1. admin@thedailypadma.com : admin :
ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে "মাটির বিস্কুট" এখনো আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশে খেয়ে থাকে; বাংলাদেশেও খাওয়া হতো এক সময় - দ্য ডেইলি পদ্মা
শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
আসিফ নজরুলকে হেনস্তা, দেশ ও জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচণ্ড আঘাত সালমান খানের পর এবার বলিউড বাদশা শাহরুখ খানকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীত অনুভূত হতে পারে সাধারণ ভোক্তারা চড়া মূল্যস্ফীতির যন্ত্রণায় ভুগছেন ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড ও লেবাননজুড়ে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল, শতাধিক নিহত সুইজারল্যান্ডে আ.লীগ কর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজকের নামাজের সময়সূচি ৮ নভেম্বর আজকে কোন টিভি চ্যানেলে কোন খেলা

ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে “মাটির বিস্কুট” এখনো আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশে খেয়ে থাকে; বাংলাদেশেও খাওয়া হতো এক সময়

  • Update Time : শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২
  • ২২৮ Time View

মাটির বিস্কুট এখনো আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশে খেয়ে থাকে। তবে ৭০-৯০ এর দশকে বাংলাদেশের মানুষও ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে মাটির বিস্কুট খেত। বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিই।

যেখানে সেখানে খাবার ফেলে দেই আমরা। কত খাবার নষ্ট করি। কখনো এই রেস্টুরেন্টে আবার কখনো ওই রেস্টুরেন্টে ঢুঁ মারি। পছন্দসই না হলে অর্ধেক খাবার ফেলে রেখেই চলে আসি। আর কেই কেই এসব নষ্ট খাবার পর্যন্ত খেতে পায় না।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, প্রতি বছর আনুমানিক ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন খাবারযোগ্য খাদ্য নষ্ট হয়, যার মূল্য ৭৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সমতুল্য! অথচ একই গ্রহ, পৃথিবীতেই এমন কিছু দেশ আছে, যেখানে মানুষজন না খেতে পেয়ে ক্ষুধা নিবারনের জন্য মাটির বিস্কুট বানিয়ে খাচ্ছে।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের কথা আক্ষরিক অর্থেই ফলে যায় সেখানে, ক্ষুধার রাজ্যে পূর্নিমার চাঁদকে সত্যিই ঝলসানো রুটি মনে হয় তাদের৷ অঞ্চলটির নাম হাইতি। কিউবার পূর্বদিকে হিসপ্যানিওলা নামক দ্বীপে এই দেশটির অবস্থান। ২৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট দেশটির জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি দশ লাখ।

ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশী জনসংখ্যাপূর্ণ এই দেশটির মানুষগুলোর মাথাপিছু আয় এতটাই কম যে, প্রতিদিনকার জন্য তাদের জনপ্রতি বাজেট দুই ডলারেরও কম! এই বাজেটের মধ্যে আদর্শ খাদ্য কেনার কথা ভাবতেই পারেন না তারা। তাই ক্ষুধা নিবারণের জন্য তারা বেছে নিয়েছেন এক ‘অভিনব’ পন্থা।

মাটি, আবর্জনা, লবণ আর তেল দিয়ে হাইতিয়ান নারীরা এক ধরনের বিস্কুট বানান। যা খেয়েই পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে হাইতির বাচ্চারা। সত্যিকার অর্থে ভীষণ খুশিও থাকে তারা এই বিস্কুট খেয়ে! পরিবারের দাদী-নানী থেকে শুরু করে একদম ছোট্ট মেয়েটিকেও লাগিয়ে দেয়া হয় বিস্কুট বানানোর কাজে।

খাবারের সময় বাচ্চারা অনেক সময় পুরো খাবারটুকু শেষ করতে চায় না। মায়েরা তখন তাদের বলে থাকেন- মানুষ খাবার পায় না, আর তোরা খাবার নষ্ট করিস! জেনে হোক বা না জেনে, তারা যে কথাটি বলে থাকেন, সত্যিই বলেন। হাইতিয়ান নারীরা স্থানীয় বাজার থেকে মাটি কিনে আনে।

সেই মাটির সঙ্গে তারা সবজী তেল, লবণ এবং ময়লা-আবর্জনা মিক্স করে। মিশ্রণটি এরপর তারা ছোট ছোট বিস্কুটের আকৃতি বানায় এবং রোদে শুকোতে দেয়। হাইতিয়ান ডাক্তাররা সতর্ক করেছে, দীর্ঘ সময়ের জন্য এই বিস্কুট খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে অপুষ্টিতে মারা যেতে পারে মানুষ।

আমরা কত খাবারই না নষ্ট করে থাকি। আপনি কি এরকম গরীব আর ক্ষুধার্ত কল্পনা করতে পারেন নিজেকে? যেখানে খাবার কিছু না পেয়ে মাটির বিস্কুট খেতে হচ্ছে আপনাকে?

বাংলাদেশেও মাটির বিস্কুট খাওয়া হতো এক সময়:

এই বিখ্যাত পোড়ামাটির বিস্কুট তৈরি হত হবিগঞ্জসহ সিলেট এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে। তবে এই বিস্কুট খাওয়া হত ব্রাক্ষণবাড়িয়া সহ সিলেট অঞ্চলে।

এসব অঞ্চলে এই বিস্কুট কে ডাকা হয় ছিকর বিস্কুট নামে। ছিকর, শব্দটি এসেছে ফারসি শব্দ ছিয়াকর থেকে। যার বাংলা করলে দাড়ায়, কালো মাটি। সিলেট অঞ্চলের মানুষের ধারণা ছিল, গর্ভবতী নারীদের কাছে ছিকর অতি পছন্দের খাবার ছিল। এটি খেলে নাকি রোগ-বালাই হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। সেইসঙ্গে পেটের বাচ্চা সুস্থ থাকবে। যদিও এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা প্রমাণ আছে কিনা তা জানা যায়নি।

অনেকের মতে, শুধু ক্ষুধা নিবারণের জন্যই নয় বরং এক ধরনের অভ্যাসের বশেই লোকজন ছিকর খেত। ছিকর শব্দটি এসেছে ফারসি থেকে। ছিয়া অর্থ কালো, আর কর মানে মাটি। ছিয়াকর শব্দটিই পরে ছিকর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এঁটেল মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই বিস্কুট।

জানা যায়, যেকোনো এঁটেল মাটি দিয়েই কিন্তু তৈরি করা যায় না ছিকর। এর জন্য প্রয়োজন হয় পাহাড়ি টিলার তলদেশের এঁটেল মাটি। এজন্য ছিকর প্রস্তুত করতে প্রথমে পাহাড়ি টিলায় গর্ত খুঁড়ে লম্বা বাঁশের সাহায্যে গভীর থেকে এক ধরনের মিহি মাটি সংগ্রহ হত। তারপর তা মাখিয়ে খাই বানিয়ে ছাঁচে ফেলে প্রথমে তৈরি করা হতো মন্ড। তারপর তা পছন্দ মত কেটে টুকরো করা হত।

পরে বিশেষ এক পদ্ধতিতে সেই টুকরো আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হতো ছিকর। ছিকর বিভিন্ন আকৃতির করে তৈরি করা হত। কোনোটি দেখতে বিস্কুটের মতো আবার কোনোটি ললিপপের মতো লম্বা ছিল।

বিভিন্ন এলাকার ছিকর বিভিন্ন স্বাদের ছিল। কোনো এলাকার ছিকরে খাই মাখানোর সময় গোলাপজল, আদার রস ইত্যাদি মেশানো হত। যা মাটির সঙ্গে পোড়ানোর পর ভিন্ন এক স্বাদ হত। বর্তমান সময়ে এই ছিকর বিস্কুট বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ইতিহাস মতে, মৌলভীবাজারে পাহাড়ি এলাকার হিন্দু সম্পদায়ের নারীরা এসব ছিকর তৈরি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করতেন। আবার স্থানীয় কুমার সম্প্রদায় বা মৃৎশিল্পীরাও ছিকর তৈরি করে বাজারজাত করতেন। বর্তমানে ছিকরের কদর কমে যাওয়ায় তারাও পেশা পরিবর্তন করেছেন।

তবে আজও দেশের বেশ কিছু এলাকায় প্রচলিত আছে ছিকর। তবে কমেছে তার জনপ্রিয়তা। বর্তমানে অনেকেই শখের বশে এই মাটির বিস্কুট খেয়ে থাকেন। অনেক দেশি পণ্যের উদ্যোক্তারাও এখন অনলাইনে বিক্রি করে থাকেন ছিকর।

মাটির এই বিস্কুট এক সময় মানুষের পেট ভরালেও, এখন এর বিকল্প হিসেবে অনেক খাবার আছে। ফলে এক প্রকার প্রায় অবলুপ্তির পথেই হাঁটছে ছিকরশিল্প। তবে মৃতপ্রায় হলেও এই শিল্প আজও মনে করিয়ে দেয় অতীতের অন্ধকার সময়কে!

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
স্বপ্নপূরণের ক্ষণগণনা
অপেক্ষা উদ্বোধনের
দিন
ঘন্টা
মিনিট
সেকেন্ড
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Customized By BreakingNews