ঈদের আনুষ্ঠানিক ছুটি শুরু হয়েছে বুধবার। দেশের সবচেয়ে বড় এই উৎসব উদযাপনে চলছে সব প্রস্তুতি। নতুন পোশাকের পাশাপাশি ঈদে ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় বাহারি সব খাবারের পদ। ঈদ ঘনিয়ে এলেও রাজধানীর ভোগ্যপণ্যের বাজারে তেমন ক্রেতা চাপ দেখা যায়নি। তবে ক্রেতা কম থাকলেও বেড়েছে চাহিদা সম্পন্ন বেশিরভাগ পণ্যের দাম।
বিশেষ করে গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, মুরগি ও গরম মসলাসহ চিনির দামে উত্তাপ বিরাজ করছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। বিক্রেতারা বলছেন, দু-একটি পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে এবার বাজারে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। অতীতে ঈদপূর্ব বাজারের শেষদিকে এমন ক্রেতা খরা আর দেখা যায়নি।
সাধারণত রমজানের শেষ সপ্তাহে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ব্যস্ত সময় পার করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কিন্তু ঈদের আনুষ্ঠানিক ছুটি শুরু হওয়ার পরও রাজধানীর বাজারে তেমন ক্রেতা ভিড় দেখা যায়নি। মুদিপণ্য থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার, সবখানেই একই অবস্থা। অথচ ঈদের মাত্র আর একদিন বাকি। তাই বিক্রেতারা
বেচাকেনার জন্য তাকিয়ে আছেন চাঁদ রাতের দিকে।
বরাবরের মতো ঈদ উপলক্ষে বাজারে বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে স্থিতিশীল হলেও চড়া হয়েছে সোনালি মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। উত্তাপ বিরাজ করছে ইলিশের দামেও। অন্যদিকে রমজান শুরুর আগেই বেড়েছে গুঁড়া দুধ ও সেমাইয়ের দাম। এ ছাড়াও বেড়েছে সব ধরনের গরম মসলা, পোলাওয়ের চাল এবং চিনির দামও।
বিক্রেতাদের হিসাবেই গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে ভোগ্যপণ্যে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ফলে মানুষ কম পণ্য কিনছেন। এতে ব্যসায়ীদের পণ্য বিক্রির পরিমাণ কমেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। বুধবার কারওয়ান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. সেলিম বলেন, গত ঈদে যেসব খাদ্যপণ্য কিনেছি এবারও প্রায় সমপরিমাণে সেসব পণ্যই কিনেছি। তবে ব্যয় গতবারের থেকে অনেক বেড়েছে। এই ক্রেতা জানান, গত বছর ঈদে প্রায় ৪ হাজার টাকার বাজার করেছিলেন তিনি, কিন্তু এবার একই পরিমাণের বাজারে তার ৭ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।
অন্যদিকে বাজারে মূলধন বাড়িয়ে প্রত্যাশিত ব্যবসা না হওয়ার দাবি করছেন বিক্রেতারা। তারা জানান, পণ্যের দাম বাড়লেও তাদের মুনাফা বাড়েনি। কিন্তু বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কারওয়ান বাজারের মুদি পণ্যের খুচরা বিক্রেতা আবদুর হালিম বলেন, কাল বাদে পরশু ঈদ, কিন্তু সে অনুপাতে বেচাকেনা নেই। বিরতি দিয়ে কিছু কাস্টমার আসেন, কিন্তু বেশিরভাগই সীমিত পরিমাণে পণ্য কিনছেন। এর থেকে করোনাকালেও বেশি বেচাকেনা হয়েছে।
হালিমের মতো রাজধানীর বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের দাবি এবার ঈদে কাঙ্ক্ষিত বিক্রি নেই তাদের। সাধারণত এই সময়ে কারওয়ান বাজারের বড় মুদি দোকানগুলোতে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১ লাখ টাকার ওপরে পণ্য বিক্রি হয়। কিন্তু এবার এর অর্ধেক বিক্রিও নেই। তবে চাঁদ রাতে ঈদের আগের দিন বিক্রি বাড়তে পারে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
কল্যাণপুর নতুন বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ দত্ত বলেন, 'রোজার শুরুর দিকে পাইকারি পণ্যের বিক্রি বেশি থাকে আর শেষ ৭ দিন খুচরা পণ্যের। তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়। সে হিসাবে বাজারে তেমন ক্রেতা চাপ নেই। অথচ গতবারও রমজানের শেষ সপ্তাহে দম নেয়ার মতো সময় ছিল না। এবার ঈদের আগের দিন ক্রেতা কতটা বাড়বে তাও বলা যাচ্ছে না।'
এদিকে ঈদের আয়োজনে অন্যতম প্রয়োজনীয় পণ্য চিনি। কিন্তু এবার ঈদ বাজারে নির্ধারিত দামের থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে চিনির দাম কমিয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার একদিন পর নতুন দাম কার্যকর করা হয়। কিন্তু গত সপ্তাহ জুড়েই ক্রেতাকে চিনি কিনতে হয়েছে ১১২ টাকা কেজি দরে। ঈদপূর্ব বাজারে এ দাম আরেক দফা বেড়ে প্রতি কেজি দাঁড়িয়েছে ১২০ থেকে ১২২ টাকা। খোলা চিনির এমন দামের কারণে বাজার থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি।
