
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আইরিশদের বিপক্ষেও জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের। প্রথমে ব্যাট করে সাকিব ও হৃদয়ের প্রায় শতকের ইনিংসে ৫০ ওভার শেষে রেকর্ড ৩৩৮ রান তোলে বাংলাদেশ। বিশাল টার্গেটের বিপক্ষে পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে শুরু থেকেই ব্যাকফুটে সফরকারীরা। স্বাগতিক বোলারদের তোপে ৩০ ওভার পাঁচ বলে ১৫৫ রানেই থামে আইরিশদের ইনিংস। ১৮৩ রানের জয় দিয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এটিই রানের ব্যবধানে সর্বোচ্চ জয় টাইগারদের।
জয়ের জন্য ৩৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ফিজের প্রথম ওভারে মাত্র এক রান পায় আইরিশরা। তাসকিনের পরের ওভারে আসে দুই রান। প্রথম পাঁচ ওভার শেষে আসে ২১ রান। সপ্তম ওভারে নাসুমের বলে মিড উইকেটে দিয়ে ছক্কা হাঁকান পল স্ট্রার্লিং। সাকিবের করা দশম ওভারে দুই ছক্কা ও এক বাউন্ডারিতে আসে ১৫ রান, ফলে অর্ধশতকের ঘর পার হয় আয়ারল্যান্ড। পরের ওভারেই সাকিব ফিরিয়ে দেন ধোয়েনিকে (৩৮ বলে ৩৪ রান)। ৬০ রানে প্রথম উইকেটের পতন। পরের ওভারে এবাদতের শিকার স্ট্রার্লিং (৩১ বলে ২২ রান)। দুই ওপেনারকে হারিয়ে রানের গতি কমে যায় আাইরিশদের। ১৫তম ওভারে এবাদতের দি¦তীয় শিকার হ্যারি টেক্টও (আট বলে তিন)। এবারো ক্যাচ নেন মুশি। ফলে ৬৮ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন, ছন্দপতন আইরিশ ব্যাটিং লাইনে।
১৬তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে (প্রথম স্পেলে ৩-০-১০-০) বোলিংয়ে এসে সরাসরি বোল্ড করেন অধিনায়ক বালবার্নিকে (১২ বলে পাঁচ রান), ৭৩ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন। ১৮তম ওভারে তাসকিনের শিকার টাকার (আট বলে ছয় রান)। ৭৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় আইরিশরা।
এরপর ২৬তম ওভারের নাসুমের জোড়া শিকার। গ্যারেথ ডেলানি ও ম্যাকব্রাইনের বিদায়ে ১১৮ রানে পতন অষ্টম উইকেটের। ফলে গ্যালারিতে জয়ের উৎসব শুরু হয়ে যায়।
এর আগে, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারেই ৩ রানে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। পেসার মার্ক অ্যাডায়ারের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে পল স্টার্লিংকে ক্যাচ দেন তামিম। দলীয় ১৫ রানে তামিমকে হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার লিটন দাস ও ইনফর্ম নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু প্রথম পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পেসার কার্টিস ক্যাম্পারের বলে শর্ট কভারে পল স্টার্লিংয়ের ক্যাচে বিদায় নেন দুই বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৩১ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলা লিটন।
ভালো শুরু করেও ১৭তম ওভারে স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনের বলে বোল্ড হন ৩৪ বলে ২৫ রান করা শান্ত।
৮১ রানে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান সাকিব ও হৃদয়। ২১তম ওভারে ১০০, ৩০তম ওভারে দলের রান দেড়শতে নেন তারা। ৬৫ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম ও টানা তিন ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ দুই ওয়ানডেতেও অর্ধশতক করেছিলেন সাকিব।
৫৫ বল খেলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন হৃদয়। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতে অর্ধশতক করলেন হৃদয়। তার আগের ওভারে স্পিনার হ্যারি টেক্টরের বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ২২ রান তুলে ৮৯ রানে পৌঁছেন ২০১৯ সালের জুনের পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছিলেন সাকিব। ৩৮তম ওভারে পেসার গ্রাহাম হুমের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৯৩ রানে আউট হন সাকিব। চতুর্থ উইকেটে ১২৫ বলে ১৩৫ রান যোগ করে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন সাকিব-হৃদয়।
দলীয় ২১৬ রানে সাকিবের বিদায়ে উইকেটে এসেই মারমুখী হয়ে ওঠেন মুশফিকুর রহিম। একবার জীবন পেয়ে তিনটি করে চার-ছক্কায় হুমের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ২৬ বলে ৪৪ রান করেন মুশি। পঞ্চম উইকেটে হৃদয়ের সাথে ৪৯ বলে ৮০ রান যোগ করে বাংলাদেশকে তিনশ রান করার পথ মসৃণ করেন মুশফিক।
মুশফিক ফেরার ওভারেই নাভার্স-নাইন্টিতে আউট হন হৃদয়। হুমের বলে বোল্ড হওয়ার আগে আট বাউন্ডারি ও দুই ছয়ে ৮৫ বলে ৯২ রান করেন তিনি। অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে আউট হন হৃদয়।
শেষদিকে ইয়াসির আলী ১০ বলে ১৭, তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ ৭ বলে ১১ রানে ৫০ ওভারে আট উইকেটে ৩৩৮ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় রান। আয়ারল্যান্ডের হুম ৬০ রানে চার উইকেট নেন।
আগামীকাল একই সময়ে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।
Leave a Reply