শেখ হাসিনার বিচারের আগে শহীদ পরিবার বাংলাদেশে নির্বাচন মানবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী। বুধবার (৩০ জুলাই) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে অনুষ্ঠিত এনসিপির মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এক পথসভায় এ কথা বলেন তিনি।
নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে বলবো, আমরা ভারতীয় জনগণের বিরোধী নই। একই গঙ্গাজলে কেউ নামাজ পড়ে, কেউ সিঁদুর পড়ে। কিন্তু আমরা আপনাদেরকে সাবধান করে দিতে চাই, আপনারা দ্রুত বাংলাদেশের সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দিন। কারণ, সে খুন করে পালিয়েছে। আমাদের শহীদদের মায়েরা শেখ হাসিনার বিচারের জন্য এখনও অপেক্ষারত। বাংলাদেশে যতদিন শেখ হাসিনার বিচার না হবে, ততদিন ভারত সরকার থেকে যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, শহীদ পরিবার বিচারের আগে বাংলাদেশে নির্বাচন মানবে না।’
এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা বর্তমান সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি- ভারতের সঙ্গে যেসব অসম চুক্তি হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণের জন্য, বাংলাদেশের রাষ্ট্রকে নতুনভাবে সাজানোর জন্য, সেই সকল অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে। ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছিল, তা জনগণের সামনে নিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি সেসব চুক্তি জনগণের সামনে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে জনগণের সামনে উন্মোচন হবে- ভারত কি আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ছিল, নাকি আমাদের শোষণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে কাঁটাতারে ফেলানির মরদেহ ফেলে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনতার ওপর যে ধরনের নিপীড়ন চালানো হয়েছে, আধুনিক সভ্যতার কোনও রাষ্ট্র এমন নির্যাতনের শিকার হয়নি। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভারতীয় যে নাগরিক বিল রয়েছে, শেখ হাসিনা সেখানে মোদি সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেখানকার বাঙালি মুসলমানদেরকে রাতের বেলায় বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ভবিষ্যতে কেউ যদি স্বৈরাচার হয়ে ফিরে আসে, তাদের পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পতিত সরকার ভারতের কাছে বাংলাদেশের নদীবন্দর থেকে শুরু করে প্রাণ-প্রকৃতিসহ সবকিছু বর্গা দিয়েছিল।’
পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের আহত ভাইয়েরা এখনও হাসপাতালে রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গহানি করেছে বাংলাদেশে সংস্কারের জন্য। যদি বাংলাদেশে সংস্কারের বিরুদ্ধে কেউ যেতে চায়, কাতারে কাতারে হাসপাতাল থেকে আমাদের আহত ভাইয়েরা রাজপথে নেমে আসবে। দেখবো আপনাদের চাঁদাবাজির কতটুকু শক্তি। সেই পেশিবলের শক্তির সামনে আমরাও দাঁড়াবো, রক্তের গঙ্গা বয়ে যাবে। বাংলাদেশে আমরা আর কোনও ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেবো না।’
এ সময় শেখ মুজিবকে ভারতীয় এজেন্ট উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার বাপ, বঙ্গবন্ধু একটা ভারতীয় এজেন্ট। আমাদেরকে একটা সংবিধান বানিয়ে দিয়েছিল, যেই সংবিধানে বাংলাদেশে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছিল। বাঙালি বলে অন্যান্য জাতিসত্তাকে তারা বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। আমাদের হিন্দু ভাইদের জমিজমা দখল করেছিল, তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল। আলেমদের জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশের ইসলামের বিরুদ্ধে তারা ইন্ডিয়ার প্রেসক্রিপশনে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।’
এ সময় পথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, ঢাকা জেলার সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও ঢাকা জেলার সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মেহরাব সিফাত প্রমুখ।
Leave a Reply