এ ছাড়াও বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হলেও সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা কেজি দরে। যা ঈদের আগে আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাড়তি রয়েছে লেয়ার মুরগির দামও। গত সপ্তাহে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা দরে। এ ছাড়াও কেজিতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৭৯০ টাকা দরে। বাজারের বাইরেও বিশেষ ব্যবস্থায় এলাকা ভিত্তিক গরুর মাংস বিক্রির উদ্যোগ দেখা গেছে। এলাকা ভেদে প্রতি কেজির দাম ধরা হয়েছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার ঈদে তুলনামূলক গরুর মাংসের বিক্রি কম। আগে একজন ক্রেতা গড়ে ৪ থেকে ৫ কেজি মাংস কিনলেও এখন কিনছেন ১ থেকে ২ কেজি। বছর ব্যবধানে মাংসের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার কারণে বিক্রি কমেছে। যথারীতি ঈদে বিশেষ চাহিদা থাকার কারণে বাড়তি দাম রয়েছে মসলা পণ্যের। দেশি হাইব্রিড আদা ও রসুনের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও আমদানি আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৪০ টাকা এবং রসুন ১৫০ টাকার ওপরে। এ ছাড়াও বেড়েছে জিরা ও এলাচের দাম। রমজানের শুরুতে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে জিরা বিক্রি হলেও ঈদপূর্ব বাজারে তা হচ্ছে ৭৫০ টাকার ওপরে এবং কেজিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে।
এ ছাড়াও বাড়তি দাম অব্যাহত রয়েছে গুঁড়ো দুধ ও সেমাইতে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে দাম না বাড়লেও রোজার আগে প্রায় সব পণ্যের দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছিল। যা এখনো অব্যাহত আছে। বর্তমানে বাজারে ডিপেস্নামা ৫০০ মিলিগ্রাম দুধের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ টাকা দরে যা রমজানের আগে ২১৫ টাকা ছিল। কিছুটা বাড়তি মার্কস গুঁড়ো দুধেও, হাফ কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকার ওপরে। তবে অন্যান্য ব্র্যান্ডের গুঁড়ো দুধ প্রতি ৫০০ মিলিগ্রাম বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা দরে।
বাজারে সেমাইয়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সেমাইয়ের দু-একটি ব্র্যান্ডের দাম কিছু বাড়লেও অন্যান্য সেমাইয়ের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রামের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। তবে বাজারে খোলা সেমাইয়ের বিক্রি কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, দামে সস্তার কারণে আগে খোলা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হলেও এখন তেমন একটা ক্রেতা চাহিদা নেই। সবাই প্যাকেটজাত সেমাই কিনছেন। বিক্রেতাদের হিসাবে গত ঈদের তুলনায় এ বছর সেমাইয়ের প্যাকেটে দাম বেড়েছে ১০ টাকার মতো।
অন্যদিকে ঈদ উপলক্ষে কিছুটা বাড়তি পোলাওয়ের চালের দাম। রমজানের শুরুতে প্রতি কেজি খোলা পোলাওর চাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। চড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাটজাত চালের দামও; প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকার ওপরে। দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এই সুগন্ধি চালের দাম। এক বছরের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এ ছাড়াও উত্তাপ বিরাজ করছে ইলিশের দামে। যত বড় মাছ, দাম তত বেশি। বিক্রেতারা বলেন, ঈদ উপলক্ষে বড় ইলিশের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়তি রয়েছে, তবে ছোট ইলিশের দাম তুলনামূলক কম। এদিন বাজারে ৮শ' গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা এবং ৯শ' গ্রাম ওজনের বেশি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি দরে।
<p>সম্পাদক: মো:রোকন উদ্দিন রুমন </p><p>লেখক: আবদুল্লাহ যায়েদ তানজিন </p><p>উপদেষ্টা: মো: মোশাররফ হোসেন </p><p>thedailypadma@gmail.com<br></p><p> বার্তা কার্যালয়: দক্ষিন কমলাপুর,ফরিদপুর সদর, ফরিদপুর। </p><p>মোবাইল:০১৭১১১৪৮৯৫১, ০১৯১১৩০৩২২৯ ইমেইল: thepadma24@gmail.com<br></p>
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।