‘ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানো না গেলে বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেবে। কারণ সারের দাম এত দ্রুত বাড়ছে যে অনেক কৃষক আর মাটির পুষ্টি জোগাতে পারছেন না।’ সোমবার রাশিয়ার কয়লা এবং সারের রাজাখ্যাত আন্দ্রেই মেলনিচেঙ্কো বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের ব্যাপারে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে মিখাইল ফ্রাইডম্যান, পিইয়োত্র অ্যাভেন এবং ওলেগ দেরিপাসকাসহ রাশিয়ার কয়েকজন ধনকুবের ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে শান্তির আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ইউরোপীয় মিত্ররা পুতিনের আগ্রাসনকে সাম্রাজ্য-ধাঁচের ভূমি দখলের পদক্ষেপ হিসাবে অভিহিত করেছে। যা এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা যায়নি। কারণ ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ এবং রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে পশ্চিমাদের পদক্ষেপের ব্যাপারে যথাযথ পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি মস্কো।
মেলনিচেঙ্কোর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাসহ রুশ ব্যবসায়ীদের ওপর পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে রাশিয়ার করপোরেট খাতকে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপক প্রচেষ্টা দেখা গেছে। আর এসবের উদ্দেশ্য পুতিনকে যুদ্ধের পথ পরিবর্তনে বাধ্য করা।
যদিও পুতিন পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি চলমান যুদ্ধকে বিপজ্জনক জাতীয়তাবাদী ও নাৎসিদের হাত থেকে ইউক্রেনকে মুক্ত করার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে অভিহিত করেছেন।
রুশ নাগরিক ৫০ বছর বয়সী মেলনিচেঙ্কোর জন্ম বেলারুশে এবং তার মা একজন ইউক্রেনীয়। রয়টার্সের কাছে ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে মেলনিচেঙ্কোর মুখপাত্র বলেছেন, ‘ইউক্রেনের ঘটনায় সত্যিই মর্মান্তিক। আমাদের অবিলম্বে শান্তি দরকার।’
রাশিয়ার সবচেয়ে বড় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের উৎপাদক ইউরোচেম প্রতিষ্ঠা করেছেন মেলনিচেঙ্কো। তার এই প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ডের জুগ শহরে অবস্থিত। এছাড়াও রাশিয়ার শীর্ষ কয়লা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সুয়েকের (এসইউইকে) প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। রাশিয়ার এই ধনকুবের বলেন, ‘এই সংকটে অন্যতম ভোগান্তির শিকার হবে কৃষি এবং খাদ্য।’
রাশিয়ার আগ্রাসনে ইউক্রেনে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২০ লাখের বেশি মানুষ।
ইউক্রেন সংকটে বিশ্বের শীর্ষ দুই পারমাণবিক শক্তিধারী যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে বৃহৎ সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
খাদ্য যুদ্ধ?
বিশ্বে যত সার উৎপাদন হয় তার প্রায় ১৩ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। পশ্চিমারা যদি রাশিয়ার সারের রফতানি সমস্যা তৈরি করে তাহলে দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দামও বেড়ে যাবে বলে গত বৃহস্পতিবার সতর্ক করে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বিভিন্ন ধরনের প্রধান অর্থকরী ফসল এবং মাটির পুষ্টি— পটাশ, ফসফেট এবং নাইট্রোজেনযুক্ত সারের প্রধান উৎপাদনকারী রাশিয়া। নাইট্রোজেন, ফসফেট এবং পটাশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোচেম বলেছে, বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের একটি তারা।
মেলনিচেঙ্কো বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে সারের দাম আকাশ ছুতে শুরু করেছে; যা আর কৃষকদের সাধ্যের মধ্যে নেই। তিনি বলেছেন, করোনার কারণে ব্যাহত হওয়া খাদ্য সরবরাহ চেইন ইতোমধ্যে আরও বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে। রুশ এই ব্যবসায়ী বলেছেন, এখন এই সংকট ইউরোপে আরও বেশি খাদ্য মূল্যস্ফীতি এবং বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে সম্ভবত খাদ্য ঘাটতি তৈরি করবে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রণালয় দেশটির সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে রফতানি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
Leave a Reply