রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী। তবে ঈদে এ দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বাড়বে। মূলত ঘাট সংকট, ফেরি স্বল্পতা, নদীর নাব্যতা সংকটের সমাধান না হলে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ঘরমুখো মানুষ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহার করে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যান। কিন্তু যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, ফেরি সংকট ও নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে এক মাস ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটের উভয় ঘাটেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি লেগে থাকছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলোর মধ্যে যাত্রীবাহী বাসকে ফেরির নাগাল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের খোলা আকাশের নিচে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন।
দৌলতদিয়া ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া। এ নৌরুটে গড়ে প্রতিদিন ছোট-বড় ১৮ থেকে ২০টি ফেরি দিয়ে চার থেকে পাঁচ হাজার যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। এছাড়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ৩০টির মতো লঞ্চ চলাচল করে থাকে।যেখানে প্রতিদিন ৪০-৫০ হাজার যাত্রী নদী পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়। ঈদকে ঘিরে এ রুটে যানবাহন ও যাত্রী কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের অর্ধক অংশ পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তাণ্ডবে লঞ্চে ওঠানামার একমাত্র কাঠের ব্রিজটিও বিকল হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে কোনো রকম লঞ্চঘাটটি সচল করে রাখে।
দৌলতদিয়ার কয়েকটি ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়ায় সাতটি ফেরিঘাট রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ঘাট সচল রয়েছে। ১ ও ২ নং ঘাট উদ্বোধনের পর থেকেই প্রায় পাঁচ বছর ধরে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনের শিকার হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের অক্টোবরে নদীভাঙনে দৌলতদিয়ার ১ ও ২ নম্বর ঘাট বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া গত বর্ষা মৌসুমের পর থেকে ৬ নং ফেরিঘাটও বিকল হয়ে পড়ে আছে। অবশিষ্ট ৩, ৪, ৫ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে।
বর্তমানে পদ্মা নদীর পানির গভীরতা নিচে নেমে যাওয়ায় ফেরি থেকে ভারী যানবাহন ওঠানামা করতে অনেক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে সংযোগ সড়কে অনেক যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে থাকে। এছাড়া নদীর কয়েকটি চ্যানেলে চর পড়ে যাওয়ায় উভয় ঘাটেই ফেরি ভিড়তে স্বাভাবিকের থেকেও দ্বিগুণ সময় লাগছে। এতে করে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ভোগান্তির আরও একটি কারণ ফেরি স্বল্পতা। যানবাহন ও যাত্রী পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় মিলে ২৩টি ফেরি থাকলেও বর্তমানে ১৭টি ফেরি সচল রয়েছে। এসব ফেরিতে ২৪ ঘণ্টায় ৪-৫ হাজার গাড়ি পারাপার হয়। কিন্তু বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুট স্বাভাবিক না হওয়াতে এই রুটে গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার গাড়ি বেড়েছে। ফলে যানবাহনের তুলনায় ফেরি সংখ্যা কম থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে।
Leave a Reply