ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণ দিয়েছেন নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস।
তিনি বলেছেন, তার মা যে অঙ্গীকার তার রাজত্বের সূচনায় করেছিলেন-সেই একই অঙ্গীকার তিনি নবায়ন করতে চান। তিনি সম্মান, মর্যাদা এবং ভালোবাসার সঙ্গে ব্রিটেন ও কমনওয়েলথের জনগণের সেবা করার অঙ্গীকার করছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বাকিংহাম প্যালেস থেকে ব্রিটিশ জাতি ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর উদ্দেশে নতুন রাজা এ ভাষণ দেন। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় তার এ ভাষণটি সরাসরি টিভিতে সম্প্রচার করা হয়।
ভাষণে রাজা তৃতীয় চার্লস বলেন, ‘যেভাবে রানি নিজে অটল নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। আমিও এখন দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের কাছে অঙ্গীকার করছি, ঈশ্বর আমার জন্য বাকি যেটুকু সময় বরাদ্দ রেখেছেন, পুরোটা জুড়ে আমি আমাদের দেশের হৃদয়ে সংবিধানের নীতিকে সমুন্নত রাখব।’
তিনি বলেন, ‘আপনি যুক্তরাজ্যের সেখানেই বসবাস করুন বা আমাদের যে রাজ্যে বা বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলে এবং আপনি যেখান থেকেই আসুন বা আপনার বিশ্বাস যাই হোক, আমি আমার সারাজীবন ধরে বিশ্বস্ততা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সঙ্গে আপনাদের সেবা করে যাওয়ার চেষ্টা করব।’
রাজা চার্লস বলেন, ‘রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দারুণ একটা জীবন পার করেছেন। তিনি সবসময় লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর মর্মাহত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বুকে অনেক কষ্ট নিয়ে আজ আপনাদের সামনে কথা বলছি। পুরো রাজপরিবারের পক্ষ থেকে আমি গভীর শোকানুভূতি নিয়ে আপনাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। আমার মা যে অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে তার রাজত্বের সূচনা করেছিলেন, আমিও নতুন করে সেই একই অঙ্গীকার করছি।’
মাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘মহামান্য রানি, আমার প্রিয় মা তার সারা জীবন আমার এবং পুরো পরিবারের জন্য অনুপ্রেরণা ও উদাহরণ হয়ে ছিলেন। তার ভালোবাসা, স্নেহ, দিক নির্দেশনা, বোঝাপড়া সবকিছুর জন্যই আমরা তার কাছে ঋণী।’
চার্লস বলেন, ‘কেপটাউন থেকে ১৯৪৭ সালে ২১তম জন্মদিনে কমনওয়েলথের একটি সম্প্রচারে মা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তার জীবন নিজের জনগণের সেবায় কাটিয়ে দেবেন। এটি প্রতিশ্রুতির চেয়েও বেশি কিছু ছিল, এটি একটি গভীর ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি যা তার পুরো জীবনকে সংজ্ঞায়িত করেছিল।’
তিনি রাজকীয় পরিবারের শোকের সময়কালের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন, যা এক মাস স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ইউকে সরকার জাতীয়ভাবে ১০ দিনের শোক পালন করবে।
টেমস নদীর উপর অবস্থিত প্রাচীন রাজকীয় দুর্গ টাওয়ার অফ লন্ডন থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনের হাইড পার্ক জুড়ে রানীর জীবনের প্রতি বছরের জন্য এক রাউন্ড করে গান স্যালুটের মাধ্যমে রানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।
ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে, সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল এবং উইন্ডসর ক্যাসেলসহ অন্যান্য স্থানে গির্জার ঘণ্টা বাজবে এবং ইউনিয়ন পতাকা অর্ধনমিতভাবে রাখা হবে।
ট্রাস এবং অন্যান্য সিনিয়র মন্ত্রীরা সেন্ট পলস-এ একটি গণ স্মরণ সভায় যোগ দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন এবং ইউকে পার্লামেন্ট রানীকে শ্রদ্ধা জানাতে দুই দিনের বিশেষ অধিবেশন শুরু করবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। লন্ডনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বিবৃতি দেয় বাকিংহাম প্যালেস।
ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ৭০ বছর সিংহাসনে ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কয়েক মাস আগেই তার সিংহাসনে আরোহনের ৭০ বছর উদযাপন করা হয়েছিল।
Leave a Reply