প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:০৮ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ২২, ২০২২, ৫:২৭ পি.এম
পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ছাড়াই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর
দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে অনিয়মের শেষ নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষভাবে গড়া এ অঞ্চলের উদ্দেশ্যই যেন ভুলে গেছেন দায়িত্বশীলরা। উদ্বোধনের সময় ঘনিয়ে এলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেজা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ শিল্পনগরটিতে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের কোনো ব্যবস্থাই এখনো করেনি। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ছাড়াই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলটি। এছাড়া অঞ্চলটিতে বিনিয়োগকারীদের ট্যাক্স হলিডে পাওয়ার কথা থাকলেও উৎপাদনে যাওয়ার আগেই ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিসতো (ওএসএস) নেই রবং সব ক্ষেত্রেই তৈরি হয়েছে স্থবিরতা ও নিষ্ক্রিয়তা।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পানিজ, ম্যাঙ্গু টেলিসার্ভিসেস, স্টার অ্যালাইড বেঞ্চার, অনন্ত গ্রুপ, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিটিক্যালস, বাংলাদেশ এডিবয়েল অয়েল, উর্মি গ্রুপ, মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস, বিডিকম অনলাইন, রাতুল অ্যাপারাইলস, যমুনা স্পেসটেক জয়েন্ট বেঞ্চার, ইউরোএশিয়া ফুড প্রসেসিং, হামকো করপোরেশন, এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন, উত্তরা মটরস, ডিবিএল গ্রুপ, ওয়েল গ্রুপ, রেজা ফ্যাশন, ইন্টিগ্রো অ্যাপারেলস, লামিল অ্যাপারেলসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান লক্ষাধিক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এমন বড় বিনিয়োগের শিল্প কারখানা নির্মাণের পরেও যথাসময়ে চালু করা সম্ভব না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়বে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তরা। তারা বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণে নিয়ে শিল্প কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মেশিনারিজ ক্রয় আদেশ ও সংস্থাপন করা হচ্ছে। উৎপাদন যথাসময়ে শুরু না হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের অর্থ প্রদান করতে না পেরে খেলাপি হবেন উদ্যোক্তরা।
২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গভর্নিং বোর্ডের সভায় মিরসরাইয়ে একটি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরেসরাইয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ছয় বছর পার হয়ে গেলেও অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়নি। চলতি বছরের মধ্যেই কিছু কারখানা উৎপাদনের পর্যায়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সংকট হিসেবে সামনে এসেছে বিদ্যুৎ সরবারহ। কারখানগুলোর সংবেদনশীল যন্ত্রপাতির জন্য মানসম্মত, নিরবচ্ছিন্ন ও কম ভোল্টেজ ফ্ল্যাকচুয়েশন বিদ্যুৎ প্রয়োজন, যা ২৩০ কেভি লাইনের মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের কারণ মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ২৩০ কেভি ভোল্টেজ সরবরাহের সক্ষমতা নেই। ফলে শিল্পনগরীতে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাওয়ার জন্য শতভাগ প্রস্তুত হলেও বিদ্যুতের কারণে উৎপাদন পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কারখানের উৎপাদনের জন্য কাঁচামালের পাশাপাশি পানি ও গ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০২০ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের উপসচিব মো. আ. আলীম খান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারখানা অবকাঠামো নির্মাণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্ধারিত শর্ত পালনপূর্বক প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও গ্যাস চাহিদা মোতাবেক সময়ের মধ্যে সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ৪ অক্টোবর অপর এক চিঠিতে প্রথম পর্যায়ে মুহুরি রিজার্ভার থেকে ৫০ এমএলডি ওয়াট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি ও পরবর্তীতে আরো ৫০ এমএলডিসহ ১০০ এমএলডি পানি সরবরাহের কথা বলা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রথম পর্যায়ের অর্থাৎ ৫০ এমএলডির কাজ শেষ হবে। কিন্তু ২০২২ সালের অক্টোবরেও প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে গঠনের সময় প্লট বা জমি ইজারার সময় ভ্যাট প্রদানের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এখন ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে। যা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। চলতি বছরের ১৫ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বেজা কর্তৃক বরাদ্দকৃত জমি ইজারা প্রদানের ভ্যাট প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তরা।
২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইকনোমিক জোনের কার্যক্রম শুরুর পর বেজার তৎকালীন নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী একাধিকবার প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন। তিনি বিভিন্ন সময় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করে সমাধানও করেন। কিন্তু বর্তমান নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন দায়িত্বে আসার পর তিনি ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রশাসন পরিচালনা করছেন। ফলে, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। পরিচালন ব্যবস্থায় একনায়কতন্ত্র আসায় বর্তমানে প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে অনেক সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
<p>সম্পাদক: মো:রোকন উদ্দিন রুমন </p><p>লেখক: আবদুল্লাহ যায়েদ তানজিন </p><p>উপদেষ্টা: মো: মোশাররফ হোসেন </p><p>thedailypadma@gmail.com<br></p><p> বার্তা কার্যালয়: দক্ষিন কমলাপুর,ফরিদপুর সদর, ফরিদপুর। </p><p>মোবাইল:০১৭১১১৪৮৯৫১, ০১৯১১৩০৩২২৯ ইমেইল: thepadma24@gmail.com<br></p>
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।