পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো। পশ্চিমা দেশগুলোর সতর্কতা অগ্রাহ্য করেই সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়ার টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক দীর্ঘ ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে দোনেতস্ক এবং লুহানস্কের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। অন্যদিকে কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, এই পদক্ষেপের ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে সংঘাত শুরু হতে পারে রাশিয়ার।
সোমবার সিকিউরিটি কাউন্সিলের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে পুতিন সিদ্ধান্ত নেন দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন ঘোষণা করা হবে। রুশ সংবাদ সংস্থার সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘আপনাদের সবার মতামত জানলাম। আজই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
পরে এক বিবৃতিতে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিন জানায়, পূর্ব ইউক্রেনের দুই রুশপন্থি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করতে পারেন পুতিন। অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে লিখিত নির্দেশ দেবেন তিনি। আবার বার্তাসংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্তের কথা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে জানিয়েছেন পুতিন। কিন্তু টেলিফোন কথোপকথনে দুই দেশের প্রধানই (পুতিনের সম্ভাব্য সিদ্ধান্তে) অসম্মতি প্রকাশ করেছেন।
আর এর মধ্যেই ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করেন পুতিন। দীর্ঘ ভাষণের পর পুতিন রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষকে এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করতে বলেন। পাশাপাশি, ইউক্রেনে রুশপন্থিদের বিরুদ্ধে সরকারের সামরিক অভিযান বন্ধ করার কথা বলে পুতিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায়, রক্তপাতের দায় সম্পূর্ণ ভাবে বর্তাবে ইউক্রেনের ক্ষমতায় থাকা সরকারের ওপরে। আধুনিক ইউক্রেনের সম্পূর্ণ রূপকার শুধু রাশিয়াই।’
এই স্বীকৃতি দীর্ঘ টানাপোড়েনের অবসান ঘটাবে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ, ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমায়াকে দখল করার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্য অংশের মত আবার ভিন্ন। এ নিয়ে তারা বড় সংঘাতের আশঙ্কা করছেন।
আবার এর ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে শান্তিচুক্তি শেষ হলো এবং ইউক্রেন অঞ্চলে সেনাও পাঠাতে পারবে রাশিয়া। দুই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ, যাদের কাছে রাশিয়ার পাসপোর্ট রয়েছে, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ব্যাখ্যা দিতে পারেন পুতিন।
কার্যত ইউক্রেনের ওপর পরোক্ষ ভাবে চাপ বাড়ছে। তাদের হাতে দু’টি বিকল্প রয়েছে। হয় দুই অঞ্চলের অধিকার ছেড়ে দিতে হবে, নয়তো রাশিয়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেন-সংকটের আবহে কয়েক দিন আগে স্বঘোষিত দোনেতস্ক পিপলস রিপাবলিকের জরুরি মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া একটি বিবৃতিতে বলা হয়, প্রায় সাত লাখ মানুষকে তারা রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ওই অঞ্চলে ইউক্রেন গোলাবর্ষণ করছে বলেও বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়।
Leave a Reply