বিদ্রোহ ও বিদ্রোহের প্ররোচনা এবং ষড়যন্ত্রের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নতুন ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২২’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান আনসার আইন ১৯৯৫ সালের। সময়ের সঙ্গে তাল মিলাতে সংশোধন করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা দেখলেন অনেক বেশি পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় সংশোধন না করে নতুন করে আনসার ব্যাটালিয়ন আইন প্রণয়ন করার। তা ছাড়া কোনো আইনের ২৫ শতাংশের বেশি সংশোধন করতে হলে সে আইন সংশোধন না করে নতুন করে করার নীতি রয়েছে সরকারের।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আনসার ব্যাটালিয়নে একজন মহাপরিচালক থাকবেন, তিনি সরকারের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে ব্যাটালিয়ন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করবেন। মহাপরিচালক এ আইনের অধীনে করা বিধি-বিধান এবং সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করবেন। সরকার আনসার ব্যাটালিয়নের সাংগঠনিক কাঠামো, পদ, নিয়োগ ও চাকরির শর্ত নির্ধারণ করবে।
খসড়া আইন অনুযায়ী ব্যাটালিয়নের কোনো সদস্য কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না। অনুমতি ছাড়া কোনো আনসার সদস্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা কোনো সংবাদপত্র বা কোথাও কোনো তথ্য প্রকাশ থাকতে পারবেন না।
সরকারি কর্মচারীদের মতো তাদেরও শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী লঘু ও গুরুদণ্ড থাকবে। বিভাগীয় মামলায় আরোপিত গুরুদণ্ডের বিষয়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের কাছে ও লঘুদণ্ডের বিরুদ্ধে মহাপরিচালকের কাছে আপিল করা যাবে।
ব্যাটালিয়নে কোনো সদস্যের অপরাধের জন্য বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দুটি আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত থাকবে। একটা সংক্ষিপ্ত ব্যাটালিয়ন আদালত, আরেকটা বিশেষ আনসার আদালত।
বর্তমানে কোনো আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত নেই জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অসদাচরণের জন্য আমাদের যেমন রুল আছে, তাদেরও থাকবে। ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিং হবে।’
তিনি আরো জানান, বাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ, পোশাক, যন্ত্রাংশ ও যানবাহনের অংশ ইত্যাদি পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করা ও এ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সংক্ষিপ্ত ব্যাটালিয়ন আদালতে সর্বোচ্চ তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। অন্যান্য সাধারণ মাপের অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। আর যদি বিদ্রোহের চেষ্টা করে বা প্ররোচনা দেন বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন–এ জাতীয় হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা কমপক্ষে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ বিচার হবে বিশেষ আনসার আদালতে।
আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত যে রায় দেবে সেই বিষয়ে আনসার ব্যাটালিয়ন আপিল ট্রাইব্যুনালে গিয়ে আপিল করা যাবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো জানান, মহাপরিচালক সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আদালত গঠন করবেন। সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন, আইন ও বিচার বিভাগের একজন এবং আনসার ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত গঠন করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ আদালত গঠন করবে।
Leave a Reply