অন্য কোনো মাধ্যমে আসন্ন ঈদে বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে বা যৌক্তিক কারণে ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল চালকদের বাধা দেবে না পুলিশ।
এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মোটরসাইকেল চালককে তার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য একটি মুভমেন্ট পাস দেবে পুলিশ। এ পাস দেখিয়ে ওই মোটরসাইকেল চালক নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা করতে পারবেন।
যৌক্তিক কারণ দেখালে মোটরসাইকেল চালকদের বাধা না দেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৭ জুলাই) দিবাগত রাতে এমন নির্দেশের কথা একটি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা।
কয়েকবছর ধরে ঈদের দুয়েকদিন আগে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশাল যান রাইড শেয়ারিংয়ের চালক আশিকুর রহমান। কিন্তু এবার যেতে পারছেন না। কেননা, সরকার এবারের ঈদে সাত দিন মহাসড়কে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
শুধু হাসিবুরই নন, তার মতো অনেকে এবারের ঈদে মোটরসাইকেলে বাড়ি যেতে পারছেন না। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ডজনখানেক বাইকারের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।
৩ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে (ভার্চুয়ালি) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন ঈদুল আজহায় সাত দিন সারাদেশের মহাসড়কে যৌক্তিক কারণ ছাড়া মোটরসাইকেল না চালানোর পাশাপাশি এক জেলায় রেজিস্ট্রেশন করা মোটরসাইকেল অন্য জেলায় না চালানোর নির্দেশ দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে ও পরে সাত দিন এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। বন্ধ থাকবে মহাসড়কে রাইড শেয়ারিং। ৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে। সরকারি এ নির্দেশনা পরিপালনে আগামী ৭ জুলাই থেকে রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশমুখে মোটরসাইকেল আটকানো হবে। তবে রাজধানীর আশপাশে ঢাকা জেলার অধীন কোনো গন্তব্যে চলাচলকারী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে ৩৭ লাখের বেশি মোটরসাইকেল রাস্তায় চলছে। গণপরিবহন সংকট, বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, পদে পদে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, রেলের টিকিট অব্যবস্থাপনা, শিডিউল বিপর্যয়, যানজটসহ নানা কারণে ক্রমে মানুষ মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এ বাহনটি কখনোই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, গত ঈদুল ফিতরে প্রায় ২৫ লাখ মোটরসাইকেল রাস্তায় নামার কারণে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। আপাতত গণপরিবহন সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ না করে বাহনটির স্পিড লিমিট করে দেওয়া, লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে না যাওয়া, পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে চলতে না দেওয়ার পাশাপাশি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে গণপরিবহনের অপ্রতুলতা-সঙ্কট সমাধান কিছুটা হলেও হবে। আর লাখ লাখ মানুষ বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ পাবে।
একই বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মোটরসাইকেল বন্ধ করে দেওয়া কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং নিয়ন্ত্রণ করে শৃঙ্খলায় আনা জরুরি। তাই বর্তমান সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আলাদা লেন মেনে সুশৃংখলভাবে চালানোর নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। না মানলে জেল জরিমানার জরুরি বিধান করা, অবৈধ লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল বন্ধে ঘন ঘন চেকপোস্ট বসানো, চলাচলের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করা যেতে পারে। তাই বলে পুরোপুরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। এতে করে লাখ লাখ মানুষ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
এদিকে ঈদের আগে ও পরে মহাসড়কে সাতদিন মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন বাইকাররা। আয় কমার ভয়ে মহাসড়কে বাইক বন্ধ করিয়েছেন বাসমালিকরা, এমন অভিযোগও করা হয় ওই মানববন্ধন থেকে।
Leave a Reply