ঢাকার বয়স ৪০০ বছরের বেশি হলে ঢাকার ইফতারির ইতিহাসটাও চার শতাব্দীর। সেই আদিকালে ইফতার করাকে বলা হতো ‘রোজা খোলাই’। এখনো পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় রোজা খোলাই শব্দটির প্রচলন রয়েছে। রোজা খোলাই শব্দটি পাঠকের কাছে নতুন মনে হতে পারে, কিন্তু রমজান মাসে পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দারা এই শব্দটির ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিল বা বলা যায় কিছু কিছু এলাকায় এখনো আছে। রোজা খোলাই অর্থ ইফতার করা। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে রোজা খোলাই শুরু হলেও এর জন্য আয়োজন শুরু হয়ে যেত সাত সকালে। ইফতারি বানানোর রেওয়াজ পুরান ঢাকার প্রতি ঘরে ঘরে। তারপরও পুরান ঢাকার ইতিহাস বলে, ঢাকাইয়ারা সব সময় বাইরের খাবারে আকর্ষণ বোধ করে। সে কারণেই বাইরের ইফতারির টান সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে।
৪০০ বছরের পুরাতন বাজার চকবাজারই ছিল ঢাকার প্রধান বাজার। সে সময় চকবাজার বাদশাহি বাজার নামে পরিচিত ছিল। চকবাজারের মতো না হলেও রায়সাহেব বাজার নাজিরাবাজার পুরান ঢাকার নামকরা বাজারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। দিনে দিনে ঢাকা শহরটাই হয়ে গেছে ইফতারির বাজার। তারপরও ইতিহাস ও স্বাদের কথা বললে পুরান ঢাকার কথাই প্রথমে চলে আসে। আর পুরান ঢাকা মানেই বাদশাহি চকবাজার, রায়সাহেব বাজার ও নাজিরাবাজার। ২৮ মে ছিল রমজানের প্রথম দিন। মাসজুড়ে এই আদি জনপদে ইফতারির মেলা চলবে—আক্ষরিক অর্থে না, বাস্তবিক মেলা। সেই মেলায় আপনিও শামিল হতে পারেন, ভালো লাগা ষোল আনা!
বিগত বছরের ঐতিহ্য বজায় রেখে চকবাজারের ইফতারিপাড়া এবারও সেজেছে রকমারি ইফতারির সাজে। চকবাজার ইফতারিপাড়া মোঘল ঐতিহ্যের ধারক। এখানকার ইফতারির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আস্ত মুরগির কাবাব, মোরগ মুসাল্লম, বটিকাবাব, টিকাকাবাব, কোফ্তা, চিকেন কাঠি, শামিকাবাব, শিকের ভারী কাবাব, সুতিকাবাব, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, জিলাপি, শাহি জিলাপি, নিমকপারা, সমুচা, আলাউদ্দিনের হালুয়া, হালিম, দইবড়া, সৌদি পানীয় লাবাং, কাশ্মীরি সরবত, ইসবগুলের ভুসি, পুরি এবং ৩৬ উপকরণের মজাদার ‘খাবার বড়বাপের পোলারা খায়’সহ কতনা পদ।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাহারি ইফতারের মধ্যে গরুর সুতি কাবাব কেজি প্রতি ১২০০ টাকা, খাসির সুতি কাবাব ১৪০০, কোয়েল পাখির রোস্ট ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস, বড় বাপের পোলায় খায় ৬০০ টাকা কেজি, ছোলা-ঘুঘনি ২৮০ টাকা কেজি, পেশতা রুটি ৭০ টাকা পিস, শাহী পরটা ৩০ থেক ৬০ টাকা, আস্ত মুরগির রোস্ট ৩৫০, ফালুদা ছোট বক্স ১০০, বড় বক্স ২০০, দইবড়া ২০০ থেকে ৪৪০ টাকা কেজি, রেশমি জিলাপি ৩০০ টাকা, সাধারণ জিলাপি ২০০ টাকা কেজি।
ইফতার কিনতে আসা করিম চৌধুরীর বলেন, পুরান ঢাকার প্রতি ঘরে ঘরেই রমজানে ইফতারি বানানোর রেওয়াজ আছে। তারপরও পুরান ঢাকার বাসিন্দারা সবসময় বাইরের খাবারের প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করে। বাহারি ইফতারির টান সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে পুরান ঢাকাইয়াদের মধ্যে। তবে এবারে ইফতারে দামটা একটু বেশি। তবে ব্যবসায়ীদের মতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়ার কারণেই বেড়েছে ইফতার সামগ্রীর দাম। চকবাজারের পাশাপাশি সদরঘাট, বাবুবাজার, নবাবপুর রোড, কোর্ট-কাচারি এলাকা, ওয়ারি, চানখাঁরপুল, মিটফোর্ড, আরমানীটোলাসহ অন্যান্য প্রায় সকল এলাকায় রমজান মাসে ইফতারির সমারোহ লক্ষ্য করা যায়।
চকবাজারের ইফতারিপাড়ায় রমজানের প্রথম দিন পা দিয়ে দেখা গেল এসব মুখরোচক খাবারের হাঁকডাক আর ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এর মধ্যে চারদিকে ‘বড় বাপের পোলারা খায়, ধনি-গরিব সবাই খায়, মজা পাইয়া লইয়া যায়’-এর হাঁকডাকে চিরচেনা চকবাজারের চেহারা দুপুরের পর থেকেই পাল্টাতে থাকে। তা ছাড়া পুরান ঢাকার বংশালের আল রাজ্জাক রেস্টুরেন্ট, আল-নাসের, রায়সাহেব বাজারের ক্যাফে ইউসুফ, আল-ইসলাস, মতিঝিল ঘরোয়া স্টার তাদের মানসম্মত খাবারের সম্ভার সাজিয়েছে ইফতারের প্রথম দিন থেকেই।
<p>সম্পাদক: মো:রোকন উদ্দিন রুমন </p><p>লেখক: আবদুল্লাহ যায়েদ তানজিন </p><p>উপদেষ্টা: মো: মোশাররফ হোসেন </p><p>thedailypadma@gmail.com<br></p><p> বার্তা কার্যালয়: দক্ষিন কমলাপুর,ফরিদপুর সদর, ফরিদপুর। </p><p>মোবাইল:০১৭১১১৪৮৯৫১, ০১৯১১৩০৩২২৯ ইমেইল: thepadma24@gmail.com<br></p>
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।