মিঠাপানির মাছগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘বাঘাইড়’ মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এর কেনাবেচা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। বগুড়ায় মাছের মেলা হিসেবে পরিচিত পোড়াদহের মেলায় বাঘাইড় মাছের সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ওই মেলা আয়োজনের আগে সরকারি ওই সংস্থার পক্ষ থেকে এ মাছ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ফলে এই প্রথম পোড়াদহের মেলায় বাঘাইড় মাছ দেখা যাবে না।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন্দ জানান, বাঘাইড় মাছ প্রদর্শন এবং বিক্রি বন্ধ করতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বগুড়ার জেলা প্রশাসন এবং পোড়াদহ মেলার আয়োজকদের কাছে গত ২৪ জানুয়ারি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, মাছটি বিপন্ন প্রজাতির হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাই পোড়াদহ মেলার পাশাপাশি সারাদেশেই এর বিক্রি ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ স্থানটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ পূজনীয়। প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার পোড়াদহ এলাকায় মেলার আয়োজন করা হয়। বগুড়া শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরের মেলাটি এক দিনের হলেও আশপাশের গ্রামগুলোতে জামাই উৎসব চলে তিন দিন। মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ। এ কারণে অনেকের কাছে পোড়াদহের মেলাটি মাছের মেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে বড় সাইজের বাঘাইড় মাছের আমদানি বেশি হয়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ মেলায় ৬৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ দেখা যায়। এটির প্রতি কেজি এক হাজার ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, বাঘাইড়ের সংখ্যা অস্বাভাবিক কমে আসায় ২০১২ সালে মাছটিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের শিডিউলভুক্ত করা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএল) স্বাদু পানির ২৫৩ প্রজাতির মাছের ওপর সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ওই সংস্থাটি ৬৪টি মাছকে বিপন্ন এবং বাঘাইড়সহ আরও ৯টি মাছকে মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন্দ জানান, বাঘাইড় মাছকে রক্ষা করতে হলে এখনই এর বিক্রি ও প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ওই মাছটির স্বাদ গ্রহণ তো দূরের কথা, দেখতেও পাবে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং মেলা আয়োজক কমিটির পাশাপাশি সাধারণ মানুষও মাছটি রক্ষায় এগিয়ে আসবে।
পোড়াদহ মেলার আয়োজক মহিষাবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, মেলায় বাঘাইড় মাছ আনতে নিষেধ করেছেন তারা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও তাদের সতর্ক করে দিয়েছি। গাবতলীর ইউএনও রওনক জাহান জানান, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের চিঠি পেয়ে প্রশাসন এরই মধ্যে এ বিষয়ে মাইকিং শুরু করে দিয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা মৎস্য অফিসার এবং মেলা আয়োজক কমিটিসহ সবাইকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply