ইউক্রেনের মাকারিভ শহরে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে দেশটির সেনারা। রাজধানী কিয়েভ থেকে পশ্চিমের এই শহরে কয়েক দিন দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছিল।
রুশ সেনারা গতকাল মঙ্গলবার ২৬তম দিনের মতো ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে অভিযান অব্যাহত রাখে। গতকাল কিয়েভে পর পর কয়েকটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো যুদ্ধবন্দি বিনিময় করার কথা স্বীকার করেছে রাশিয়া। আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আবারও সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল ইতালির পার্লামেন্টেও ভাষণ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা বিবেচনা করছে। মস্কো এই কাজ করলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
ইউক্রেন বাহিনী দাবি করেছে, কিয়েভ থেকে ৩০ মাইল পশ্চিমের শহর মাকারিভ থেকে রুশ সেনাদের হটিয়ে সেখানে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুক পোস্টে এ দাবি করে। এতে বলা হয়, রুশ সেনাদের হটিয়ে দেওয়ার পর মাকারিভ শহরে ইউক্রেনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সিএনএন নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে ইউক্রেনের দাবির বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি।
মাকারিভে নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়ে রাশিয়ার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে রাশিয়ার বিমান হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাকারিভ শহর। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শহরটির ধ্বংসযজ্ঞের ছবি খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয় সিএনএন। আবাসিক ভবন, স্কুল, চিকিৎসাকেন্দ্র—রুশ হামলা থেকে কিছুই বাদ যায়নি। এদিকে দোনেত্স্ক অঞ্চলের আভদিভকা শহরে রাশিয়ার বিমান ও গোলা হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৯ জন। গত সোমবার দিবাগত রাতে ওই হামলা চালানো হয়।
১০ যুদ্ধবন্দি বিনিময় : ইউক্রেনের কাছে যুদ্ধবন্দি হিসেবে রাশিয়া তাদের ৯ জন নাগরিককে ফেরত এনেছে। প্রথমবারের মতো এ কথা স্বীকার করল রাশিয়া। দেশটির মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার তাতিয়ানা মোশকালকোভা গত সোমবার বলেন, প্রথমবারের মতো যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে রাশিয়ার ৯ জন নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইউক্রেনের মেলিতোপোল শহরের মেয়রকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ওই ৯ জনকে ছেড়ে দেয় ইউক্রেন বাহিনী। এই বন্দি বিনিময়ের খবর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের বরাত দিয়ে আগেই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। তবে রাশিয়া প্রথমবারের মতো বিষয়টি প্রকাশ করল।
জীবাণু অস্ত্র নিয়ে বাইডেনের সতর্কতা : মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত সোমবার বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে রাশিয়া ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিবেচনা করছে। কারণ এরই মধ্যে মস্কো বলেছে, ইউক্রেনের কাছে এ ধরনের অস্ত্র আছে। এটাই সুস্পষ্ট আভাস যে রাশিয়া এমন অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবছে।
বাইডেন রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেন, রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করলে এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
এদিকে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহেই ইউরোপ সফর করবেন তিনি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইউরোপে গেলেও ইউক্রেন সফরের পরিকল্পনা নেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
সরাসরি আলোচনার আহ্বান : প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আবারও সরাসরি আলোচনায় বাসার আহ্বান জানিয়ে গত সোমবার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আলোচনার টেবিলে আসুন। সেখানে সব বিষয় থাকবে। সেখানে ক্রিমিয়া ও দনবাস প্রসঙ্গও থাকবে। যুদ্ধ বন্ধ করতে আলোচনা প্রয়োজন। একই সঙ্গে জেলেনস্কি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়া আত্মসমর্পণ করার আগে পুরো ইউক্রেনকে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করবে। ’
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দুই পক্ষের শান্তি আলোচনা প্রসঙ্গে বলছেন, আলোচনা চলছে। তবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনা আরো সক্রিয় ও গঠনমূলক হতে হবে। এদিকে গতকাল ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ইতালির পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর অবরোধ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি, সিএনএন ও তাস
Leave a Reply