1. admin@thedailypadma.com : admin :
সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চামড়া ব্যবসার সর্বনাশ - দ্য ডেইলি পদ্মা
শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চামড়া ব্যবসার সর্বনাশ

  • Update Time : বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২
  • ১৯৭ Time View

গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো ঢাকাসহ সারাদেশে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম মূল্যে কুরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত ছোট গরুর চামড়া নেয়নি ঢাকার পোস্তার আড়তদার ও সাভারের হেমায়েতপুরের ট্যানারি মালিকরা। আর না কেনায় ছাগলের চামড়া চলে গেছে ময়লার স্তূপে। আকার সাইজ ও মানভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ঢাকায় বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া অনেক আড়তার ও ট্যানারি মালিক কিনছেই না। অবশ্য দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এবার ঢাকায় চামড়া ফেলে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে বিভিন্ন কৌশলে শেষ পর্যন্ত কম দামেই চামড়া কেনাবেচা হয়েছে ঢাকায়। রাজধানীতে খারাপ অবস্থা না হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে পানির দরে চামড়া বিক্রি হয়েছে। অনেকে আবার কুরবানির চামড়া বিক্রি করতে না পেরে ময়লার ভাগাড়, ড্রেন এবং রাস্তায়ও ফেলে দিয়েছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঈদের দিনের শুরুতে ঢাকার পোস্তায় বিপুল পরিমাণ চামড়া আসা শুরু হলে দাম পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতি দুপুরের পর থেকে চামড়া আসা কমে গেলে আড়তদাররা শেষ পর্যন্ত দাম কিছুটা বাড়িয়ে চামড়া কিনেছেন। ফলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মুনাফা করতে না পারলেও এবার লোকসানের মুখে পড়েনি। তবে চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিত না হওয়ার কারণে ঠকেছেন অসহায় এতিম ও দুস্থরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড এন্ড স্কিন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সাধারণ সম্পাদক মো. টিপু সুলতান বলেন, সব কাঁচা চামড়া পোস্তায় না এনে নিজ নিজ এলাকায় লবণ দিতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছিল। এ কারণে পোস্তায় চামড়া কম এসেছে। তবে পোস্তা এলাকার আরেক আড়তদার আশিকুর রহমান জানান, এবারের ঈদে চামড়ার সরবরাহ কম। তাদের ৪ হাজার চামড়া কেনার লক্ষ্য ছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত ২ হাজার চামড়া কিনতে পেরেছেন।

জানা গেছে, ঈদের দিন থেকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিগুলোতে এ পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৬০ হাজার কুরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। দাম কমের কারণে পোস্তায় চামড়া আনতে ভয় পাচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সারাদেশের জেলা শহরের চামড়াগুলো আগামী সপ্তাহ থেকে ঢাকায় আসা শুরু হবে। ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে চামড়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি কারসাজি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ খাতের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কৌশলে কেনা বন্ধ রেখে পানির দরে চামড়া হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে পশুর চামড়া সংগ্রহ করে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সিলেটে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কমে বিক্রি হয়েছে চামড়া; নীলফামারী, বরিশাল, হবিগঞ্জ, বগুড়া, বড়গুনার আমতলীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রতিনিধিরা।

এদিকে গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৭-৫২ টাকা নির্ধারণ করে। ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮-২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২-১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ঢাকার বাইরে ও ঢাকায় বকরি ও খাসির চামড়ার দাম একই রাখা হয়। গতবারের তুলনায় চলতি বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৭ টাকা এবং খাসির চামড়ায় ৩ টাকা বাড়তি দাম নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু দেশের কোথাও সরকার নির্ধারিত এ দাম কার্যকর হয়নি। এ বছর গরুর দাম অনেক বেড়েছে। শুধু তাই নয়, গরু লালন-পালনের সব ধরনের উপকরণের দাম এখন বাড়তি। এমনকি চামড়ার তৈরি সব ধরনের জিনিস দামের কারণে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অথচ দেশে কাঁচা চামড়া পানির দামে কিনে নিচ্ছেন পোস্তার আড়তদার ও সাভারের ট্যানারি মালিকরা।

