জনপ্রিয় ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসরের পর্দা উঠছে শুক্রবার। এদিন হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে দুপুর দেড়টায় দিনের প্রথম ম্যাচে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একই মাঠে খেলবে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা ও খুলনা টাইগার্স। যাইহোক দেশি-বিদেশি তারকা ক্রিকেটারে ঠাসা বিপিএল ঘিরে বাড়তি উত্তেজনা বিরাজ করে সব সময়ই। এবার ফরচুন বরিশালের নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কাঁধে। দীর্ঘ ৩ বছর পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ফিরেছে বরিশাল। আগের চারবার বিপিএলে অংশ নিয়ে দুবার ফাইনাল খেলেছিল তারা। তবে শিরোপা ছোঁয়া হয়নি। এবার প্রত্যাবর্তনে সাকিবের নেতৃত্বে বেশ শক্তিশালী দলই গড়েছে তারা। বরিশাল দলটির কোচ, সতীর্থরাও মনে করছেন এবার সাকিবের হাত ধরেই শিরোপা আক্ষেপ ঘুচবে।
আজ অনুশীলনের আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। সেখানে তিনি বলেন, আশা করছি ভালো একটা ম্যাচ দিয়ে বিপিএলটা শুরু হবে। বরিশাল খুবই ভারসাম্যপূর্ণ একটা দল।
এদিকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়কত্ব দেয়া হয়েছে অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে। তাদের স্কোয়াডে খুব বেশি তারকা ক্রিকেটার নেই। যারা আছেন, তাদের মধ্যে কে নেতৃত্ব দেবে চট্টগ্রামের, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত নিজেদের অধিনায়ক হিসেবে মিরাজকেই বেছে নিয়েছে দলটি। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়ক সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, এ বছর যে দল করা হয়েছে, খুবই ভালো দল হয়েছে। সমর্থকদের উদ্দেশে বলতে চাই আপনারা সবসময় আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আশা করি সামনের দিনগুলোতেও পাশে থাকবেন। আমাদের বেশ কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে, তাদের কাছে আমি সাহায্য চাই। কারণ আপনাদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। যেহেতু আমি প্রথম চট্টগ্রামের অধিনায়কত্ব করছি। আপনারা সবাই সাহায্য করলে আমার কাজটা সহজ হয়ে যাবে।
এছাড়া বিপিএলে মিনিস্টার ঢাকার নেতৃত্বে দেখা যাবে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। তাছাড়া এবার অন্য দলের তুলনায় ঢাকায় অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ছড়াছড়ি। মাহমুদউল্লাহ-তামিম-মাশরাফি-রুবেল-জহুরুল ইসলাম অমিসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন দলে। তাই মাহমুদউল্লাহর নজর অষ্টম আসরের শিরোপায়। তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর পর বিপিএল খেলছি। সবার জন্যই দারুণ সুযোগ। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সমৃদ্ধ দল পেয়ে আমি বেশ খুশি। আমাদের দলের সবচেয়ে বড় দিক হলো এখানে অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। তবে দিন শেষে দলগতভাবে ভালো খেলতে হবে। অষ্টম আসরের শিরোপা জিততে মুখিয়ে আছি আমরা। তবে আজ খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মাশরাফিকে ছাড়াই আমরা মাঠে নামব। শেরেবাংলার কন্ডিশনে তিনি অনেক বেশি কার্যকর। তবে শুধু প্রথম ম্যাচই নয়, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচও খেলা হচ্ছে না মাশরাফির।
তাছাড়া ক্রিকেটপ্রেমীরা জানেন, বিপিএলে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। তাছাড়া এই টুর্নামেন্টের শিরোপাভাগ্য ববাবরই মাশরাফির সঙ্গে থাকে। বিদেশি তারকায় ঠাসা গত বিপিএলের সাত আসরের ৪টি শিরোপা জিতেছেন মাশরাফি। তিনি চারবার অধিনায়ক ও একবার শুধু খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা লুফে নিয়েছেন। যা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বিপিএলে আর কোনো অধিনায়ক এই রেকর্ড গড়তে পারেননি।
ম্যাশের নেতৃত্বে ঢাকা, কুমিল্লা, রংপুর ও খুলনা বিপিএলের শিরোপা ঘরে তুলেছে। এর আগে বিপিএলের প্রথম ও দ্বিতীয় আসরে ২০১২ ও ২০১৩ বিপিএলে মাশরাফির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস। এরপর ২০১৫ সালে তৃতীয় আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে শিরোপা জেতেন তিনি। ২০১৭ সালে তার নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রংপুর রাইডার্স। ২০২০ সালে জেমকন খুলনার জার্সিতে খেলোয়ার হিসেবে শিরোপা জেতেন।
এদিকে প্রথম দিন শুক্রবার দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে মুশফিকের দল খুলনা টাইগার্স। তাদের প্রতিপক্ষ মাহমুদউল্লাহর দল মিনিস্টার ঢাকা। তবে অধিনায়ক মুশফিক চান ভালো শুরু করে বিপিএলের শীর্ষ দুইয়ে থেকে লিগ পর্ব শেষ করতে। খুলনা দলের লক্ষ্য নিয়ে মুশফিক বলেন, টি-টোয়েন্টি ফরমেটে খেলা সত্যিই অনেক চ্যালেঞ্জিং। আর বিপিএল টি-টোয়েন্টি আমাদের সবচেয়ে বড় লিগ। বিশ্বব্যাপী বিপিএলের একটা সুনাম আছে। এখানে গুণগত ক্রিকেট হয়, মানসম্পন্ন বিদেশি ক্রিকেটারও আছে। অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। যে কোনো দলই চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। আমরাও চাই ইনশাআল্লাহ। শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শীর্ষ দুইয়ে থেকে যেন লিগ পর্ব শেষ করতে পারি, সেই চেষ্টা করব। আশা করি একটা শিরোপা যেন জিততে পারি, আর সেটা যেন এ বছরই হয়।
এছাড়া এবারের বিপিএলকে স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য বড় সুযোগ দেখছেন মুশফিক। প্রতিটি দলে ৮ জন করে দেশি ক্রিকেটার খেলাতে হবে, আর বাকি তিন জন বিদেশি। স্থানীয়রা সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে, এমন প্রত্যাশা মুশফিকের। এই বিষয় তিনি বলেন, এটা সবার জন্য বড় সুযোগ, বিশেষ করে স্থানীয়দের জন্য। সামনে বিশ্বকাপসহ অনেক খেলা আছে। তাই স্থানীয়দের জন্য বিপিএল অনেক বড় মঞ্চ।
Leave a Reply