কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না বলে দেওয়া হাইকোর্টের রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মামলা দায়েরে বাধা রইলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বরাইল গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ব্র্যাক ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে ২০১১ সালে চার লাখ টাকা ঋণ নেন। তিন বছর পর ৩৬ কিস্তির মাধ্যমে পাঁচ লাখ ২৪ হাজার টাকা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ২০১৩ সালের অক্টোবরে ২২তম কিস্তির মাধ্যমে তিন লাখ ১৯ হাজার টাকা পরিশোধের পর আর কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি মোহাম্মদ আলী।
২০১৫ সালের ৩১ মার্চ ব্র্যাক ব্যাংকে তিনি দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪ টাকার চেক দেন। এই চেকটি ডিজঅনার হওয়ায় ব্র্যাক ব্যাংক ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এ মামলায় ২০১৬ সালের ২০ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত মোহাম্মদ আলীকে ছয় মাসের সাজা ও দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪ টাকা জরিমানা করেন। বিচারিক আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে বকেয়া ঋণের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা আদালতে জমা দিয়ে ২০১৮ সালে আপিল করেন মোহাম্মদ আলী। ওই আপিলের শুনানির পর ২৮ নভেম্বর রায় হলো। রায়ে মোহাম্মদ আলীকে দেওয়া বিচারিক আদালতের ছয় মাসের সাজা বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে আপিলের সময় মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে নেওয়া এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে ব্ল্যাংক চেক নিচ্ছে সেটা জামানত, বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে নেওয়া সেই চেক দিয়ে ‘চেক ডিজঅনার’ মামলা করা যাবে না। ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন এই বেআইনি কাজ করে আসছে।
বিচারিক আদালতকে নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, আজ থেকে ঋণ আদায়ে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক ডিজঅনার মামলা সরাসরি খারিজ করে সেসব মামলা অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দিতে হবে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ে শুধু অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। এ রায়ের আলোকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতিটি ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করবে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশেক মোমিন।
Leave a Reply