সাগর থেকে হতাশ হয়ে ফিরছেন ভোলার জেলেরা
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মাছঘাটের জেলে আবুল হাসেম মাঝি গত ২৩ জুলাই সামরাজঘাট থেকে ১৮ জন মাঝি-মাল্লাসহ প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে মাছ ধরার সরঞ্জাম ও খাবার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যান। ছয় দিন পর আবার ঘাটে ফিরে এসে মাত্র এক লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেন। এতে তাঁর ৫০ হাজার টাকার ওপরে লোকসান হয়েছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরে বেশির ভাগ মাছের আড়তে সুনসান নীরবতা। ভরা মৌসুমে ইলিশের সরবরাহ না বাড়ায় জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদেও মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী মো. মিজানুর রহমান বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কিছুটা শান্ত হলেও দুই দিন ধরে জেলেরা সাগরে ইলিশ পাচ্ছেন না। এখন এক কেজি ওজনের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায় এবং ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায়।
চাঁদপুরে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে
চাঁদপুরের পাইকারি বাজারে ইলিশের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে দাম এখনো সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে প্রতি মণ ইলিশের দাম পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। গতকাল নোয়াখালী সদরের চেয়ারম্যানঘাট হয়ে হাতিয়া ও তার আশপাশে ধরা পড়া ইলিশের বড় একটি চালান চাঁদপুরে পৌঁছে।
চাঁদপুরের বড় স্টেশন পাইকারি মাছ বাজারের ব্যবসায়ী সম্রাট বেপারী গতকাল জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে দাম কমেনি। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৫৮ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৫২ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকায়। আর ৫০০ গ্রামের নিচে প্রতি মণ ৩৫ থেকে ৩৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া দুই কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি দুই হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবেবরাত জানান, বড় স্টেশন পাইকারি মাছ বাজারে গতকাল সব মিলিয়ে ৭০০ মণ ইলিশ বেচাকেনা হয়েছে। আগের বছরগুলোতে এই সময় দু-তিন হাজার মণ ইলিশ বেচাকেনা হতো।
ইলিশ গবেষকের প্রত্যাশা
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নানা কারণে প্রত্যাশা অনুসারে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুমে আমাদের এখানে পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই। বৃষ্টি, নদীতে পানিপ্রবাহ—এসবের সঙ্গে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন জড়িত। এবার অনাবৃষ্টির কারণে নদীতে স্রোত নেই, নদীর মোহনায় লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ইলিশ নদীমুখো হচ্ছে না বা উপকূলের কাছাকাছি আসছে না। ইলিশ স্রোতের প্রতিকূলে চলতে ভালোবাসে। কাঙ্ক্ষিত স্রোত না থাকায় উজানে ইলিশ আসছে না। আমাদের পর্যবেক্ষণ এবং চাঁদপুর, ভোলা অঞ্চলের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের মেঘনা মোহনা পর্যন্ত দেড় শতাধিক ডুবোচর রয়েছে, যার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, ইলিশের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া পরিবেশ বদলের সঙ্গে সঙ্গে নদ-নদীতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণও কমে গেছে। এসব কারণে নদীতে ইলিশ কমেছে, অন্যদিকে সাগরে বেড়েছে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে জেলেদের জাল। সমুদ্র থেকে নদীতে আসার পথে জেলেরা জাল পেতে রাখছেন। জেলেরা জানেন কোন পথে ইলিশ আসবে। বড় ইলিশ ওই জালেই আটকে যাচ্ছে। নদীতে আসতে পারছে না।’
তথ্য সূত্র: কালের কণ্ঠ
Leave a Reply