এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামায়াতের আয়োজন করা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত দুই বছর শোলাকিয়ায় ঈদ-জামাতের আয়োজন করা হয়নি। এ কারণে এ ঈদগাহের ইতিহাসে গত দুই বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার জামাতবঞ্চিত থাকে শোলাকিয়া।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবারের ঈদে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুই বছর এখানে ঈদ জামাত না হওয়ায় এবার মুসল্লির সংখ্যা বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে এবারের ঈদ জামাতকে ঘিরে আরো সুচারু ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
দফায় দফায় পুলিশ ও সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও সদস্যরা ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করছেন। পুরো মাঠকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য বাইনোকুলার ছাড়াও ৪টি ড্রোন উড়বে শোলাকিয়ায়। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয়েছে এক্সিট ও এন্ট্রি পয়েন্ট। এছাড়া নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় রেখে ছাতা ও মোবাইল ফোন নিয়ে ঈদগাহ মাঠে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
মাঠে কেবল জায়নামাজ নিয়ে প্রবেশ করা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য মাস্ক পরতে হবে
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাঠ ও মাঠের আশপাশ এলাকায় ড্রোনে পর্যবেক্ষণ ছাড়াও ঈদগাহ ময়দানের বাইরে, ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান, আশেপাশের এলাকা এবং অলিগলিসহ মাঠ সংলগ্ন চারপাশের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আসা হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় আওতায়।
মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ৬টি ওয়াচ টাওয়ার। এর ৪টিতে পুলিশ ও দুইটিতে র্যাব সদস্যরা অবস্থান নিয়ে ঈদ জামাতের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা তদারকি করবেন।
এরইমধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহর এবং আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, আরআরএফসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় হাজারেরও বেশি সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হচ্ছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে।
ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশ পথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হবে। এর আগে অন্তত তিন দফা মেটাল ডিটেক্টরে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদগাহে আগত মুসল্লিদের কেবল জায়নামাজ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেয়া হবে না।
পুলিশ সুপার মো: মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ-জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ৪ স্তরের নিরাপত্তার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মাঠের ভেতর-বাইরে পোশাক ও সাদা পোশাকে আগের চেয়েও বেশিসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। সার্বিক প্রস্তুতির বিবেচনায় নির্বিঘ্নে শোলাকিয়ায় মুসল্লিরা ঈদুল ফিতরের ১৯৫তম জামাত আদায় করতে পারবেন বলে পুলিশ সুপার আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে পুলিশের নিয়মিত সদস্যদের পাশাপাশি পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে মোতায়েন করা হবে বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্য। অন্যদিকে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবারো ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। ভৈরব বাজার-ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ-ভৈরব বাজার রুটে বিশেষ ট্রেন দুটি চলাচল করবে।
বিশেষ ট্রেনের একটি ঈদের দিন সকাল ৬টায় ভৈরববাজার থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছুবে। জামাত শেষে ট্রেনটি দুপুর ১২টায় পুনরায় ভৈরববাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং বেলা ২টায় ভৈরববাজার পৌঁছুবে। অপর ট্রেনটি ঈদের দিন সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছুবে।
জামাত শেষে দুপুর ১২টায় এটিও কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে এবং ময়মনসিংহ পৌঁছবে বেলা ৩টায়।
Leave a Reply