অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। শুক্রবার থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় দেড়’শ জন মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে ঢাকায় এক ব্যবসায়ী ও শনিবার সকালে রায়পুরের ১টি হাসপাতালে এক বৃদ্ধা গৃহিনীর মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই রায়পুর সরকারি হাসপাতাল থেকে চাঁদপুরের মতলব ডায়রিয়া হাসপাতাল চলে গেছেন। আক্রান্ত বেশিরভাগই কিশোর ও বয়স্ক।
ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ও রোগীর চিকিৎসার ওষুধ ও শয্যা সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। করোনার মধ্যে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।
ডায়রিয়ায় মৃত ব্যাক্তিরা হলেন, পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা ইভান বেডিংয়ের মালিক ব্যবসায়ী জাফর আহাম্মদ (৬৫)। তার স্ত্রী লাখি বেগম ও ছোট ছেলে তানভির আহাম্মদ ইভান বর্তমানে ঢাকা কল্যানপুর ইবনেসীনা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পৌরসভার ধানহাটা এলাকার সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৪)। তার মেয়ে কহিনুর বেগম ও নাতি জহিরুল ইসলামও রায়পুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে ১০টার দিকে হাসপাতাল ঘুরে এবং কর্তব্যরত ডাক্তার মঞ্জু ও শামিমা নাসরিন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডায়রিয়া আক্রান্ত হাসপাতালের ভর্তি রোগীরা হলেন, লামিয়া আক্তার (১৪), সালমা (১৩), নাফিজ (৩), মিনহাজ (১৯ মাস), সিমু আক্তার (২৩), ফাহিমা (৩০), দিসা কুড়ি (৯), সাহিনুর (৩৮),স্বপনা (৩০), নাহিদ (১৪), মিজানুর রহমান (৫৫), গোষাল (৫০), জয় গোষ (২০), গিয়াস উদ্দিন (৪৮), হিরন (৫৩) সোহেল (৩১), পরান হোসেন (৩৭), জামাল হোসেন (৩৪), তানভীর হোসেন (৩০) ও ফাতেহা আক্তর (২৫)সহ ২৭ জন। তাদের সকলের বাড়ী রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর, দক্ষিন কেরোয়া, কাঞ্চনপুর, ওয়াবদা কলোনী, উত্তর রায়পুর এলাকায়।
মৃত জাফরের ছেলে তানভির আহাম্মদ ইভানের মোবাইল ফোনে জানান, মঙ্গলবার সকালে তার পিতা পৌরসভার সাপ্লাইকৃত পানি পান করার পর ডায়রিয়া শুরু হয়। নিরুপায় হয়ে রায়পুর সরকারি, চাঁদপুরের মতলবের পর ঢাকা কলেরা হাসপাতালে এনে ভর্তি করাই। একপর্যায়ে কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়ায় অবশেষে মারা গেলেন তিনি। এখন একেই অবস্থায় মা ও ছোট ভাই হাসপাতালেচিকিৎসাধীন।
আমরা বাড়ীতে আসলে পৌরসভার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সুরে কথা বললেন, শোকাহত ব্যবসায়ী সোলাইমান মিয়া। তিনি বলেন, ডায়রিয়া আমার স্ত্রী মারা গেছেন। মেয়ে ও নাতিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরো কয়েকজন মারা গেছেন বলেন আমরা খবর পেয়েছি।।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনার পাশাপাশি হঠাৎ করে গত তিনদিন পৌরসভার টাঙ্কির বিষাক্ত পানি সেবনের কারনে রোগীর সংখ্যা ও চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আক্রান্ত সকল রোগীই জরুরী বিভাগের বলে ডাক্তার জানান।। শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত রায়পুরের ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০০ জনেরও মতো।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার শামিমা নাসরিন জানান, গর্ভবতি নারী ও শিশুর জন্য ১০ শষ্যা এবং-পুরুষ ও মহিলাদের শয্যা সংখ্যা ২০টি হলেও প্রতিনিয়ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৩০ থেকে ৪০ জন। বৃহস্পতিবার রাতে ২৫ ও শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৩২ ও শনিবার সকালে ৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৫ জন।-তাই বাধ্য হয়ে শয্যা সংকটের কারণে রোগীদেরকে চাঁদপুরের মতলব ডায়রিয়া হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই ওয়ার্ডের সেবিকা রুমা ও বিলকিস আক্তার জানান, রোগীর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত নার্স নিয়োজিত থাকলেও পরিস্কার করার মত বয় নাই। এতে ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতাল নেওয়া ও আইভি স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন। সঠিক সময়ে রোগীকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা সেবা দিলে ডায়রিয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। গত তিনদিন পৌরসভার লোকজনই বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা এবং অন্য হাসপাতালেও পাঠানো হয়।’ বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং তীব্র ঠান্ডায় মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। শুনেছি দুই/তিন জন ব্যাক্তি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, পৌরসভার পানি সবসময় পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকে। বিষাক্ত পানি থাকার বিষয়টি মিথ্যা। একটি চক্র বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।। ডায়রিয়া রোগীদের বিষয়ে ডাক্তার (টিএইচও) সাথে কথা বলেছি। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ডায়রিয়ায়মারা যাওয়ার সংবাদ আমার জানা নাই।
Leave a Reply