1. admin@thedailypadma.com : admin :
মরুর বুক থেকে কি অমরত্বের সুধা পাবেন ‘ভিনগ্রহের ফুটবলার’? - দ্য ডেইলি পদ্মা
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৯ অপরাহ্ন

মরুর বুক থেকে কি অমরত্বের সুধা পাবেন ‘ভিনগ্রহের ফুটবলার’?

  • Update Time : রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১০২ Time View

জীবনটা রূপকথার পরশ নয়। এখানে পা বাড়ালেই সমস্যার পাহাড়। বন্ধুর সেই পথে কখনো সামনে এসে দাঁড়ায় ঘোর দুঃসময়। শঙ্কা শেষে কখনো আবার হেসে উঠে সাফল্যের সূর্য। যাপিত জীবনের চলার পথটা এমনই অচেনা, কাঁটাহীন ফুলে ফুলে সাজানো নয়! লিওনেল মেসিও তো ভিনগ্রহের কেউ নন। তার জীবনটাও এমনই রহস্যে মোড়া।

নিরন্তর অভাবের শিশু বয়সটা পেরিয়ে এসে কতো কিছুই না পেলেন! খ্যাতি, অর্থ, সাফল্য, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুন্দর-সাজানো উপচে উঠা সুখের সংসার। কিন্তু তারপরও যেন চাঁদের কলঙ্কের মতো লেগে আছে কালো দাগ! একটা অপূর্ণতা, একটা দীর্ঘশ্বাস তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। অনেক কিছুই তো নামের পাশে জমা হলো। কিন্তু ওই যে সোনার পরী তার কাছে গিয়েও যে ছুঁয়ে দেখতে পারলেন না!

২০১৪ সালে নিঃশ্বাস দূরত্বে থেকে অসহায়ের মতো দেখেছেন, সোনার ট্রফি চলে যাচ্ছে আরেকজনের হাতে। জার্মানির বিপক্ষে সেই ফাইনালে হারের পর আরেকটা বিশ্বকাপেও ‘ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছেন ভিতরের রাস-উৎসব!’ আরাধ্য ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা, চুমু আঁকা হয়নি আর!

ছবিগুলো চেনা, দৃশ্যগুলো ভক্তদের হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয় প্রতিনিয়ত। গত চার বিশ্বকাপেই ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে বাকশূণ্য এক অসহায় ফুটবলারের অবয়ব! যার সব আছে আবার কিছুই যেন নেই!

২০১৪ সালের বিশ্বকাপটা ছিল মনের মতো। বল পায়ে কারিকুরিতে মুগ্ধ তো করেছিলেনই সঙ্গে আর্জেন্টিনা দলটাকেও টেনে তুলেছিলেন একা! কিংবদন্তি ডিয়োগো ম্যারাডোনা পাশে পেয়েছিলেন, ক্লাদিও ক্যানেজিয়া আর গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাদের! মেসি একেবারেই দুর্ভাগা, কেউ যেন নেই তার পাশে। ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে কিচ্ছু করা হল না! অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোৎজের গোলে সর্বনাশ। সোনার ট্রফিটা চলে গেল জার্মানিতে!

সেই বছর ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার হয়েও কান্না ঝরেছে মেসির হৃদয়ে। কিন্তু তখনো তো বয়স ২৭। স্বপ্ন অফুরন্ত। ভেবেছিলেন রাশিয়াতে নিশ্চয়ই স্বপ্নপূরণ হবেই হবে। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচের একটিতে হার, একটি ড্র দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন। তারপর মেসিই ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলেন সব অনিশ্চয়তা। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে দারুণ খেলে দলকে নিয়ে গেলেন দ্বিতীয় রাউন্ডে। অসাধারণ সব পাস, হঠাৎ গতি, আর সুক্ষ চিন্তার জাল ছড়িয়ে চেনালেন আরও একবার। প্রমাণ দিলেন তিনি শুধু ক্লাব ফুটবলেরই কিংবদন্তি নন, দেশের হয়েও দুর্দান্ত!

