1. admin@thedailypadma.com : admin :
কক্সবাজারে ট্রলারে দশ লাশ: লুটের শিকার জেলেরা দস্যুতার শোধ নিতেই হত্যাকাণ্ড ঘটায় - দ্য ডেইলি পদ্মা
সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৪ অপরাহ্ন

কক্সবাজারে ট্রলারে দশ লাশ: লুটের শিকার জেলেরা দস্যুতার শোধ নিতেই হত্যাকাণ্ড ঘটায়

  • Update Time : শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩
  • ১১০ Time View
দুদিন ধরে সাগর ঘুরে মাছ ধরার তিনটি নৌকাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জলদস্যুরা। লুট করে নেয় লাখ লাখ টাকার মাছ আর জাল। সেগুলো উপকূলে নিয়ে বিক্রি করে আবার ডাকাতির জন্য সাগরে ফিরছিল দস্যুদের ট্রলার। এদিকে লুটের শিকার জেলেরা দস্যুতার শোধ নিতে নজরে রেখেছিল ট্রলারটিকে। রাতভর অপেক্ষার পর ভোরবেলায় ঘিরে ধরে ট্রলারটিকে। তখন এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে দস্যুরা। দুই বন্দুকের গুলি শেষ হওয়ার পর মাছ ধরার চারটি নৌকা থেকে ২৫-৩০ জন মাঝি-মাল্লা হামলে পড়েন দস্যুদের ট্রলারে। কাউকে কুপিয়ে, কাউকে পিটিয়ে, কাউকে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। লাশ গুম করতে বেছে নেওয়া হয় দস্যুদের ট্রলারের কোল্ডস্টোরেজ। জালে পেঁচিয়ে তালাবদ্ধ কোল্ডস্টোরেজের ভেতরে ফেলে রাখা হয় ১০ বা এর বেশি লাশ। পরে ট্রলারটি ডুবিয়ে দেওয়া হয় সাগরে।
কক্সবাজারে গত রবিবার ট্রলার থেকে লাশ উদ্ধারের এই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামিদের বয়ান, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, পুলিশের একাধিক ইউনিটের অনুসন্ধান আর সরেজমিন এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। যাচাই-বাছাই চলছে। খুব দ্রুত আমরা এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।’
মাছ ধরা নৌকার মাঝি-মাল্লাসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ এই ডাকাতির ঘটনায় পেছন থেকে নেতৃত্ব দেন মহেশখালীর সোনাদিয়ার জলদস্যু সুমন, মুনজুর আর মোনাফ। তাদের প্রধান সহযোগী ছিলেন সামশুল আলম ও নুরুল কবির। সুমন-মুনজুর-মোনাফসহ ৪৩ জলদস্যু ২০১৮ সালে মহেশখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র সমর্পণ করেন।
সামশুল ও কবির বর্তমানে মহেশখালীর অন্যতম শীর্ষ জলদস্যু। তাদের বিরুদ্ধে মহেশখালী ও কক্সবাজার সদর থানায় দস্যুতা, অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা রয়েছে। সামশুলের স্ত্রী রোকেয়া বেগম অবশ্য সেটা অস্বীকার করেন। শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি এলাকার বাসিন্দা নুরুল কবিরের বাবা জানিয়েছেন, ২০২১ সালে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তার ছেলেকে পুলিশ সাগরপাড় থেকে গ্রেপ্তার করেছিল।
স্থানীয় সূত্র বলছে, ডাকাতি করতে যাওয়া ট্রলারটির মালিক ছিলেন মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ারছড়া এলাকার ছনখোলা পাড়ার সামশুল আলম। ডাকাতির পর ধরা পড়লে ওই ট্রলারের ভেতর তাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। লাশ গ্রহণ করেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম। এ ঘটনায় হওয়া মামলার বাদীও তিনি।
এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয় মাঝিদের সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে অন্তত সাত-আটটি নৌকায় ডাকাতি করেন সামশুল ও নুরুল কবির। ঈদের আগে আরো একবার ডাকাতি করতে চেয়েছিলেন। সে হিসাব করেই ৭ এপ্রিল সাগরে নামার তিন দিন আগে একটি গোপন বৈঠক হয়। আগে অংশ নেওয়া ডাকাতরা আগ্রহ প্রকাশ না করায় নতুন মুখ খুঁজতে থাকেন তারা।
শেষ পর্যন্ত ১২-১৩ জনের দল ঠিক করা হয়। এর মধ্যে পাঁচ-ছয়জন পুরনো জলদস্যু থাকলেও সাতজন ছিলেন নতুন। তাদের মধ্যে মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের এক পরিবারের পাঁচ সদস্য। এদের তিনজনের বয়স আবার ১৮ বছরের কম। বাকি দুজন আসেন চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়ন থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র, এলাকাবাসী ও নিহতদের পরিবারের তথ্যমতে, সামশুল আলম ১২-১৩ জন দস্যু নিয়ে ৭ এপ্রিল বিকাল ৫টার দিকে হরিয়ারছড়া ঘাটের জাইরার খাল দিয়ে সাগরে প্রবেশ করেন। ৭ ও ৮ এপ্রিল রাতে তিনটি নৌকায় ডাকাতি করেন এই দস্যুরা। ৮ এপ্রিল রাতে ডাকাতি শেষে উপকূলে ফিরে আসে দস্যুদের ট্রলারটি।
