দীর্ঘ ২৭ বছর বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতে অনুষ্ঠিত আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখি হয়েছিল নিউজিল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস। তবে তা সুখকর হলো না ডাচদের জন্য। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কিউইদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হেরে মাঠ ছেড়েছে স্কট অ্যাডওয়ার্ডসের দল। অন্যদিকে, বিশ্বমঞ্চে টানা দ্বিতীয় জয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান নিজেদের দখলে রেখেছে টম লাথামের দল।
সোমবার (৯ অক্টোবর) হায়দরাবাদে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ৩২২ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৪৬.৩ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৩ রানে থামে ডাচদের ইনিংস। এতে ৯৯ রানের বড় জয় পেয়েছে ব্ল্যাকক্যাপসরা।
নিউজিল্যান্ডের দেয়া ৩২৩ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ওপেনার ম্যাক্স ও’দাউদ ও বিক্রমজিৎ সিং। প্রথম ৫ ওভারেই বোল্ট ও ম্যাট হেনরির মত বোলারদের মোকাবেলা করে ১৭ রান তুলে ফেলেন তারা বিনা উইকেটে। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি বিক্রমজিৎ সিং। ৬ষ্ঠ ওভারেই কিউইদের হয়ে প্রথম আঘাত হানেন ম্যাট হেনরি। বিক্রমজিতকে ১২ রানে ফেরান এই পেসার।
ম্যাক্স ও’দাউদও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনিও ১১তম ওভারে স্যান্টনারের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। ১১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদে পড়ে নেদারল্যান্ডস।
এই বিপদে ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন কলিন অ্যাকারম্যান ও বাস ডি লিডি। তারা দুজনই সাময়িক বিপর্যয় সামাল দেন। ১৭তম ওভারে বাস ডি লিডি ট্রেন্ট বোল্টের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ১৮ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। তবে আরেক প্রান্ত আগলে ছিলেন অ্যাকারম্যান।
কিউই বোলারদের বিপক্ষে আগ্রাসী ব্যাটিং করে ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ৩য় অর্ধশতক। পঞ্চাশ পেরুনোর পর কিছুটা খেই হারান তিনি। ৭৩ বলে ৬৯ রান করে মিচেল স্যান্টনারের বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিন। কার্যত নেদারল্যান্ডসের লড়াইয়ের ক্ষমতা তখনই শেষ হয়ে যায়।
অ্যাকারম্যানকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন স্কট অ্যাডওয়ার্ড। তিনিও ৩৫তম ওভারে স্যান্টনারের শিকার হন ৩০ রান করে। ভ্যান ডার মারওয়েও ১ রান করে স্যান্টনারের বলে আউট হন। ৭ উইকেট হারিয়ে কার্যত ম্যাচ শেষ করে ফেলে কিউইরা। শেষ দিকে সিব্র্যান্ড অ্যাঙ্গেলব্রেখট ও রায়ান ক্লেইন কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে। দুইজনের ২৭ বলে ১৮ রানের জুটি ভাঙেন স্যান্টনার।
এবারের বিশ্বকাপে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন এই বা হাতি স্পিনার। শেষ দিকে আরো কোন ডাচ ব্যাটার দাঁড়াতে না পারলে রানেই ২২৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় তারা। আরিয়ান দত্ত দশ নম্বরে নেমে রান ১১ রান করেন। স্যান্টনার ৫টি, ম্যাট হেনরি ৩টি ও রাবিন্দ্রা ১টি করে উইকেট নেন।
এদিন টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট অ্যাডওয়ার্ডস। এ ম্যাচে জিমি নিশামের পরিবর্তে দলে লকি ফার্গুসনকে নিয়ে মাঠে নেমেছে নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের হয়ে যথারীতি ইনিংস উদ্বোধনে নামেন উইল ইয়ং ও ডেভন কনওয়ে। এ দু’জনের ব্যাট থেকে ভালো শুরু পায় কিউইরা।
উইকেটে থিতু হয়েও ব্যক্তিগত ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়ে ৩২ রানে সাজ ঘরে ফেরেন আগের ম্যাচে দেড়শ রান করা কনওয়ে। তার বিদায়ে উইকেটে আসেন রাচিন রবীন্দ্র। তাকে সঙ্গে নিয়ে ৭৭ রানের জুটি গড়েন ইয়ং। এরপর মিকেরেনের বলে বাসের তালুবন্দী হন ৭০ রান করা ব্যাটার ইয়ং। এরপর খানিকটা চাপে পড়ে কিউইরা। তবে সেই চাপ মুহূর্তেই সামলে ড্যারিল মিচেলের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়েন রবীন্দ্র। একই সঙ্গে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধ শতক তুলে নেন তিনি। তাতে কিউইদের স্কোরকার্ড আবারে সচল হয়।
ফিফটির ইনিংস অবশ্য লম্বা করতে পারেননি রবীন্দ্র। মারওয়ের বলে অ্যাডওয়ার্ডসের তালুবন্দী হন তিনি (৫১)। পরে ক্রিজে আসেন কিউই দলপতি টম লাথাম। উইকেটে এসেই হাতখুলে ব্যাটিং শুরু করেন তিনি। এরপর ফিফটি তুলে নেন কিউইদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। উইকেটে এসেই সাজঘরে ফিরে যান গ্লেন ফিলিপস (৪) ও মার্ক চাপম্যান (৫)। তবে শেষ মুহূর্তে মিচেল স্যান্টনারের ক্যামিও ইনিংসে তিনশো পেরিয়ে যায় কিউইরা। তার অপরাজিত ৩৬ -এ ভর করে ব্ল্যাকক্যাপসদের ইনিংস থামে ৩২২ রানে।
নেদারল্যান্ডসের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট শিকার করেন আরিয়ান দত্ত, মিকেরেন ও মারওয়ে।
Leave a Reply