পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর (মুহুরী, ফেনী, হালদা, কর্ণফুলী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী) পানি কমছে। এতে আজ চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হতে পারে।
কক্সবাজারে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত তেমন বৃষ্টি হয়নি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, গত পাঁচ দিনের বর্ষণে জেলার ৯টি উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ডুবে, পাহাড়ধস ও সাপের কামড়ে এ পর্যন্ত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। টানা ভারি বর্ষণে সড়ক ও জনপথের ৫৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন।
নতুন এলাকা প্লাবিত
টানা বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চকরিয়ার উপকূলীয় সাতটি ইউনিয়ন গতকাল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তবে উপজেলার পূর্বাংশের অপেক্ষাকৃত উঁচু ইউনিয়নগুলোর পানি কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। গতকাল পানিতে তলিয়ে ছিল এই দুই উপজেলার ৭০ শতাংশ এলাকা। পানিবন্দি ছিল ২৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার তিন লাখের বেশি মানুষ। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় চকরিয়ায় গতকাল সকাল পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে দুই শিশু ও পানির স্রোতে ভেসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় চকরিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্যপ্রধান ডা. শোভন দত্ত।
চকরিয়া ইউএনও জে পি দেওয়ান বলেন, ‘চকরিয়ার ৪০ শতাংশ এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলীয় ইউনিয়নগুলো। সরকারিভাবে রান্না করা ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। স্কাউট সদস্যেদের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ৫০০ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।
পানিতে ভাসছে
বন্দরনগর চট্টগ্রামের সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ গতকালও বন্ধ ছিল। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গতকালও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কে হাঁটু থেকে কোমরপানি ছিল। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়েছে শত শত যানবাহন।
এদিকে সকাল থেকে মহাসড়কের পানি নামতে শুরু করলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার বেশির ভাগ এলাকা এখনো পানিতে ডোবানো। সাতকানিয়া ও চন্দনাইশের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি।
সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের সন্ধ্যায় বলেন, পৌরসভার লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পানিবন্দি। স্থানীয়রা জানায়, পৌর এলাকা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে।
নিখোঁজ নাতির মরদেহ উদ্ধার
চন্দনাইশ উপজেলার জামিজুরি এলাকায় গতকাল বন্যার পানিতে দাদা ও নাতি ভেসে যাওয়ার পর জামিজুরি থেকেই বিকেলে নাতি মোহাম্মদ আনাসের (১০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন দাদা আবু সৈয়দ (৮০)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।
কিছুটা উন্নতি
বান্দরবান শহরের বেশির ভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, বালাঘাটা ও কালাঘাটা এলাকা পাঁচ-সাত ফুট পানির নিচে রয়েছে। জেলার বেশির ভাগ এলাকায় বন্ধ ছিল মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক। সেনাবাহিনী পক্ষ জেলা প্রশাসনকে দুটি ওয়্যারলেস সেট দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দিয়ে সেনা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কিছুটা জরুরি খবর নেওয়া হচ্ছে।
লামা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। বুধবার সকালে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড়ধসে প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
পানি বৃদ্ধি
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি না হয়েও মেরুং এলাকার পানি বেড়েছে। গতকাল দীঘিনালা সেনা জোনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর হালদা নদীর বাড়িঘোনা খালে লোহার ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকা থেকে পানিতে পড়ে নিখোঁজ রাউজানের ব্যবসায়ী সাহেদ হোসেন বাবুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় নিখোঁজের ৩৩ ঘণ্টা পর গতকাল ভোরে ঘটনাস্থল থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে রাউজানের উরকির চর ইউনিয়নের হালদার ছায়ার চর থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেন উরকির চরের চার-পাঁচ যুবক।
<p>সম্পাদক: মো:রোকন উদ্দিন রুমন </p><p>লেখক: আবদুল্লাহ যায়েদ তানজিন </p><p>উপদেষ্টা: মো: মোশাররফ হোসেন </p><p>thedailypadma@gmail.com<br></p><p> বার্তা কার্যালয়: দক্ষিন কমলাপুর,ফরিদপুর সদর, ফরিদপুর। </p><p>মোবাইল:০১৭১১১৪৮৯৫১, ০১৯১১৩০৩২২৯ ইমেইল: thepadma24@gmail.com<br></p>
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।