২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের উপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে পুলিশে যুক্ত হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আভিযানিক কার্যক্রমে রোবটের ব্যবহার ও ড্রোন প্রযুক্তি সংযোজন করা হচ্ছে। ডাটা ফিউশন টেকনোলজির মাধ্যমে নানা অপরাধ ও অপরাধীর তথ্য সন্নিবেশ করা হবে।
পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ এর চতুর্থ দিনে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দিনব্যাপী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্মেলনের আয়োজন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। সেখানে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আইজিপি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, সকল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারগণ। সম্মেলনে আইজিপি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়নে বিভিন্ন ইউনিট থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। সভায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেখানে পুলিশে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংযুক্ত করার বিষয়টি উঠে আসে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সভায় সুনির্দিষ্ট ২৪টি এজেন্ডা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছাড়াও উঠে আসা বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নতুন উইং বা ইউনিট গঠন, পদ সৃজন, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নতুন সার্ভিস চালু, চিকিৎসা সংক্রান্ত, পুলিশ ওয়েলফেয়ার ও ভাতা, পরিবহন সংক্রান্ত, সক্ষমতা বৃদ্ধি, শিক্ষা, আবাসন, পদায়ন, পদক ও সম্মাননা, পুলিশের পোশাক, পেনশন ও অবসর ও ছুটি সংক্রান্ত বিষয়।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি হামলা, ক্লুলেস মামলা, সাইবার নিরাপত্তা এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের শনাক্তকরণ ও আইনের নিকট সোপর্দ করার নিমিত্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সকল ধরনের তথ্য ভান্ডার অথবা ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার একান্ত প্রয়োজন। এজন্য দরকার ডাটা ফিউশন টেকনোলজি। এর মাধ্যমে সকল ডাটা বা তথ্য সন্নিবেশ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডাটা বলতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন তথ্য, ভোটার আইডি তথ্য, মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর তথ্য, মোবাইল আইএমইআই তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য, ব্যাংকিং রেকর্ড ডাটাবেজ, ক্রিমিনাল ডাটাবেজ, ভাড়াটিয়াদের তথ্য, টিআইএন তথ্য, বিআইএন তথ্য, সিসিটিভি ফুটেজ, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন তথ্য, ড্রাইভিং লাইসেন্স তথ্য, পাসপোর্টের তথ্য ইমিগ্রেশন তথ্য, বিদেশি নাগরিকের তথ্য, ডিএনএ তথ্য, জেলখানার কয়েদিদের তথ্য, ওয়ারেন্ট ইস্যু ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্যাদি, সিডিএমএস, পিআইএমএস, অটোমেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এএফআইএস), ভূমি রেজিস্টেশন সংক্রান্ত তথ্যকে বোঝানো হয়েছে। এসব তথ্য এক জায়গায় স্থানান্তর করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও অত্যাধুনিক কাস্টমাইজড সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের পরামর্শ উঠে আসে।
পুলিশ সদর দফতরের ইনোভেশন অ্যান্ড বেস্ট প্র্যাকটিস শাখা কর্তৃক প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক পুলিশিংয়ে বিগ ডাটার ব্যবহার সংক্রান্ত উদ্ভাবনী সুপারিশ সম্মেলনে আলোচিত হয়।
সুপারিশে উঠে আসে, আগামী বছরগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং হবে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই এর উৎকর্ষতার বাস্তবতায় অপরাধীদের শনাক্তকরণ এবং গ্রেফতারে পুলিশের প্রয়োজন সব ধরনের অনলাইন এবং অফলাইন ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার।
বিগডাটা পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্য সম্বলিত সব ধরনের ডাটাবেজ নিজস্ব ফরমেটে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এতে অপরাধ ও অপরাধী সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দ্রুত পুলিশ বের করতে সক্ষম হবে এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে।
ডিপওয়েব ও ডার্কওয়েবে সংঘটিত ক্লুলেস অপরাধের সাইবার ক্রিমিনাল শনাক্তকরণ এবং আসামি গ্রেফতারে বিগডাটা পুলিশিং অত্যন্ত কার্যকর এবং ফলপ্রসূ হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
সম্মেলন শেষে ডিআইজি (অপারেশন্স ও মিডিয়া অ্যান্ড প্লানিং) মো. হায়দার আলী খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, সন্ত্রাস মোকাবিলা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশ পুলিশকে ২০৪১ সালের উন্নত দেশের উপযোগী জনবান্ধব ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পুলিশের আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ডে বিট পুলিশিং কার্যালয় স্থাপন, সাইবার অপরাধ দমনে স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট প্রতিষ্ঠা, দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার সুবিধার্থে আলাদা মেডিকেল সার্ভিস গঠন, অনলাইন জিডি আরও সহজতর ও বিস্তৃত করা, জনগণের আইনি সহায়তা আরও সুগম করার লক্ষ্যে সার্কেল অফিসের কার্যক্রম বেগবান করা, পুলিশ সদস্যদের আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ২০৪১ সালের উপযোগী করে হাইওয়ে পুলিশকে গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর মূল লক্ষ্য জনগণের কাছে দ্রুত সেবা পৌঁছে দেওয়া। আমরা বাংলাদেশ পুলিশকে জনতার পুলিশ, জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে গড়ে তুলতে আইজিপি মহোদয়ের নেতৃত্বে কাজ করছি।
উল্লেখ্য, প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মেশিনকে বুদ্ধিমান করে তোলাই হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি এক ধরনের সফটওয়্যার টেকনোলজি, যা রোবট বা কম্পিউটারকে মানুষের মতো কাজ করায় এবং ভাবায়। যেমন, কারো কথা বুঝতে পারা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, দেখে চিনতে পারা। এককথায় মেশিন লার্নিং।
Leave a Reply