ফরিদপুর শহরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনে ৪ শ’ কাউন্সিলর ও ৬ শ’ ডেলিগেটর থাকছেন। আর সম্মেলনস্থলে নিযুক্ত থাকছেন ৩ শ’ স্বেচ্ছাসেবী। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে বাইরে থেকে শহরে সবধরনের যান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ফরিদপুর শহরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনে ৪ শ’ কাউন্সিলর ও ৬ শ’ ডেলিগেটর থাকছেন। আর সম্মেলনস্থলে নিযুক্ত থাকছেন ৩ শ’ স্বেচ্ছাসেবী। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে বাইরে থেকে শহরে সবধরনের যান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
জানা গেছে, সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি রয়েছেন প্রেসিডিয়াম মেম্বার ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপুমনি এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, বন ও পরিবেশ সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজি, ইকবাল হোসেন অপু এমপি, সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম এমপি।
প্রধান বক্তা রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনস্থলে ১৫ হাজার নেতাকর্মীর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫০০ সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি থাকছে সিসি ক্যামেরা। ঢাকা থেকে কলরেডি মাইক ভাড়া করে আনা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনস্থল ও আশেপাশে উপস্থিত হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। বুধবার বিকেলে সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। জেলা নেতৃবৃন্দ সম্মেলনস্থল প্রস্তুতের কাজ তদারকি করেছেন। পুরো মাঠ জুড়ে বাঁশ ও শামিয়ানা দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। মাঠের পূর্ব পাশে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে মূল মঞ্চ। মঞ্চের পাশে সাংবাদিকদের বসার স্থান করা হয়েছে। পেছনে ছাউনির আদলে স্থাপন করা হয়েছে বড় এলইডি টিভি। তবে দুদিনের বৃষ্টিতে মাঠের ঘাসে পানি জমে গেছে। সেখানে বালি দিয়ে কাদা-পানি অপসারণের কাজ চলছে।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, সম্মেলন বাস্তবায়নে গঠিত প্রস্তুত কমিটি ও বিভিন্ন উপ-কমিটি নিরলসভাবে কাজ করছে। বৈরি আবহাওয়াকে মাথায় রেখেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশা করছি সম্মেলনকে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পারবো সকলে মিলে।
আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামীম হক, সাবেক কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল হক প্রমুখ। সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝর্না হাসান, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শওকত আলী জাহিদ, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক দীপক কুমার মজুমদার, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠু ও ফরিদপুর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ।
ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সামনে রেখে গত রোববার ফরিদপুর বিশাল এক শোভাযাত্রা করেছেন সভাপতি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের নেতা বিপুল ঘোষ। প্রবীণ নেতা বিপুল ঘোষ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। শোভাযাত্রা শেষে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে বিপুল ঘোষ বলেন, ৫৩ বছর রাজনীতি করি। একাত্তর মাস জেল খাটছি। ১৭ বার জেলে গেছি আওয়ামী লীগের কারণে।
একবারও আমার ব্যক্তিগত কোনো কারণে আমি জেলে যাইনি। বিপুল ঘোষ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনে করবেন, তাকে জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি করবেন। তিনি দুটি নাম একটি খামে ভরে আঠা দিয়ে মুখ আটকে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে দেবেন, সাধারণ সম্পাদক ওই খাম খুলে নাম দুটি ঘোষণা দেবেন। এর আগে তিনিও জানতে পারবেন না কে কে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের হচ্ছেন সভাপতি ও সেক্রেটারি।
শামসুল হক ভোলা মাস্টার জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তিনি বর্তমানে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন তারও আগে তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন রয়েছে তার।
শোভাযাত্রা শেষে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্ত্বরে বক্তব্যে শামসুল হক ভোলা মাস্টার বলেন, বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচনে বিল বোর্ড, গেট, ব্যানার কিংবা কোন নেতানেত্রীর তদবির কাজ করে না। এ জেলাগুলি সম্পর্কে নেতারা যা জানে তার চেয়ে অনেক বেশি জানেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই জেলাগুলির নেতা নির্বাচন করেন।
শামসুল হক ভোলা মাস্টার বলেন, রাজনীতি করতে হলে সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠতে হয় এবং রাত ১২টা ১টা পর্যন্ত মানুষের কথা শুনতে হয়। যে সকাল ১০টায় ঘুম থেকে ওঠে এবং রাত ৮টার পর যার সাথে কথা বলার সুযোগ থাকে না তার পক্ষে মানুষের সেবা করা সম্ভব নয়। কে হালাল রুজি খায় না, কে টাউটারি বাটপারি করে, কে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ মাস্তানকে প্রশ্রয় দেয় এবং কে ঘুম থেকে সকাল ১০টার আগে ওঠে না সে হিসাব জননেত্রী
শেখ হাসিনার কাছে আছে।
পদ পাওয়ার ব্যাপারে সভাপতি পদপ্রার্থী শামীম হক বলেন, আমি দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের এক করে কাজ করেছি। দলকে সুসংহত করেছি। করোনাকালে সাধারণ মানুষকে দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করেছি। প্রত্যাশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করবেন। অপর সভাপতি পদপ্রার্থী ফারুক হোসেন বলেন, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করি। ইয়াছিন কলেজের ভিপি ছিলাম। জেলা যুবলীগের সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করলে আমি দলকে শক্তিশালী করব।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ফরিদপুর পৌরসভা মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, দলের দুর্দিনে আমি রাজপথে কাজ করেছি। সবসময় দলের নেতাকর্মীদের সাহায্য সহযোগিতা করেছি। এখন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি সৎ আছি বিধায় ভয় করি না। সব ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে চাই। দলের জন্য কাজ করতে চাই।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, নেত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বিশ্বাস করি স্বাধীনতার স্বপক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে যারা রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট, পরীক্ষিত— তারাই নেতা নির্বাচিত হবেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন শেষ করতে চাই। দলের প্রতি যারা দীর্ঘ সময় আনুগত্য দেখিয়েছে তাদের দিয়েই কমিটি হবে। রুবেল-বরকতের মতো ব্যক্তিরা কোনোভাবেই নেতৃত্বে আসবেন না।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ জেলার আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। পরে ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। স্মরণকালের সেরা সম্মেলন উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি।
এদিকে ফরিদপুরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তুহিন লস্কর জানান, আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনে ব্যাপক জনসমাগমের উপস্থিতিকে মাথায় রেখে শহরে যান চলাচল সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শহরের প্রবেশমুখ ভাঙ্গা রাস্তার মোড় থেকে বাস, ট্রাক, মোটর সাইকেল ও রিকশাসহ অন্যান্য যান প্রবেশ বন্ধ থাকবে। নেতাকর্মীরা পায়ে হেটে সম্মেলনে যোগ দেবেন। শহরের মধ্যে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করলেও স্টেশন রোড রেল ক্রসিং, টেপাখোলা সোনালী ব্যাংকের মোড়, লালের মোড় ও পাসপোর্ট অফিসের সামনের সড়কে কোন ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। এছাড়া কমলাপুর পিডব্লিউডি অফিসের সামনে, পানির ট্যাংকের সামনে, টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনের সড়ক, মাতৃমঙ্গল হাসপাতালের সামনের মোড় এবং অফিসার্স ক্লাবের সামনের সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। লোকজন পায়ে হেটে চলাচল করবে।
Leave a Reply