পূর্ব ইউক্রেনের সেভেরোদোনেস্ক শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখলের জন্য তীব্র যুদ্ধ চলছে, শহরটির ৭০ শতাংশ এলাকাই এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, তারা ইতোমধ্যেই শহরটির কেন্দ্রস্থল থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের তাড়িয়ে দিয়েছে।
শহরটির চারদিকেই খণ্ডযুদ্ধ চলছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে দোনেস্কের একজন রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সামরিক নেতা অ্যাডওয়ার্ড বাসুরিন বলেন, সেভেরোদোনেস্কে যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা আছে, তাদের সামনে বিকল্প হচ্ছে ‘হয় আত্মসমর্পণ নয় মৃত্যু’।
রোববার রুশরা সেভেরোদোনেস্ক ও লিসিচানস্ক শহরের মধ্যে সংযোগকারী তিনটি সেতুর দুটিই উড়িয়ে দেয়। এখন তৃতীয় সেতুটি ধ্বংস করার জন্য রুশরা প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। সেটা করতে পারলে সেভেরোদোনেস্ক ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
তবে রুশপন্থী মিলিশিয়া নেতা বাসুরিন দাবি করেছেন যে, তৃতীয় সেতুটিও এরই মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেটি নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
সেভেরোদোনেস্কের গভর্নর বলেছেন, সম্ভবত আজ বা আগামীকালের মধ্যেই রুশরা পুরো শহরটি দখল করার চেষ্টা করবে। শহরটির কেন্দ্রস্থল থেকে ইউক্রেনের সৈন্যদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে তাদের অবস্থানগুলোর ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হয়।
লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলছেন, সেভেরোদোনেস্কের ৭০ শতাংশ এলাকাই এখন রুশ নিয়ন্ত্রণে।
তিনি আরো জানান, বিশেষ করে শহরের আজোট নামের একটি রাসায়নিক শিল্প কারখানার ওপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে, যেখানে প্রায় ৫০০ বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জন শিশু রয়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের কারণে তাদের উদ্ধারের কোনো চেষ্টা করা যাচ্ছে না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তার বাহিনী প্রতি মিটার মাটির জন্য লড়াই করে যাবে। তিনি আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বঘোষিত দোনেস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের একজন সামরিক প্রতিনিধি অ্যাডওয়ার্ড বাসুরিন বলেছেন, সেভেরোদোনেস্কে যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা আছে তাদের অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়ত মরতে হবে।
মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ইউক্রেনের সৈন্যরা এ শহর থেকে বের হতে পারবে না, কারণ সবশেষ সেতুটিও এর মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
তৃতীয় সেতুটি ধ্বংসের এই দাবির ব্যাপারে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের দিক থেকেও বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই শহরটিকে দখল করার ওপর রাশিয়া খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে কারণ সেভেরোদোনেস্ক এবং এর সংলগ্ন আরেকটি শহর লিসিচানস্ক মিলে পুরো জায়গাটি হচ্ছে শিল্পকারখানাসমৃদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র।
এই দুই জোড়া শহর দখল করতে পারলে রাশিয়ার হাতে লুহানস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। এই অঞ্চলের কিছু অংশ ইতোমধ্যেই রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
এই লুহানস্ক এবং পাশের দোনেস্ক, যা দক্ষিণ ইউক্রেনের মারিউপোল থেকে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত, এসব মিলেই হচ্ছে ডনবাস অঞ্চল, যা রাশিয়া তাদের ভাষায় মুক্ত করতে চায়। এটি হচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের শীর্ষ অগ্রাধিকার।
এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে, ডনবাসে রাশিয়া যদি সাফল্য পায়, তাহলে মস্কো পুরো এলাকাটিকেই এক সময় নিজের অংশ করে নেবে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা দোনেস্ক অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সরঞ্জামের মজুদ ধ্বংস করে দিয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে কিছু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পাঠানো অস্ত্রও আছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উডাশনে রেল স্টেশনের কাছে ইউক্রেনের বাহিনীকে পাঠানো সামরিক সরঞ্জামের ওপর বিমান থেকে ছোড়া নির্ভুল টার্গেটের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানা হয়।
এটা সঠিক হলে তা হবে ইউক্রেনের বাহিনীর জন্য এক বড় আঘাত। ইউক্রেন ইতোমধ্যেই পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আরো অস্ত্র চেয়েছে।
সেভেরোদোনেস্ক শহরটি বেশ কিছুদিন ধরেই রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছিল। সেভেরোদোনেস্ক ও লিসিচানস্ক এই দুটি শহর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিভারস্কি ডোনেটস নদীর দুই পারে অবস্থিত। এ নদীর ওপর তিনটি সেতু আছে।
গত রোববার রুশরা তিনটি সেতুর দুটিই উড়িয়ে দেয়। এখন তাদের লক্ষ্য হচ্ছে তৃতীয় সেতুটি ধ্বংস করা। সেটা করতে পারলে সেভেরোদোনেস্ক ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
যুদ্ধের আগে শহরটির জনসংখ্যা ছিল এক লাখ। এর মধ্যে মাত্র ১৫ হাজারের মতো লোক এখনো শহরে বাস করছে।
শহরটিতে যেভাবে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে এবং রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ হচ্ছে তাতে এই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া কার্যত অসম্ভব বলে বলা হচ্ছে।
ইউক্রেনের ওপর এক নতুন রিপোর্টে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, উত্তরপূর্বের খারকিভ শহরে নির্বিচার গোলাবর্ষণ এবং নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের ফলে শত শত বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
অ্যামনেস্টির এক নতুন গবেষণায় বলা হয়, খারকিভে রুশ বাহিনীর একাধিকবার ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।
দু‘ সপ্তাহের গবেষণায় অ্যামনেস্টি খারকিভ শহরে ৪১টি আক্রমণের ঘটনা তদন্ত করে, যাতে ৬২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়, আহত হয় ১৯৬ জন।
গবেষকরা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন। তারা দেখেছেন যে, লোকজন দোকানে কেনাকাটা করার সময়, লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় বা রাস্তায় হাঁটার সময় কিভাবে আচমকা ছুটে আসা রকেটের আঘাতে নিহত হয়েছেন।
অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের এসব ছবি দেখানো হলে তারা সবাই বলেছেন, ক্লাস্টার বোমা ফাটলে যে চিহ্ন তৈরি হয়, তার সাথে এগুলো মিলে যাচ্ছে।
ক্লাস্টার বোমা একটি বিতর্কিত অস্ত্র, কারণ এর বিস্ফোরণ ঘটানো হয় আকাশে এবং একটি বড় বোমা থেকে একগুচ্ছ ছোট ছোট বোমা বেরিয়ে এসে বড় এলাকা জুড়ে নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ে বিস্ফোরিত হতে থাকে। এর ফলে বেসামরিক লোকজনের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে।
সূত্র : বিবিসি
<p>সম্পাদক: মো:রোকন উদ্দিন রুমন </p><p>লেখক: আবদুল্লাহ যায়েদ তানজিন </p><p>উপদেষ্টা: মো: মোশাররফ হোসেন </p><p>thedailypadma@gmail.com<br></p><p> বার্তা কার্যালয়: দক্ষিন কমলাপুর,ফরিদপুর সদর, ফরিদপুর। </p><p>মোবাইল:০১৭১১১৪৮৯৫১, ০১৯১১৩০৩২২৯ ইমেইল: thepadma24@gmail.com<br></p>
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।