প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ৩:০১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ২৮, ২০২২, ৪:৪৪ পি.এম
গত শুক্রবার তল্লাশি অভিযান চালিয়ে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছিল প্রায় ২২ কোটি রুপি এবং অনেক সম্পত্তির নথি।বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) উদ্ধার হয়েছে ২৭ কোটি ৯০ লাখ রুপি এবং কয়েক কেজি সোনা। যদিও আর্থিক দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা অফিশিয়ালি এখনো বিস্তারিত ঘোষণা করেননি। অর্থাৎ দুই ফ্ল্যাট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় নগদ ৫০ কোটি রুপি উদ্ধার হয়েছে। এই সব অর্থই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের; বৃহস্পতিবার তদন্তকারীদের কাছে এমনটিই দাবি করলেন অর্পিতা।
অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি রুপি উদ্ধারের পরদিন শনিবার ইডি শিল্পমন্ত্রী পার্থ ও অর্পিতাকে গ্রেপ্তার করেছিল। বুধবার তারা অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে যায়; ১৮ ঘণ্টার অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ১০ ট্রাঙ্কভর্তি অর্থ নিয়ে বেরিয়ে আসে।
অর্পিতার এই ফ্ল্যাটে কী পরিমাণ অর্থ আছে, তা গুণতে ইডি কর্মকর্তাদের তিনটি নোট গণনাযন্ত্র ব্যবহার করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরেই এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে বড় পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়।
জানা গেছে, কেলেঙ্কারিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম সামনে আসার পরই তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায় তার থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জারি করা একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এই আদেশ গতকাল থেকেই কার্যকর হওয়ার কথ।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সব মন্ত্রণালয়ের দেখাশোনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই।
অন্যদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বরখাস্তের দাবিতে বৃহস্পতিবার কলকাতায় মিছিল করে ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস তার মন্ত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার হওয়ার পরেই মূলত তৃণমূলের ওপর চাপ বাড়ে।
ইডি সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, কর্মকর্তারা ফ্ল্যাটটির ওয়াড্রোব, এমনকি শৌচাগার থেকেও ব্যাগে, প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে রাখা নগদ অর্থ উদ্ধার করেন।
এর আগে অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে নগদ অর্থের পাশাপাশি দুই কোটি রুপি মূল্যের সোনার বার ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে তারা একটি ডায়েরিরও হদিস পায়, যাতে থাকা তথ্য তদন্তে ব্যাপক সহায়তা করতে পারে বলে ধারণা কর্মকর্তাদের। সব মিলিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা পার্থঘনিষ্ঠ অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি রুপি নগদ অর্থ উদ্ধার করলেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী পার্থর বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে সরকারি স্কুলে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
বদলি এবং কলেজের স্বীকৃতি পেতে সহায়তার বিনিময়ে পার্থ এসব অর্থ পেয়েছেন, অর্পিতা তদন্ত কর্মকর্তাদেরকে এমনটা বলেছেন বলে জানা গেছে। ‘পার্থ আমার এবং অন্য এক নারীর ঘরকে মিনি ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করতো। ওই অন্য নারীও পার্থর ঘনিষ্ঠ বন্ধু,’ তদন্ত কর্মকর্তাদের অর্পিতা এমনটিই বলেছেন বলে খবর।
বুধবার তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তারা তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। মানিক পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, বুধবার ইডির তদন্ত কর্মকর্তারা বেলঘরিয়ায় অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায়। একটি ফ্ল্যাটে কিছু না পেয়ে সেটি সিল করে দেয়। অন্য ফ্ল্যাটে মেলে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিরোধীদের তোপের মুখে পড়া মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না এবং দোষী সাব্যস্ত হলে শিল্পমন্ত্রীর অবশ্যই সাজা হওয়া উচিত।
কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে তার অবশ্যই সাজা হওয়া উচিত। তবে আমি আমার বিরুদ্ধে যে নোংরা প্রচারণা চলছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কিছুটা সময় লাগলেও সত্য অবশ্যই বেরিয়ে আসবে, বলেছেন তিনি।