বাইট্যা কামালের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় খুন:
কক্সবাজার মডেল থানায় নিহত অভিযুক্ত জলদস্যু সামশুল আলমের স্ত্রী রোকেয়া যে মামলাটি করেন, সেখানে চারজনের নাম উল্লেখ করেছেন। তাদের একজন মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা কামাল হোসেন ওরফে বাইট্যা কামাল। কামাল ছাড়াও আছেন তার ভাই আনোয়ার হোসেন, বাবুল মাঝি ওরফে শুক্কুর কোম্পানি এবং মোহরাকাটার করিম সিকদার। তারা চারজনই ট্রলারের মালিক। মামলার পরপর বিকালেই মহেশখালী থেকে কামাল হোসেন ও করিম সিকদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, জলদস্যুদের হাতে লুট হওয়া তিন নৌকার মধ্যে দুটি ছিল বাইট্যা কামালের। অন্যটি ছিল তার ভাই আনোয়ারের। সপ্তাহখানেক আগেও কামালের দুটি নৌকায় হামলা করেছিল জলদস্যুরা। কামাল জানতে পারেন সামশুল আলমই নৌকা নিয়ে বারবার দস্যুতা করছেন। তাই আগে থেকেই সামশুলের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন কামাল। ৭ ও ৮ এপ্রিলের লুটের পর দস্যুদের খুন করার জন্য ট্রলারের মাঝিদের হুকুম দেন তিনি। সাগরে দস্যুদের নৌকার অবস্থান নজরদারি ও হামলাকারী জেলেদের নির্দেশনা তিনি দেন ডাঙ্গায় বসে মোবাইলে।
দস্যুদের ট্রলারে হামলা করা চার নৌকার মধ্যে একটিতে ছিলেন বাবু নামের এক মাঝি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়েছে। তবে এর আগে তিনি এলাকায় ফিরে জানান, ৭ এপ্রিল রাতে মাছ আর জাল লুট হওয়ার পরদিন বাইট্যা কামালের নৌকার মাঝি গ্রেপ্তার করিম সিকদারের কাছে একটি ফোন আসে। করিম সিকদার তাদের ডেকে বলেন, জলদস্যু দলের অবস্থান জানতে পেরেছেন। জলদস্যুদের ট্রলার কুতুবদিয়া ঘাটের কাছে নোঙর করেছে। মাছ আর জাল নামিয়ে দিয়ে তারা আবার ফিরবেন। তারা এ-ও জানতে পারেন, ডাকাতরা তাদের মাছ আর জাল প্রায় ১৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এরপর অন্য আরো তিনটি নৌকা সঙ্গে নিয়ে ৮ এপ্রিল রাতভর দূর থেকে ডাকাতের ট্রলারের ওপর নজরদারি করেন তারা। ভোররাতের দিকে যখন ডাকাতদের ট্রলারটি সাগরমুখী হতে শুরু করে, তখন হামলার শিকার হওয়া একাধিক নৌকার মাঝি-মাল্লা তাদের পিছু নেন। জলদস্যুদের ট্রলার সাগরের দিকে ছুটতেই বুঝতে পারেন, তিন-চারটি নৌকা তাদের ধাওয়া করছে। কিছুক্ষণ পর দস্যুদের ট্রলারের দুই পাশ থেকে দুই বন্দুক দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি আসতে থাকে ধাওয়া করা ট্রলারগুলোর দিকে। ভয়ে সবাই নৌকার ভেতরে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চারটি ট্রলার থেকে জেলেরা একসঙ্গে দস্যুদের ট্রলারে হামলা চালিয়ে সবাইকে হত্যা করে।
গত রবিবার বাঁকখালী নদীর মোহনায় দস্যুদের ট্রলার থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধারের পর সেখানে যান মহেশখালীর এক পরিবারের পাঁচজনের আত্মীয় আলী আজগর। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। সবার শরীরে রামদার কোপ, হাত বাঁধা, হাত-পায়ের সঙ্গে লোহার পেরেক ঢোকানো। কারও গলায় দড়ি দেওয়া।’
জনপ্রতি তিন হাজার করে টাকা দেন সামশুল-নুরুল: 
জলদস্যু নুরুল কবিরের প্রলোভনে পড়ে ডাকাত দলের সঙ্গে যোগ দেন তার পাশের বাড়ির ছেলে ওসমান গণি (১৭)। তার সঙ্গে যান এক মাস আগে ওসমানের বোনকে বিয়ে করা শওকত উল্লাহ। এই দুজনের সঙ্গে ডাকাতিতে আরো অংশ নেন ওসমানের চাচাতো ও ফুফাতো ভাই পারভেজ মোশারফ ও সাইফুল্লাহ।
পরিবারটির সূত্রে জানা যায়, তারা মানুষের কাছে শুনেছেন ডাকাতি করতে যাওয়ার তিন দিন আগে নুরুল তাদের ঈদের খরচের জন্য তিন হাজার করে টাকা দেন। একইভাবে আনা হয়েছিল চকরিয়া থেকে সাইফুল ইসলাম, মো. শাহজাহানের ও তারেক জিয়াকে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
স্বপ্নপূরণের ক্ষণগণনা
অপেক্ষা উদ্বোধনের
দিন
ঘন্টা
মিনিট
সেকেন্ড
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Customized By BreakingNews