
অর্থবছরের ১০ মাসেই রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। বাকি দুই মাসেও (মে ও জুন) এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে এবার রপ্তানি আয় ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ। মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও রপ্তানি আয়ে এই উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এতে খুশি রপ্তানিকারকরা।
সোমবার (৯ মে) প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের দশম মাস এপ্রিলে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৭৩ কোটি ৮৭ লাখ (চার দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি মুদ্রা এনেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা; যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর অর্থবছরের হিসাবে ১০ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল) চেয়েও ১২ শতাংশ বেশি।
একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এপ্রিল মাসের এই আয় চতুর্থ সর্বোচ্চ; সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (চার দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি তিন লাখ ৭০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। মার্চে এসেছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (চার দশমিক ২৯ বিলিয়ন) ডলার। এপ্রিল মাসে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৩৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত বছরের এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। ১০ মাসের হিসাবে সার্বিক রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ। জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ৩৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের এই ১০ মাসে আয় হয়েছিল ৩২ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলার। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে মোট আয় হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাত থেকে আয় বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন-রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরু হয়। তিন মাস পার হলেও যুদ্ধ থামেনি। যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে জ্বালানির দাম। জাহাজভাড়াসহ বিশ্ববাণিজ্যে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানিখাতে যুদ্ধের প্রভাবে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হলেও তা হয়নি। ইপিবির পরিসংখ্যান বলছে, রপ্তানিতে পোশাকের আধিপত্য বজায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে তিন হাজার ৫৩৬ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই আয় ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল এ ১০ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ, কৃষিপণ্যে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, ম্যানুফ্যাকচার পণ্যে ৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ, কেমিক্যাল ও ফার্মাসিটিক্যাল পণ্যে ৪৫ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এছাড়া চামড়াজাত পণ্যে ৩২ দশমিক ৯৭, কুটির শিল্পে ৩০ দশমিক ২৪ শতাংশ, সিরামিক পণ্যে ৩৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে, গত কয়েক মাসের মতো রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে পাটখাতের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ছয় দশমিক ৬৮ শতাংশ পিছিয়ে আছে। পাট ও পাটজাত পণ্যখাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।
Leave a Reply