আমাদের দেশে রান্নার কাজে এক সময় সরিষার তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হতো। এখন সেই স্থান দখল করে নিয়েছে সয়াবিন তেল। এর বাইরে সূর্যমুখী তেল বা অলিভ অয়েলের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু এগুলো উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- কোন তেল ব্যবহারে উপকার বেশি বা পুষ্টি বেশি পাওয়া যায়?
সরিষার তেল স্বাস্থ্যকর সয়াবিন তেল অপেক্ষা কারন সরিষার তেলে ক্যামিকেল প্রসেস করতে হয় না। সয়াবিন তেলে করতে হয়। ঘানি ভাঙ্গা বা কাচ্চি ঘানি সরিষার তেল সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। ক্যামিকেল প্রসেস করলেই সেটা ভেজাল তেল হয়ে যায় কিন্তু সয়াবিন তেলে করতেই হয় কারন অর্গানিক সয়াবিন তেলের বিশ্রী গন্ধের কারনে সেটা খাওয়া যায় না। গন্ধ দূর করতে ও রং হালকা সোনালী করতে ক্যামিকেল প্রসেস করতে হয়।
আজীবন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মানুষ সরিষার তেল দিয়ে রান্না করে এসেছে এবং বিশেষ কিছু রান্না করতে গাওয়া ঘি ব্যবহার করে এসেছে কিন্তু সয়াবিন তেলের ব্যাবসায়ীরা সরিষার তেলের ব্যবহার কমাতে সয়াবিন তেলের প্রচার শুরু করে। গাওয়া ঘি এর বদলে বাটার ওয়েলের প্রচার শুরু করে সরিষার তেলকে রান্নাঘর থেকে উধাও করে দেয়ার হীন চেষ্টা করে ৯০ শতাংশ সফল হয় কিন্তু সয়াবিন তেল কি আর কাচা খাওয়া যায়? সালাদে, ভর্তায়, ঝাল মুড়িতে সরিষার তেল অপরিহার্য। কিসের **** ইউরিক এসিড। শত বছর ধরে ভারতের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ ও পাকিস্তানের মানুষ সরিষার তেল খেয়ে আসছে। কিচ্ছু হলো না। এখন আসছে ইউরিক এসিড বাদ্য বাজাতে। এই প্রচারনা শুধু সয়াবিন তেলের ব্যবসা ধরে রাখতে করা হয়েছে। বরং সয়াবিন তেল যখন থেকে খাওয়া শুরু হয়েছে ‘সাদা তেল’ নাম দিয়ে তখন থেকেই অসুখ বিসুখ লেগেই রয়েছে মানুষের।
সরিষার তেল
উপকারিতা
* কালো দাগ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে।
* ঘর্মগ্রন্থি উদ্দীপিত করে শরীরের তাপমাত্রা কমায়।
* অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ছত্রাক প্রতিরোধক উপাদান থাকায় র্যাশ ও রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
* দীর্ঘ কালো চুলের জন্য সরিষার তেল খুব উপকারী।
* গ্লুকোসিনোলেট থাকায় ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
অপকারিতা
* প্রচুর পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিডের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
* লাং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
* হৃদ্স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।
* দীর্ঘদিন ধরে ত্বকে ব্যবহার করলে চামড়ার ক্ষতি করতে পারে। •অন্তঃস্বত্তা নারীদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
সয়াবিন তেল
উপকারিতা
* ভিটামিন ই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
* কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
* হাড়, চোখ এবং ত্বকের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে।
অপকারিতা
* অতিরিক্ত সেবনে ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
* অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস হিসেবে কাজ করে।
* তা ছাড়া বাজারে ভেজাল তেলের আধিক্য থাকায় সতর্কতা জরুরি।
খাদ্য উপাদান সরিষার তেল সয়াবিন তেল
ক্যালরি ১৯২৭ ১৬৬৩
চর্বি (প্রতি এক কাপে) ২১৮ গ্রাম ২১৮ গ্রাম
সূত্র: স্টাইল ক্রেজ ডটকম
পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সকল প্রকার তেলের বোতলের গায়েই ফ্যাটের মাত্রা উল্লেখ থাকে। তাই কেনার আগে অবশ্যই এটা দেখে নেবেন। আবার যে তাপমাত্রায় তেল পুড়ে ফ্যাটগুলো ভেঙে ফ্রি রেডিক্যাল সৃষ্টি করে সেসব শরীরের জন্য একদমই ভালো নয়।
সয়াবিন তেল : সয়াবিন জাতীয় তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৩৫ শতাংশের কম এবং আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ৫০ শতাংশের বেশি থাকে। এছাড়া এর স্মোক পয়েন্টও অনেক বেশি, প্রায় ২৫৬ ডিগ্রি। রান্না, ভাজা বা পোড়া ইত্যাদি খাবারের জন্য সয়াবিন ভালো। এ তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, স্নায়ুজনিত রোগের ক্ষেত্রে বিপরীত। তাদের জন্য সয়াবিন এড়িয়ে চলা উচিত।
সরিষার তেল : মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ থাকে এই তেলে। তাই শরীরের কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষায় বেশ উপকারী সরিষার তেল। নিয়মিত খাওয়ার ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস হয়। প্রাচীনকাল থেকে ওষুধি গুণের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে এই তেল। সম্প্রতি সময়ে সয়াবিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গুরুত্ব কমছে সরিষার তেলের।
সানফ্লাওয়ার তেল : এই তেলের স্মোক পয়েন্টও অনেক বেশি। দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় রান্নার জন্য উপযোগী এই তেল। ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ উপাদান রয়েছে, যা কিনা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্র নিয়ন্ত্রণে রাখে।
Leave a Reply