পবিত্র ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন আজ। এ দিনটি তথা ১১ জিলহজও ইসলামের অন্যতম সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ দিন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা কারণে ঈদের দ্বিতীয় দিন কোরবানি করে থাকেন। এ দিন কোরবানির কোনো নির্ধারিত সময় আছে কি না বা এ বিষয়ে করণীয় কি তা নিয়ে ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
হাদিসে ঈদুল আজহার প্রথম দিনকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বলা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় দিনের মর্যাদা। আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, إِنَّ أَعْظَمَ الأَيَّامِ عِنْدَ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَوْمُ النَّحْرِ ثُمَّ يَوْمُ الْقَرِّ
অর্থ : নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো ইউমুন নহর তথা কুরবানির দিন। এরপর হলো পরবর্তী দিন তথা কুরবানির দ্বিতীয় দিন। (সুনানে আবু দাউদ : ১৭৬৫)
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে সারাদিনই কোরবানি করা যায়। অর্থাৎ ফজরের পর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনকি রাতেও কোরবানি দেওয়া যাবে। তবে যদি পশু যবাইয়ে ভুলের আশঙ্কা থাকে তাহলে রাতে কোরবানি করা অনুত্তম।
ইসলামি ক্যালেন্ডারে রাত আগে আসে। সূর্যাস্তের মাধ্যমে একটি দিন শেষ হয়ে নতুন দিন শুরু হয়। তাই জিলহজের ১২ তারিখের সূর্যাস্ত হওয়া মানে জিলহজের ১৩ তারিখ শুরু হয়ে যাওয়া। ১৩ জিলহজ কোরবানি করার সুযোগ থাকে না। তৃতীয় দিন যারা কোরবানি করবেন, তাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার।
ঈদের প্রথম দুদিন রাতেও কোরবানি করা যায়। যদিও অন্ধকারের কারণে জবাইয়ে ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে রাতে কোরবানি না করাই ভালো। কিন্তু প্রথম দুদিন রাতে কোরবানি করলেও কোরবানি হয়ে যায়।
কোরবানির জন্য সর্বোত্তম দিন হলো জিলহজের ১০ তারিখ বা ঈদের প্রথম দিন। তাই প্রথম দিন কোরবানি করার সুযোগ থাকলে প্রথম দিনই কোরবানি করা উচিত। কোনো ওজর ছাড়া কোরবানি ১১ বা ১২ তারিখ পর্যন্ত পেছানো উচিত নয়। তবে কোনো ওজর ছাড়াও ঈদের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেরবানি করলে কোরবানি আদায় হয়ে যাবে।
কোরবানির পশু ক্রয় করার পরও কেউ যদি ঈদের তিন দিন পশুটি কোরবানি করতে না পারে, তাহলে ওই পশুটি জীবিত অবস্থায়ই দান করে দিতে হবে। ১২ তারিখের সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও না জানার কারণে পশুটি জবাই করে ফেললে ওই পশুর সব মাংস সদকা করে দিতে হবে। গোশতের মূল্য জীবিত পশুর চেয়ে কমে গেলে যে পরিমাণ মূল্য কমবে, তাও সদকা করতে হবে।
কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরআনে আল্লাহ তাআলা নামাজের সাথে যুক্ত করে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰکَ الۡکَوۡثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ اِنَّ شَانِئَکَ هُوَ الۡاَبۡتَرُ
নিশ্চয় আমি তোমাকে কাওসার দান করেছি। সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো। নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ। (সুরা কাওসার: ১-৩)
মুসলমান নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যারাই জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদের মালিক থাকে, তারা সামর্থ্যবান বিবেচিত হয় এবং তাদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব হয়।
কোরবানি ওয়াজিব থাকার পরও ঈদের তিন দিন কোরবানি না করলে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি পশুর মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।
Leave a Reply