ঈদের দিন দুপুরের পর পোস্তায় ছোট আকারের গরুর চামড়া ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের গরুর চামড়া মানভেদে ৩০০-৬৫০ টাকা এবং বড় আকারের গরুর চামড়া ৮০০-১১০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ সময় অধিকাংশ আড়তদার ছোট আকারের গরুর চামড়া এবং খাসি ও বকরির চামড়া কিনতে অনীহা দেখান। ছোট আকারের গরুর চামড়া কেউ বিক্রি করতে আনলে ৮০-১০০ টাকা দামও বলেছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে খাসি ও বকরির চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০ টাকায়। অনেকে আবার ছাগলের চামড়া কিনেননি। ঢাকার সুবজবাগ এলাকা থেকে ১৫টি চামড়া নিয়ে পোস্তায় বিক্রির জন্য এসেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী। ২৫-৩০ ফুট আকারের এসব চামড়া তিনি ৯০০-১০০০ টাকায় বিক্রি করতে চান। কিন্তু তিনটি আড়ত ঘুরে সর্বোচ্চ দাম পেয়েছেন ৬০০ টাকা।

আড়ত মালিকরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার চামড়ার দাম বেশি। তবে তাদের কথার কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি পোস্তা ও হেমায়েতপুরে। এ প্রসঙ্গে পোস্তার হাজি মতিউর রহমান এন্টারপ্রাইজের মালিক আশিকুর রহমান জানান, এবার চামড়ার দাম একটু বেশি। কারণ, চামড়ার সরবরাহ কম। এদিকে চামড়ার কেনাবেচা তদারকি করতে মাঠে কাজ করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, হেমায়েতপুর ও পোস্তা এলাকায় ভোক্তার দুটি দল কাজ করছে। দাম নিয়ে এখনো কোনো কাঁচা চামড়া বিক্রেতা অভিযোগ করেননি।

গত কয়েক বছর ধরে কুরবানির পশুর চামড়ার দাম দফায় দফায় কমেছে। কোনোবারই নির্ধারিত দামে চামড়া বেচাকেনা হয়নি। ২০১৯ সালে কুরবানির চামড়া নিয়ে এক ধরনের বিপর্যয় ঘটে যায়। দাম না পেয়ে সেসময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চামড়া ফেলে দেন অনেকে। মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটে। তখন বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানামুখী উদ্যোগ নেয়। গত দুই বছর বিপর্যয় না হলেও খুবই কম দামে কুরবানির চামড়া বিক্রি হয়। চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের দিন গত রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামেই কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে ট্যানারি মালিক ও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায়ীরা বলছেন, হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্প নগরীর দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। ফলে বাংলাদেশি চামড়ার মূল ক্রেতা এখন চীন। তারা সব সময় কম দাম দিচ্ছে। অন্যদিকে হাজারীবাগে ট্যানারিগুলোর নিজস্ব কারখানার জায়গা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রেড জোন ঘোষণা করে রাখায় সেসব জায়গা বিক্রি করতে পারছে না। ফলে ব্যাংক ঋণ শোধ করতে পারছে না ট্যানারিগুলো। সে কারণে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে।

আগামী সপ্তাহ থেকে জেলা শহরের চামড়া আসবে ঢাকায় : আগামী সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের চামড়া আসবে ঢাকায়। এলক্ষ্যে ট্যানারিগুলো ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। চামড়া কিনতে এবারো বিপুল অঙ্কের ঋণ পেয়েছেন পোস্তার আড়তদার ও সাভারের ট্যানারি মালিকরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড এন্ড স্কিন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ঈদের ১০ দিন পর থেকে দেশের জেলাগুলো থেকে চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। সারাদেশ থেকে যত পরিমাণে লবণ দেয়া চামড়া ঢাকায় আসে, তার প্রায় ৭০ শতাংশ সরাসরি ট্যানারিগুলোতে চলে যায়। বাকি ৩০ শতাংশ চামড়া পোস্তার ব্যবসায়ীরা কিনে পরে ট্যানারির মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। ২০ বছর আগেও লবণ দেয়া শতভাগ চামড়া পোস্তার মাধ্যমে ট্যানারিতে যেত। এখন আর সেই অবস্থা নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
স্বপ্নপূরণের ক্ষণগণনা
অপেক্ষা উদ্বোধনের
দিন
ঘন্টা
মিনিট
সেকেন্ড
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Customized By BreakingNews