প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১১:২১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ২৫, ২০২২, ৪:৪২ পি.এম
দেশের ১৯ উপকূলীয় জেলায় ৬১ হাজার ৩৭৮টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় প্রায় চার লাখ মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। এসব ঘরে শুধু নিজেরাই নয় প্রতিবেশীরাও আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও (পিএমও) ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় ও ত্রাণ পর্যবেক্ষণ সেল চালু করা হয়। রাত জেগে নিজে বিষয়টি সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিংও করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এসব উদ্যোগের ফলেই ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিপুল প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আগে ১৯ উপকূলীয় জেলায় দুই লাখ ১৯ হাজার ৬৯০ জন মানুষ এবং ৪৫ হাজার ৪৪২টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করে। মোট সাত হাজার ৪৯০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ধারণ ক্ষমতা ছিল ৪২ লাখ ৭৪ হাজার। উপকূলীয় জেলার আশ্রয়ণের ৬১ হাজার ৩৭৮টি ঘরে প্রতিবেশী কয়েক লাখ মানুষ আশ্রয় পেয়েছেন। ফলে জানমালের ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। দুর্যোগ সহনীয় ঘর হওয়ায় কোনো ঘরের তেমন ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।
১ম, ২য়, ৩য় ও চতুর্থ পর্যায়ে ১৯ উপকূলীয় জেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গোপালগঞ্জে তিন হাজার ৮০৫, শরীয়তপুর দুই হাজার ৬৬২, কক্সবাজারে তিন হাজার ৬৪০, চট্টগ্রামে পাঁচ হাজার ৪৩, চাঁদপুরে ৪০৮, লক্ষ্মীপুরে তিন হাজার ২২৮, নোয়াখালীতে তিন হাজার ৬৮৮, ফেনীতে এক হাজার ৬৫৯, সাতক্ষীরায় দুই হাজার ৯০৬, যশোরে দুই হাজার ১৫৩, খুলনায় তিন হাজার ৯৫০, নড়াইলে ৮২৯, বাগেরহাটে দুই হাজার ৭৯৪, ভোলায় তিন হাজার ৫২৯, পিরোজপুরে চার হাজার ৮৬৭, ঝালকাঠিতে এক হাজার ৮৪২, পটুয়াখালী ছয় হাজার ৯৪১, বরগুনায় দুই হাজার ৬০০, বরিশালে চার হাজার ৮৩৪টি ঘর দেওয়া হয়েছে। সর্বমোট ঘরের সংখ্যা ৬১ হাজার ৩৭৮টি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় ও ত্রাণ পর্যবেক্ষণ সেলের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে চার বিভাগে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ছিল ১৯টি। এরমধ্যে উপজেলা ছিল ৬০টি। এসব এলাকায় মোট নগদ অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ৯৫ লাখ টাকা (প্রতি জেলায় পাঁচ লাখ করে)। আর ৪৭৫ টন চাল (প্রতি জেলায় ২৫ টন করে) ও ১৯ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ৬০টি উপজেলার মধ্যে সাত হাজার ৪৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১২২টি মুজিব কেল্লা রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৪২ লাখ ৭৪ হাজার। তার মধ্যে দুই লাখ ১৯ হাজার ৬৯০ জন আশ্রয় নেন। আর আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা হচ্ছে ৪৫ হাজার ৪৪২টি।
বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা তিনটি হচ্ছে- চরফ্যাশন, মনপুরা ও তজুমদ্দিন। এই তিন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৪৬টি ও মুজিব কেল্লা রয়েছে চারটি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার জন। আশ্রিত লোকসংখ্যা ১৭ হাজার ৬৯১। পটুয়াখালী জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা তিনটি হচ্ছে কলাপাড়া, দশমিনা ও গলাচিপা। এই তিন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৭০৩টি ও মুজিব কেল্লা রয়েছে ২৬টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা দুই লাখ ১৯ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা ৩১ হাজার ৩১। বরগুনা জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা তিনটি হচ্ছে- সদর, পাথরঘাটা ও তালতলি। এই তিন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৪২টি ও মুজিব কেল্লা রয়েছে তিনটি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা দুই লাখ ৭৯ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা ৯ হাজার ১০০। পিরোজপুর জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা তিনটি হচ্ছে- ইন্দুরকানি, মঠবাড়িয়া ও ভান্ডারিয়া। এই তিন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২৬১টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৭২ হাজার জনের। আশ্রিত লোকসংখ্যা ৩৬ হাজার ২৩৫। বরিশাল জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা ছয়টি হচ্ছে- মেহেদিগঞ্জ, হিজলা, বাকেরগঞ্জ, মুলাদি, বাবুগঞ্জ ও সদর। এই ছয় উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৪১টি ও মুজিব কেল্লা পাঁচটি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা দুই লাখ ৬৯ হাজার জনের। আশ্রিত লোকসংখ্যা আট হাজার ৮৩১। ঝালকাঠি জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা চারটি হচ্ছে- কাঁঠালিয়া, নলছিটি, রাজাপুর ও সদর । এই চার উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮৮টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা তিন লাখ ৯০ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা পাঁচ হাজার ১০০।
চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা চারটি হচ্ছে- মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও পেকুয়া। এই চার উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৭৬টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা ছয় লাখ পাঁচ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা পাঁচ হাজার ৪০০। চট্টগ্রাম জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা পাঁচটি হচ্ছে- বাঁশখালী, সন্দ¦ীপ, মিরেরসরাই, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী। এই পাঁচ উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫১১টি ও মুজিব কেল্লা আটটি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা তিন লাখ। আশ্রিত লোকসংখ্যা পাঁচ হাজার। নোয়াখালী জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা তিনটি হচ্ছে- হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ। এই তিন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৪০১টি ও মুজিব কেল্লা তিনটি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা তিন লাখ। আশ্রিত লোকসংখ্যা সাত হাজার। লক্ষ্মীপুর জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা চারটি হচ্ছে- রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও সদর। এই চার উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮৫টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা ৮২ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা ৯৫০। ফেনী জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা একটি হচ্ছে- সোনাগাজী। এই উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৭টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা ৪৮ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা পাঁচ হাজার ৯০০। চাঁদপুর জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা তিনটি হচ্ছে- সদর, হাইমচর ও মতলব উত্তর। এই তিন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৫৩টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ১৪ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা ৩৭৫ জন।
খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা দুটি হচ্ছে- শ্যামনগর ও আশাশুনি। এই দুই উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৮৮টি ও মুজিব কেল্লার সংখ্যা আটটি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা তিন লাখ ৩১ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা ৩১ হাজার। বাগেরহাট জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা চারটি হচ্ছে- শরনখোলা, মোড়লগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল। এই চার উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪৪টি ও মুজিব কেল্লার সংখ্যা পাঁচটি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা দুই লাখ। আশ্রিত লোকসংখ্যা ৪৫ হাজার ১৯৮। খুলনা জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা তিনটি হচ্ছে- কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা। এই তিন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৪০৯টি ও মুজিব কেল্লার সংখ্যা ৫০টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা দুই লাখ ৭৩ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা ১০ হাজার ৫২০। নড়াইল জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা দুটি হচ্ছে- কালিয়া ও লোহাগড়া। এই দুই উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২৫টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা সাত হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা নাই। যশোর জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা একটি হচ্ছে- অভয়নগরা। এই উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা তিন হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা নাই।
ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলার ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা তিনটি হচ্ছে- জাজিরা, নড়িয়া ও গোসাইরহাট। এই তিন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২৯৯টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা ৬০ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা নাই। গোপালগঞ্জ জেলার ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা তিনটি হচ্ছে- টুঙ্গিপাড়া, কোটালিপাড়া ও সদর। এই তিন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২২৪টি। এখানে আশ্রয়ের জন্য ধারণ ক্ষমতা ৫০ হাজার। আশ্রিত লোকসংখ্যা নাই।