নকআউটে সামনে ছিল শক্তিশালী ফ্রান্স। ব্যস, এখানে সর্বনাশ। রক্ষণভাগের ব্যর্থতায় তিন গোল দিয়ে হজম করলেন চারটি! স্বপ্ন ফের ভাঙল মেসির

কী আশ্চর্য সেই ফ্রান্সকেই কীনা এবার পেয়ে গেলেন জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে। মাঝখানে কোপার শিরোপা জিতেছেন। তবে এবার বিশ্বকাপ জিতলেই মিলবে জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। বয়স হয়ে গেছে ৩৫। নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে উজাড় করে দিচ্ছেন সামনে থেকে। আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ থেকে সেমি-ফাইনাল- অধিনায়কই প্রাণ ভোমরা। ছয় ম্যাচের সবগুলিতে পুরোটা খেলেছেন তিনি। নিজে গোল করেছেন ৫টি, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৩টি। মানে গোল্ডেন বুটের সঙ্গে হাতছানি দিচ্ছে গোল্ডেন বলও।

এই পথ ভ্রমণে রেকর্ডের পর রেকর্ডও গড়েছেন। বিশ্বকাপে মারাডোনার গোল ও ম্যাচ খেলার সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। স্বদেশী কিংবদন্তি গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে বিশ্ব মঞ্চে দেশের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড এখন মেসির (৯৬)। ফাইনালে আজ রোববার ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামলেই জার্মান গ্রেট লুথার মাথুসকে (২৫) ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও হয়ে যাবে কিং লিওর।

তবে এতোসব অর্জন আড়ালেই চলে যাবে সেই ৬.১৭৫ কেজি ওজনের সোনার ট্রফিটা না পেলে। এই জীবনে কতো কিছুই দেখলেন আর্জেন্টিনার এক অবহেলিত অঞ্চল রোজারিওতে বেড়ে উঠা এই কিশোর। হরমোনজনিত রোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ১১ বছর বয়সে যে মেসি ফুটবল স্কাউটদের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিলেন, তার জীবনে এতো চমক অপেক্ষা করছে কে জানতো? কে জানতো ন্যাপকিন পেপারে লেখা সেই চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারটিই উঠে বনে যাবেন এই গ্রহের সেরা ফুটবলার। যার নামে স্লোগান উঠবে লাতিন-ইউরোপ ছাড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট কোন একটা প্রান্তিক গ্রামেও!

ক্যারিয়ারে কী না পেয়েছেন। ১০টি লা লিগা, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি ফিফা ক্লাব কাপ ট্রফি! আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে রানার্স আপ, কোপা আমেরিকার শিরোপা। সাতবার ফিফার বর্ষসেরা। অর্জন আর রেকর্ডের এমন তালিকা করতে গেলে দিন ফুরিয়ে যাবে, তালিকা শেষটা দেখা যাবে না।

তারপরও তো আক্ষেপের শেষ নেই। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, পেলে এমন কী জিনেদিন জিদানের পাশেও লিওনেল মেসির নামটা অনেকে লিখতে চাইছে না। ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর। বিশ্বকাপ না জেতা কাউকে কখনোই যে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নিয়ে আসতে কার্পণ্য হয়!

সেটা না হলে কবেই তো জর্জ বেস্ট, ইউসেবেবিও, জর্জ উইয়াহ কিংবা আলফ্রেডো ডি স্টেফানো’দের নামটা ম্যারাডোনা, পেলে কিংবা জিনেদিন জিদানের আগেই লেখা হতো! একটা বিশ্বকাপই কী শেষ কথা মেসির জন্য? উত্তরটা অন্তত এই একটা প্রজন্ম কখনোই সরাসরি দিতে চাইবে না। কারণ ক্ষুদে ফুটবল জাদুকর তো যুগ ছাড়িয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বকাপ না জিতলেও হয়তো মেসি থাকবেন মেসি হয়েই।

তবে এসব যুক্তি অন্তত রোজারিও এই ফুটবল জাদুকরকে সন্তুষ্ট করতে চাইবে না। অনেক হয়েছে সেই অসহায়, বিধ্বস্ত চেহারার ছবি। এবার ওই সোনার পরীটাই চাই তার। বিশ্বকাপ ট্রফি ছাড়া মেসির জীবনের গল্পটা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে! তেমন একটা গল্প নিশ্চয়ই ফুটবল ইশ্বরও চাইছেন না!

আজ রাতেই ফয়সালা, অমরত্বের সন্ধানে জাদুকর লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
স্বপ্নপূরণের ক্ষণগণনা
অপেক্ষা উদ্বোধনের
দিন
ঘন্টা
মিনিট
সেকেন্ড
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Customized By BreakingNews