1. admin@thedailypadma.com : admin :
গত এক সপ্তাহে ডিমের প্রতি পিসের দাম অন্তত তিন টাকা বেড়েছে - দ্য ডেইলি পদ্মা
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন

গত এক সপ্তাহে ডিমের প্রতি পিসের দাম অন্তত তিন টাকা বেড়েছে

  • Update Time : রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩
  • ৯১ Time View
মাছ, মাংসসহ খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির বাজারে সাধারণ মানুষ যখন হাঁসফাঁস করছে, তখন ডিমের ওপরই ভরসা তাদের। কিন্তু গত এক সপ্তাহে সেই ডিমের প্রতি পিসের দাম অন্তত তিন টাকা বেড়েছে। খুচরায় প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়।

ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে গত বৃহস্পতিবার মাঠে নেমেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের লোকজন।

বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানোর সময় তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের আদায় রসিদে ডিমের দাম উল্লেখ নেই। এতে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তারা মনে করছেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো কারসাজির আশ্রয় নিচ্ছেন।গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকার কাপ্তানবাজারের ডিমের আড়তে অভিযান চালান ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল ও প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম। অভিযানে তাঁরা দেখতে পান, বিভিন্ন ফার্ম থেকে ডিম কেনা হলেও ক্যাশ মেমোতে ডিমের দর এবং মোট টাকার কথা উল্লেখ নেই।

ডিম বিক্রিতে পাকা ক্যাশ মেমো না থাকা, ডিমের মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা ইত্যাদি অপরাধে মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জহিরুল ইসলাম ট্রেডার্স ও মেসার্স মুস্তাফিজ ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।আব্দুল জব্বার মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অভিযানে যেখান থেকে ডিম ক্রয় করা হয়েছে, পাকা ক্যাশ মেমো কিছু পাওয়া যাচ্ছে, কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে ক্যাশ মেমো পাওয়া যাচ্ছে সেখানে দর উল্লেখ নেই। টাকার পরিমাণ লেখা নেই।

শুধু ডিমের সংখ্যা লেখা আছে। যেমন—একটি দোকানে দেখলাম এক লাখ ৬৮ পিস ডিম কিনেছেন, ক্যাশ মেমো আছে। কিন্তু দর কত, মোট টাকা কত, পেমেন্ট করা হয়েছে কত, সে তথ্য লেখা নেই। ফলে বোঝা যাচ্ছে না তাঁরা কী দামে কিনেছেন এবং বিক্রি করছেন, কত লাভে বিক্রি করছেন। এটা অস্পষ্ট।
এখানেই কারসাজিটা রয়েছে, এ রকম মনে হচ্ছে। এ জন্য ওই তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।’রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারি মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুরগির লাল ডিম ১৬৫ টাকা ও সাদা ডিম ১৬০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। বাজারটির ডিমের পাইকারি বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিম মার্কেটে শর্ট। উৎপাদন কম। দেশের যদি ২০ কোটি মানুষ থাকে তাহলে ডিমের উৎপাদন হচ্ছে পাঁচ কোটি। আর ১৫ কোটি ডিম কই পাবেন? এই গরমের সময় উৎপাদন খুবই কম হয়।’

আরেক ডিম বিক্রেতা মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত তিন দিন ধরেই আমরা ১৬০ টাকা ডজন বিক্রি করছি। দাম বাড়ছেই। আগে ১৫০ টাকা ডজন ছিল। ডিম বেশি পাচ্ছি না। আমরা যদি ১০ বান্ডেল অর্ডার দিই, আমাদের দেয় পাঁচ বান্ডেল (১২ কেসে এক বান্ডেল)।’

শেওড়াপাড়ার খুচরা দোকানে এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছিল ১৭০ টাকা। আর এক হালি ৬০ টাকা। এই এলাকার শামীম সরণির আল আমিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. আল আমিন বলেন, ‘৬০ টাকা হালি ডিম বিক্রি করছি। বেশি নিলে কিছু কম রাখা যাবে। আমাদের এই এলাকায় ডিমের দাম দুপুর ১২টা থেকে পরদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক রকম থাকে। এরপর কম বা বেশি হয়।’

