জয় দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করায় ব্রাজিল এবং সুইজারল্যান্ডের সামনে ছিল শেষ ষোলোর টিকিট পাওয়ার হাতছানি। দুই দলের মুখোমুখি সেই লড়াইয়ে ক্যাসেমিরোর একমাত্র গোলে ১-০ গোলের ব্যবধানে জয় পায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এই জয়ের মাধ্যমে নকআউট পর্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সুইসদের বিরুদ্ধে জয়ের দেখা পেলো সেলেসাওরা।
গোড়ালির চোটে ছিটকে যাওয়া নেইমার এবং দানিলোকে ছাড়া ফ্রেড আর এডের মিলিতাওকে একাদশে রেখে সোমবার (২৮ নভেম্বর) কাতারের রাজধানী দোহার আবু দাহুদ স্টেডিয়ামে সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। প্রাণভোমরা নেইমারকে ছাড়া মাঠে নামলেও প্রথমার্ধে দাপট ছিল ব্রাজিলেরই, গোলেরও তিনটি ভালো সুযোগ সৃষ্টি করেছিল তারা।
শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা ব্রাজিল ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম সুযোগ পায় ১২ মিনিটে। গোললাইনের কাছাকাছি থেকে ভিনিসিয়াসের উদ্দেশ্যে বল বাড়িয়েছিলেন আগের খেলায় জোড়া গোল করা রিচার্লিসন। কিন্তু ভিনিসিয়াসের কাছে পোঁছানোর আগেই বাধা হয়ে দাঁড়ান সুইস সেন্টারব্যাক এলভেদি।
সাত মিনিট পর আবারও গোলের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে ব্রাজিল। চার সুইস ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে লুকাস পাকুয়েতাকে খুঁজে নেন ভিনিসিয়াস। পাকুয়েতার ক্রস থেকে কেবল পা ছোঁয়ালেই টানা দ্বিতীয় ম্যাচে গোল পেতেন রিচার্লিসন। তবে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার সেটি না পারায় আবারও এলভেদি বল ক্লিয়ার করে দেন।
যদিও প্রথমার্ধে গোলের সবচেয়ে গোলের সবচেয়ে সহজ সুযোগটা হাতাছাড়া করেছেন সেই ভিনিসিয়াসই। ম্যাচের ২৭ মিনিটে রাফিনহার ক্রস থেকে শুধু ঠিকঠাক শট নিতে পারলেই গোলের দেখা পেতো সেলেসাওরা। কিন্তু তরুণ ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ভলি নিলেও তা আটকাতে সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সমারকে বেগ পেতে হয়নি।
প্রথমার্ধের ব্রাজিল বেশি আক্রমণ করলেও সুযোগ পেলে ওপরে উঠে আসছিল সুইজারল্যান্ডও। খেলার ধারার বিপরীতে ৩৯ মিনিটে এগিয়েও যেতে পারতো ইউরোপীয় দেশটি। বাঁ দিক থেকে রিকার্ডো রদ্রিগেজের ক্রস থেকে বল পেয়ে ব্রাজিলিয়ান সেন্টারব্যাক মার্কুইনহোসকে দারুণ ক্রুইফ টার্নে পরাস্ত করেন ভার্গাস। তবে শট নিতে সময় বেশি লাগানোয় বল ক্লিয়ার করে দেন ব্রাজিল অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা।
ম্যাচের ৪৪ মিনিটে রাফিনহার নেওয়া কর্নার থেকে দারুণভাবে মাথা ছুঁইয়েছিলেন থিয়াগো সিলভা। তবে সুইস ডিফেন্ডার এল্ভেদির গায়ে লেগে ব্রাজিল অধিনায়কের গোলের চেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়। ফলে প্রথমার্ধে চালকের আসনে থেকেও সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল না পেয়েই মধ্যবিরতিতে যায় তিতের শিষ্যরা।
গোলের সন্ধানে থাকা ব্রাজিল মধ্যবিরতির পরই পাকুয়েতার পরিবর্তে মাঠে নামায় তরুণ উইঙ্গার রদ্রিগো গোয়েসকে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে গোলের প্রথম সুযোগ সৃষ্টি করেছিলে সুইসরাই। যদিও সুইজারল্যান্ডের সেই গোলের প্রচেষ্টা লক্ষ্যে না থাকায় বিপদ হয়নি লাতিন পরাশক্তিদের।
প্রথমার্ধে গোলের সহজতম সুযোগ নষ্ট করার পর দ্বিতীয়ার্ধে সেটির প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন ভিনিসিয়াস। ৬৪ মিনিটে ক্যাসেমিরোর কাছ থেকে বল পেয়ে উইডমারের স্লাইডিং ট্যাকেল এড়িয়ে সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমারকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন ২১ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। তবে রিচার্লিসন অফসাইডে থাকায় ভিএআরে সেই গোল বাতিল হয়ে যায়।
একের পর এক আক্রমণ বিফলে যাওয়ায় গোলের জন্য মরিয়া ব্রাজিল কোচ তিতে রিচার্লিসন এবং রাফিনহাকে উঠিয়ে গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং অ্যান্টনিকে মাঠে নামিয়ে দেন। কিন্তু এরপরেও গোলের জন্য তেমন ভালো সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছিল না সেলেসাওরা। বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্রাজিলের সুইস গেরো খুলবে না বলেই মনে হচ্ছিলো।
অবশেষে ৮৩ মিনিটে সুইজারল্যান্ডের রক্ষণে ফাটল ধরাতে সমর্থ হয় ব্রাজিল। বাঁ দিক থেকে ভিনিসিয়াস বল বাড়ান রদ্রিগোর দিকে। তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফ্লিক করে বল ঠেলে দিয়েছিলেন ডি-বক্সে থাকা ক্যাসেমিরোর দিকে। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের নেওয়া জোরালো হাফ ভলি আশ্রয় নেয় সুইজারল্যান্ডের জালে। তাকিয়ে দেখা ছাড়া সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সমারের কিছুই করার ছিল না।
গোল হজমের পর সুইজারল্যান্ড আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। বরং সুইস রক্ষণের ভেঙে পড়ার ফায়দা তুলে নিয়ে ব্যবধান বাড়াতে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে সেলেসাওরা। ব্যবধান বাড়ানো সম্ভব না হলেও এক গোলের অগ্রগামিতা ধরে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার পাশাপাশি ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর টানা চতুর্দশবারের মতো গ্রুপপর্বের বৈতরণী পেরোলো ব্রাজিল।
Leave a Reply