আলু এ সপ্তাহে ১৮-২০ টাকা।
এ ছাড়া বেড়েছে দেশি ও ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৮০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা। গরুর মাংস আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৫০ টাকা।
বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। বিশেষ করে নদীর মাছ গড়ে কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চাষের মাছের দাম গড়ে বেড়েছে কেজিতে ২০-৩০ টাকা। এ ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীদের অজুহাত, নদী-খালের মাছের সরবরাহ কম। খাবারের দাম বাড়ায় চাষের মাছের দামও বাড়তি।
গত কয়েক বছর ধরে বেড়েই চলছে সব ধরনের মাঝারি ও সরু চালের দাম। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে তেল, আটা, ময়দা, মুরগি, ডিম, মাছ, মাংসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। ফলে স্বস্তিতে নেই সীমিত আয়ের মানুষেরা।
Leave a Reply