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অতিরিক্ত গরমের কারণে মুরগির পেটের ঝুড়ি (ফলিকল) নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং মুরগি মারা যাওয়ায় ডিম উৎপাদন কমেছে; একই সঙ্গে বাজারে সরবরাহ কমেছে। ফলে ডিমের দাম বেড়েছে। দেশের খামারগুলোতে ১০০টি মুরগি থেকে প্রতিদিন ৯২ থেকে ৯৩টি ডিম পাওয়া যায়। কিন্তু এখন ৭০ থেকে ৭৫টি পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে প্রতিদিন প্রয়োজন চার কোটি ৭০ লাখ ডিম। আর উৎপাদন হচ্ছে চার কোটি ৩৫ লাখ। অর্থাৎ ঘাটতি প্রায় ৩৫ লাখ ডিম।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মুহাম্মদ মহসিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে ডিমের সরবরাহ ঘাটতি নেই, এটা বলা যাবে না। প্রচণ্ড গরমের সময় হাজার হাজার মুরগি মারা গেছে। মুরগির শরীরের তাপমাত্রা থাকে ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট, কিন্তু দুই সপ্তাহ আগেও অনুভূত তাপমাত্রা ছিল ১১৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এতে অনেক মুরগির ওভারি (গর্ভাশয়) নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে এখন বৈরী আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র, খাল-বিল, নদীনালা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ বাজারে আসছে না। শাক-সবজির সরবরাহ কমেছে। ফলে এটার বিকল্প হিসেবে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। আর খারাপ আবহাওয়ার কারণে গ্রামে ২ থেকে ৩ শতাংশ ডিম গ্রাম-গঞ্জে আটকে আছে। এতে ডিমের সরবরাহও কমেছে।

তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে মুরগির ফলিকল (মুরগির পেটের ডিমের ঝুড়ি) নষ্ট হয়ে গেছে। আমি নিজেই একজন ফার্মার। অনেক জায়গায় মুরগি কাটার পর বলছে, ডিমের ঝুড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, গলে গেছে। এবার এই ঘটনা ঘটেছে লোডশেডিং আর প্রচণ্ড গরমের কারণে। সারা দেশে যখন লোডশেডিং হয়েছিল তখন। আর দুই সপ্তাহ আগের গরমের জন্যও ওভারির ক্ষতি হয়েছে। তাই উৎপাদন পর্যায়েই ঘটতি হচ্ছে। এতে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সূর্যের আলো পড়লে বা আবহাওয়া ভালো হলে আশা করি কয়েক দিনের মধ্যেই দাম কমবে। আর তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি আরো উন্নত হবে।’

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হঠাৎ করে তো উৎপাদন কমেনি। উৎপাদন যদি কমেই থাকে, সেটা ধীরে ধীরে কমে যায়। কিন্তু আমাদের দামটা বেড়েছে হঠাৎ করে। ডিমের মূল্যবৃদ্ধিতে আসলে যারা বিভিন্ন কারসাজিতে জড়িত থাকে—সিন্ডিকেট, করপোরেট গ্রুপ, মধ্যস্বত্বভোগী ও বিভিন্ন সমিতি দায়ী। গতবার এ রকম আনেককে পাওয়া গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর মামলা করেছিল, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যার কারণে এরা বারবার সংকট তৈরি করছে। এখানে অতিমুনাফাই মুখ্য কারণ। ব্যবসায়ীরা দেখছেন যে এখানে কারসাজি করলে কোনো শাস্তি হয় না।

বিভিন্ন জেলায় অভিযান

খুলনা : হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ডিমের দাম কমাতে খুলনায় অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের নিউ মার্কেট, গল্লামারী বাজার ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কৈয়া বাজারে অভিযান চালায়। এ সময় ডিমের মূল্যতালিকা সংরক্ষণ না করা এবং ক্রয় রসিদ দেখাতে না পারায় তিন ডিমের দোকানিকে আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মাত্র দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে খুলনায় ডিমের দাম হালিপ্রতি ১২ থেকে ১৩ টাকা বেড়েছে। প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা।

ফরিদপুর : ডিমের দামে কারসাজি, বিক্রয় রসিদে মূল্য না থাকা, মূল্যতালিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করায় ফরিদপুর সদর উপজেলার বাইপাস সড়কে অ্যাডভান্সড পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিডস লিমিটেডকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অধিদপ্তর ডিমের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে আড়তে অভিযান পরিচালনা করে। এ ছাড়া হ্যালিপোর্ট বাজারে ডিম, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজারদর তদারকি করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
স্বপ্নপূরণের ক্ষণগণনা
অপেক্ষা উদ্বোধনের
দিন
ঘন্টা
মিনিট
সেকেন্ড
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Customized By BreakingNews