সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে কোস্টগার্ডের সদস্যদের সব সময় দেশপ্রেম ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড’র ২৭তম জয়ন্তী ও কোস্টগার্ড দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
কোস্টগার্ড সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবসময় দেশপ্রেম, সততা ও ঈমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কোস্টগার্ডের সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন। দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন বলে আশাকরি।
শেখ হাসিনা বলেন, গভীর সমুদ্র নির্ভর অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল ও নিরাপদ রাখা, ব্লু-ইকোনমি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহ ও ব্যক্তিবর্গের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বাংলাদেশ কো গার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
কোস্টগার্ড সদস্যদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা এবং সামুদ্রিক জলসীমার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মৎস্যসম্পদ রক্ষা, দেশের সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযান, ডাকাত দমনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় কোস্টগার্ডের ভূমিকা উত্তরোত্তর বাড়ছে। জাটকা নিধন রোধে এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্টগার্ডের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধা এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, আমরা চাই, সমুদ্রে আমাদের যে সম্পদ আছে সেই সম্পদ আমাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগুক, সেটা আমাদের বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এ অঞ্চল, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখান থেকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে আমাদের এ অঞ্চলের সব নিরাপত্তা রক্ষা করা প্রয়োজন, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াও দরকার। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।
কোস্টগার্ডের উন্নয়নে সরকার প্রয়োজনীয় সব করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং আপনাদের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা অবশ্যই আমাদের সরকার করে যাবে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তুলতে আমরা কোস্টগার্ডকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি।
‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের নিজস্ব জনবল নিয়োগ কার্যক্রম এবং ফোর্স পুনর্গঠনের মাধ্যমে এ বাহিনীর সক্ষমতা অর্জনে আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ’
সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে কোস্টগার্ডের জনবল বৃদ্ধি করেছি। ব্লু-ইকোনমি ও গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তার জন্য এ বাহিনীর রূপকল্প-২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী জাহাজ, সরঞ্জামাদি ও জনবল আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
টানা তিনবারের সরকার প্রধান জানান, গত ১৩ বছরে কোস্টগার্ডের জন্য বিভিন্ন আকারের ৭৭টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ ও সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে কোস্টগার্ডের জন্য দু’টি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল, একটি ফ্লোটিং ক্রেন, দু’টি টাগ বোট এবং ১৬টি বোট তৈরি করা হয়েছে। কোস্টগার্ডের ভেসেল ও জাহাজসমুহ নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণর জন্য গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ডও নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব ইয়ার্ডে জাহাজ তৈরির সক্ষমতা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে খুব শিগগিরই এ বাহিনীতে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ, হোভ্যারক্র্যাফট ও দ্রুতগতি সম্পন্ন বোট যুক্ত হতে যাচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
গত বছর একইসঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ০৯টি জাহাজ এবং একটি ঘাঁটির কমিশনিং; কোস্টগার্ডের গভীর সমুদ্রে টহল উপযোগী আরও ৪টি ওপিভি এবং ৯টি প্রতিস্থাপক জাহাজের নির্মাণে অনুমোদন; গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনেরও উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান সরকার প্রধান।
অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ডের কার্যমক্রম ও এ বাহিনীর উন্নয়ন তুলে ধরে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
Leave a Reply