চৈত্রের এখন মধ্য বয়স। দরজায় কড়া নাড়ছে বৈশাখ। পুরনো গ্লানি ও জরাজীর্ণতা ধুয়ে মুছে সমৃদ্ধি ও সফলতার পথে এগিয়ে যাবার দিন। আর বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বরাবরের মতো রমনার বটমূলে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট।
‘নবীন আশা জাগ্ল যে রে আজ/ নূতন রঙে রাঙা তোদের সাজ’ স্লোগানে রাগালাপের মধ্য দিয়ে সকাল ছয়টায় রমনার বটমূলে শুরু হবে ছায়ানটের বাংলা নব বর্ষবরণের এবারের আয়োজন। এবারের প্রতিপাদ্য ‘নব আনন্দে জাগো’। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ছয়টা থেকে রমনার বটমূলে রাগালাপ ও সঙ্গীতে শুরু হবে ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। করোনা মহামারীর কারনে গত দুবছর স্বল্প পরিসরে অনলাইনে আয়োজন করে। এ বছরে ছায়ানটের বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ‘নব আনন্দে জাগো’।
শনিবার (২ এপ্রিল) বিকালে ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন, নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী, সহ সভাপতি আতিউর রহমান, সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল ও সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন লাইসা আহমদ লিসা।
লাইসা আহমদ লিসা বলেন, মানবসমাজ আজ বৈশ্বিক মহামারী কোভিড উনিশের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আলোর পথের অভিযাত্রী। সরকারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় দেশে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে ক্রমান্বয় পরিত্রাণ ঘটে চলেছে। তারই সমুজ্জ্বল প্রতিফলন এবারের অমর একুশের গ্রন্থমেলার সফল আয়োজন। আগের স্বস্তিতে ফিরবার প্রবল আকাঙ্খা পদে পদে জয়ী করে তুলছে মানুষকে। পাশাপাশি মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠছে নতুন স্বাভাবিক পরিবেশে। আগ্রাসী করোনাকে দমাতে প্রায় দুবছর আমরা গৃহবন্দি ছিলাম। এক বাস্তবিক মানবিক সামাজিক মানসিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়কাল। সব শেকল ভেঙে বিশ্বজুড়েই আজ নব আনন্দে জেগে উঠবার আহ্বান। তার ভেতর আমাদের মূল প্রেরণা হয়ে উঠেছে বাঙালির প্রাণের বইমেলা আয়োজনে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। অনুপ্রাণিত ছায়ানট নবোদ্যমে রমনার বটমূলে বাংলার নববর্ষকে আবাহন জানানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে।
করোনাকালে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এবং রাষ্ট্রীয় বিধান মান্য করে ছায়ানট দুবছর বর্ষবরণের অনুষ্ঠান স্বল্প পরিসরে অনলাইনে আয়োজন করেছে। এমন কি মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিককে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সাজানোর সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হই, শ্রদ্ধা জানিয়েছি কেবল অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাঙালির অস্তিত্ব নিয়ে পাকিস্তানের চোখ রাঙানির মধ্যে ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের আয়োজন শুরু হবার পর, এর আগে কেবল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েই তাতে ছেদ পড়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের নির্দেশ দিয়ে বাংলা সুরবাণীতে বঙ্গাব্দের প্রথম সূর্যোদয়- ক্ষণে ছায়ানট আয়োজিত এই বর্ষবরণ উৎসবকে প্রথম জাতীয় মর্যাদা দেন বঙ্গবন্ধু। যে মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারও। বাংলা বর্ষববরণ এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িলো, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্ববাঙালির প্রধান প্রাণের উৎসব, বাঙালি ঐতিহ্যের অঙ্গ। আমাদের প্রত্যাশা, বটমূলে অর্ধ শতাধিক বছরের এই উৎসবের ধারায় বাঙলির প্রত্যাবর্তন হবে সংযমী- প্রাণবন্ত আনন্দঘন এবং বিপর্যয় বিনাশের অঙ্গীকারে বলীয়ান।
ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন বলেন, গত দুবছর আমাদের মনের ভেতর অনেক বেদনা গেছে। মহামারীর ভয়াবহতা সবকিছু সঙ্কুচিত করে রেখেছে। পহেলা বৈশাখ আমরা সেভাবে করতে পারেনি। এবার যখন করতে পারলাম তখন আমাদের মনে আনন্দ অশেষ। ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পহেলা বৈশাখ আয়োজন করে আসছে। ১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধ এবং গেল দুইবছর আয়োজন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমরা পহেলা বৈশাখ আয়োজন করে সত্যিকার বাঙালি হতে পেরেছি। পহেলা বৈশাখে নানা উল্টোপাল্টা নাচও হয় যা আমাদের সংস্কৃতি নয়। পহেলা বৈশাখে পরিবারসহ সবাই নতুন কাপড় পরে ভালো কিছু খায়। গত দুবছর বর্ষবরণ আয়োজন করতে পারেনি এ বছর অনেক আগে সংবাদ সম্মেলন যেন সরকার ও দেশের মানুষ প্রস্তুতি নিতে পারে।
রমজান মাসে সকল নিয়ম ও ধর্মীয় রীতি মেনে পহেলা বৈশাখ পালন করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন এর আগেও রমজানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়েছে। সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে কোন বিরোধ নেই।
ডা. সারোয়ার আলী বলেন, সারা পৃথিবীতে যে প্রলয় ঘটে গেল সেখানে বাংলাদেশ অনেক সাহসীভাবে দাঁড়িয়ে আছে। পহেলা বৈশাখে এরই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠবে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, পহেলা বৈশাখে লক্ষ লক্ষ কর্মজীবী মানুষ এবং মধ্যবয়সীরা নতুন কাপড় পড়ে বর্ষবরণ করবে। বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছেন আলোর পথের যাত্রী, ছায়ানট সেরকম আলোর মশাল তুলে ধরবে
Leave a Reply