প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও টিকা নেওয়ার পর সেই ভয় কেটে যায় শিশুদের। কোনো কোনো স্কুলে টিকা নিতে আসা শিশুদের চকলেট দেওয়া হয়। টিকা নেওয়ার পর অভিভাবকদের সঙ্গে হাসিখুশিভাবেই বাড়ি ফিরতে দেখা যায় তাদের। করোনা থেকে সন্তানের সুরক্ষায় বেশ উদ্বেগমুক্ত ছিলেন অভিভাবকরাও।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে ৫-১১ বছর বয়সী শিশুদের করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ১২ সিটি করপোরেশনে ৬৪ হাজার ৩৬৭ শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে ৩২ হাজার ৫৩৯ ছাত্রী ও ৩১ হাজার ৮২৮ ছাত্র।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে টিকা পেয়েছে ৮ হাজার ৯৪৫ শিশু। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৮৮৩ ছাত্রী ও ৪ হাজার ৬২ ছাত্র।
সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২১টি স্কুলসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৮৬টি স্কুলে টিকা পায় শিশুরা। দেওয়া হচ্ছে শিশুদের জন্য ফাইজারের তৈরি বিশেষ টিকা। আগামী ১৪ দিন, অর্থাৎ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুলে স্কুলে টিকা পাবে শিশুরা। এসব শিশুর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে ৮ সপ্তাহ বা ৫৬ দিন পর।
প্রথম দিন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২১টি স্কুলে টিকা দেওয়া হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৭ শিশুকে টিকা দেওয়ার। টিকা উপলক্ষে স্কুলগুলোকে বিশেষভাবে সাজানো হয়েছিল। শিশু, অভিভাবক, শিক্ষক ও টিকাদান কর্মীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছিল স্কুলগুলো। বেশ আনন্দমুখর পরিবেশে টিকা নিয়েছে শিশুরা।
সকালে নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৫-১১ বছরের সব শিশুকে টিকা দেওয়া হবে। এখন সিটি করপোরেশন এলাকায় দেওয়া হচ্ছে। পরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দেওয়া হবে। সব শিশুকে টিকা দেব।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করেছে আপাতত তাদের দেওয়া হচ্ছে। যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি তাদের পরে দেওয়া হবে। আমরা কেন্দ্রভিত্তিক সিলেকশন করেছি। কারণ কেন্দ্রভিত্তিক সিলেকশনে তারা অটোমেটিক স্কুলে এসে টিকা নিতে পারবে। আমাদের ইচ্ছা পর্যায়ক্রমে ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে টিকার আওতায় নিয়ে আসব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি কেন্দ্রে একটি ম্যানেজমেন্ট টিম রেখেছি। যাতে তারা কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সহজেই ম্যানেজ করতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডোজ কমিয়ে পয়েন্ট ২ এমএল করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রথম ১২ দিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। পরের ২ দিন ভাসমান পথশিশুদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা যেসব অঞ্চলে থাকে সেসব অঞ্চলে টিকা কর্মসূচি নেওয়া হবে।
এর আগে ১১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আবুল বাশার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬ শিশুকে পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে সেদিন দেশে শিশুদের করোনার টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনা টিকাদান শুরু হয়। শুরুতে সারা দেশে ষাটোর্ধ্বদের টিকা দেওয়া হয়। পরে বয়সসীমা কমিয়ে গত বছর ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হয়। এ ছাড়া ভাসমান জনগোষ্ঠীদেরও টিকার আওতায় আনা হয়েছে। সর্বশেষ ৫-১১ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু হলো। এর জন্য কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইজারের ৩০ লাখ ডোজ বিশেষ টিকা দেশে এসেছে।
Leave a Reply